
বাঁকখালী নদীর ভাঙ্গনে যে কোন মূহুর্তে নদীতে তলিয়ে যেতে পারে বাড়িঘর
মাস্টার আমীর হোসাইনের বাড়ি রামু উপজেলার গর্জনিয়া ইউনিয়নের গর্জই খালের পাশেই। বাড়ির সামনে এলজিইডির নির্মিত সড়ক। খর¯্রােতা নদীর ¯্রােত ও অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের কারণে নদীর গতিপথ বদলে সড়কের অধিকাংশ স্থান বিলীন হয়ে গেছে নদীতে। এখন ভিটে-বাড়িগুলোও নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার পথে। ঠিক তেমনি থোয়ঙ্গার কাটা, মাঝিরকাটা, ক্যাজরবিলসহ বেশ কিছু নদীর পাশের পরিবারের মানুষ প্রতিনিয়ত আতঙ্কে দিন যাপন করছে। এমন মুহূর্তে নদীর গতিপথ বদলানোসহ বাড়িঘর বাঁচাতে কোনো ব্যবস্থা হাতে নেয়নি পানি উন্নয়ন বোর্ড কক্সবাজার।
সরেজমিনে গর্জনিয়া ইউনিয়নের ক্যাজরবিল এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, নদী ভাঙনের ফলে কবরস্থানসহ বেশ কয়েকটি বাড়ি বাঁকখালী নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। সড়কের পাশে একমাত্র শত বছরের পুরানো মসজিদটিও বিলীন হতে চলেছে। অবৈধ দখল ও বাঁকখালী নদী থেকে অবাধে বালু উত্তোলনের কারণে স্থানীয় বসতিরা ঝুঁকির মুখে রয়েছে। যে কোনো সময় রাক্ষুসি নদী বাঁকখালীতে বিলীন হয়ে যেতে পারে শত শত বাসিন্দার ভিটা-বাড়ি।
এ বিষয়ে ক্যাজরবিল এলাকার কলিম উল্লাহ জানান, বাঁকখালী নদীর ভাঙনের ফলে আমাদের বাড়িঘর যে কোনো মুহূর্তে নদীতে তলিয়ে যেতে পারে। মসজিদের অর্ধেক নদীতে তলিয়ে গেছে। আমরা আতঙ্কিত। তারপরও সরকারিভাবে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরে আসেনি এখনো। আমাদের ঘর রক্ষায় জেলা প্রশাসনের কাছে বিনীত অনুরোধ করছি।
এদিকে রামু উপজেলার কচ্ছপিয়া ইউনিয়নের খরস্্েরাতা বাঁকখালী খালের উৎপত্তি দোছড়ি খালের পাড় ভাঙনের ফলে ঝুঁকিতে রয়েছে প্রায় ২ শত পরিবার। এই বর্ষায় ভাঙন রোধে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হলে এসব পরিবারের বাড়িঘর নদীতে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। ইতোমধ্যে যাতায়াতের সড়ক নদীতে তলিয়ে গেছে বলে জানা গেছে।
রামু উপজেলার কচ্ছপিয়া ইউনিয়নের দোছড়ি এলাকার মাস্টারপাড়া ও পশ্চিমপাড়া এলাকায় প্রায় ২ শত পরিবারের বসবাস রয়েছে। গত কয়েক বছরের নদী ভাঙনের ফলে এই ইউনিয়নের দুটি ঐতিহ্যবাহী এলাকা নদীতে বিলীন হয়ে যেতে পারে। এই নদীর উৎপত্তি আরাকান রাজ্য থেকে হওয়ার কারণে খুবই খরস্রোতা বলে জানান স্থানীয়রা। প্রবল বর্ষণে নদী ভাঙনের ফলে মাস্টারপাড়া, পশ্চিমপাড়া এলাকা ভাঙনের ফলে সড়ক নদীতে চলে গেছে। এই ভাঙন দ্রুত সমাধান করা না হলে এলাকাবাসী বাস্তুচ্যুত হবে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয় মাস্টারপাড়ার জাহাঙ্গীর সেলিম জানান, এই মাস্টারপাড়া ও পশ্চিমপাড়া মিলে প্রায় ২ শতের অধিক পরিবারের বসবাস। যেভাবে নদী ভাঙন শুরু হয়েছে এখনই যদি ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হয় তাহলে কয়েকশত পরিবার এই নদী ভাঙনে ঘর হারাবে। হারাবে তাদের বাপ-দাদার ভিটে-বাড়ি। আমার বাড়ির উঠান নদীতে চলে গেছে। বর্তমানে বাড়ি থেকে কয়েক ফুট অদূরে নদী।
আমরা নিজেরাই কোনো ব্যবস্থা করার জন্য এলাকাবাসী এক হয়ে কাজ করে কোনোরকমে ভাঙন ঠেকিয়ে রেখেছি। এই ভাঙন দ্রুত সমাধান করা না হলে এলাকাবাসী বাস্তুচ্যুত হবে। তাই দ্রুত উপজেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহযোগিতা কামনা করেন এলাকার বাসিন্দারা।
এব্যাপারে রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাশেদুল ইসলাম জানান, এই নদী ভাঙনের ফলে বেশকিছু পরিবার ঝুঁকিতে রয়েছে তা উপজেলা প্রশাসন থেকে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে অবগত করা হয়েছে। চিঠির মাধ্যমেও জানানো হবে। পানি উন্নয়ন বোর্ড ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
এ বিষয়ে জানতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নুরুল ইসলামকে বেশ কয়েকবার ফোন করা হলেও ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
এদিকে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক সালাহউদ্দিন দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে জানান।