
দুর্যোগ যেন পিছু ছাড়ছে না। ৫৮ দিনের অবরোধের আট দিন পরেও কাঙ্ক্ষিত ইলিশের দেখা মিলছে না। হাজার হাজার জেলে, ট্রলার মালিক, আড়ত মালিকসহ এ পেশা সংশ্লিষ্টদের মনে স্বস্তি নেই। নেই প্রাণের সঞ্চার। আড়তগুলোতে কোলাহল নেই। পাইকারসহ সবাই যেন হাত গুটিয়ে বসে আছেন। সাড়ে চার থেকে পাঁচ লাখ টাকার বাজার সওদা নিয়ে ২০-২২ জনের জেলে নিয়ে গভীর সাগরে যাওয়া একটি ট্রলার এক-দুইদিন পরেই ফিরতে হয়েছে।
সাগর ভয়াল উত্তাল হয়ে আছে। প্রায় তিনদিন ঘাটে বসা। প্রকৃতি যেন সদয় হচ্ছে না। পেশা সংশ্লিষ্টরা হতাশায় রয়েছেন। তারপরও সাগরপানে ছোটা। গভীর সমুদ্রগামী জেলে, ট্রলার মালিকদের লোকসানের বোঝা অনেক বেশি। ইতোমধ্যে প্রত্যেক ট্রলার মালিক গড়ে চার-পাঁচ লাখ টাকার লোকসানে পড়েছেন। তবে ডেইলি ফিশিং করা বোটে ছোট ছোট ইলিশসহ বেশ কিছু অন্যান্য সামুদ্রিক মাছ পাচ্ছে।
তারা লাভের মুখ না দেখলেও লোকসানের ধাক্কায় কম পড়ছেন। দক্ষিণ জনপদের বৃহৎ ইলিশের মোকাম পটুয়াখালীর কলাপাড়ার মৎস্যবন্দর মহিপুর-আলীপুরের এমন বেহাল দশা। ভাগ্যের শিকে ছিঁড়ছে না কারও। নেই ভাগ্যের চাকায় গতি।
মহিপুরের গাজী ফিশ ও এমজি ফিশের মালিক মজনু গাজী জানান, অবরোধের পরে গভীর সমুদ্রে যাওয়া তিন/চারটি করে ট্রলার এক-দুই দিন সাগরে জাল ফেলার পরেই আবার ফিরতে হয়েছে। আবহাওয়া খারাপ হওয়া এমন হয়েছে। ২০০-২৫০ বড় সাইজের ইলিশ কেউ কেউ পেয়েছে। গড়ে দুই তিন লাখ টাকা করে বিক্রি করেছে। লাভ তো দূরের কথা, সবই লোকসান। গত তিনদিন ঘাটে ভেড়ানো ছিল।
আবারও এসব ট্রলার আজ, শনিবার দুপুরে সাগরে যাত্রা করেছে। বাজার-সওদা মিলে লাখ-লাখ টাকা খরচ হচ্ছে। কাঙ্ক্ষিত ইলিশ মিলছে না। আবার ছোট সাইজের নম্বরবিহীন বোটগুলো সাগরে রওয়ানা দিয়ে মোহনা থেকে কেউ কেউ ফিরে আসতে বাধ্য হচ্ছে। সাগর যেন শান্ত হচ্ছে না। এরই সঙ্গে মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে। কখনও মৃদু দমকা বাতাসও বইছে। সব মিলে বইছে প্রতিকূল পরিবেশ। তিনি হতাশা ব্যক্ত করেন।
মহিপুর মৎস্য আড়ত মালিক ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) রাজু আহমেদ রাজা জানান, নোয়াখালীর বাসিন্দা মহিপুর জননী আইস প্ল্যান্টের স্বত্বাধিকারীর এফবি জননী নামের নয়টি ফিশিং ট্রলার অন্তত ৪০ লাখ টাকার বাজার সওদা নিয়ে সাগরের মোহনায় এক/দেড়দিন অপেক্ষা করে আবার ঘাটে ফিরেছে খালি হাতে। এরই মধ্যে একেক বোটের ২০-২২ জেলে শুকনো খাবার খেয়ে সাবাড় করেছে। শুধু বরফ আর জ্বালানি তেল আছে। বাকি বাজার আবার কিনে আজ বিকেলে ফের সাগরমুখে যাত্রা করেছে। শুধুমাত্র ডেইলি ফিশিং করা অপেক্ষাকৃত কম দূরত্বে যাওয়া নাম নম্বরবিহীন কিছু ট্রলারে ছোট সাইজের কিছু ইলিশসহ অন্য সাদা মাছ পায়। তাও পরিমাণে খুবই কম।
মোট কথা, বৃহৎ ইলিশের মোকাম মহিপুর-আলীপুরের দেড় শতাধিক মৎস্য আড়তে গত তিনদিন ধরে নেই ইলিশের আমদানি। কিছু কিছু আড়তে ছোট সাইজের ছিটেফোটা ইলিশসহ সাদা মাছ আসছে। তাও পরিমাণে খুবই কম। অর্ধেক আড়তে অবরোধের পরে কোনো ইলিশের আমদানি পর্যন্ত হয়নি। সব যেন থমকে গেছে। তারপরও আজ, শনিবার সকাল থেকে কিছু কিছু ট্রলার আবার ঝুঁকি নিয়ে সাগরযাত্রা শুরু করেছে। যদি ভাগ্যাকাশে দেখা মেলে ইলিশের, এমন আশায়।
আফরোজা