
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশের মিষ্টিজগতের এক অনন্য সংযোজন নেত্রকোনার বিখ্যাত “বালিশ মিষ্টি”, যা স্বাদ, আকার ও ঐতিহ্যের এক অনুপম নিদর্শন হিসেবে বিবেচিত। এটি শুধুমাত্র একটি খাবার নয়, বরং নেত্রকোনার সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও গর্বের প্রতীক। মজাদার স্বাদ ও বিশাল আকৃতির জন্য এটি বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে সমাদৃত এবং বহু মানুষের প্রিয় মিষ্টিতে পরিণত হয়েছে।
বালিশ মিষ্টির যাত্রা শুরু হয়েছিল ১৯৪৭ সালে, যখন গয়ানাথ ঘোষ নামক একজন মিষ্টান্ন প্রস্তুতকারক নেত্রকোনায় এটি প্রথম তৈরি করেন। তার চিন্তা ও সৃজনশীলতার ফসল হিসেবে জন্ম নেয় এই ব্যতিক্রমধর্মী মিষ্টি, যার আকার ঘুমানোর কোল বালিশের মতো হওয়ায় একে নাম দেওয়া হয় “বালিশ মিষ্টি”।
বর্তমানে এই ঐতিহ্যবাহী মিষ্টির উৎপাদন পরিচালিত হচ্ছে গয়ানাথ ঘোষের উত্তরসূরীদের মাধ্যমে, যারা পুরনো রীতিনীতিকে সম্মান জানিয়ে এখনো একই পদ্ধতিতে মিষ্টি তৈরি করে চলেছেন।
বালিশ মিষ্টির আকৃতি সত্যিকার অর্থেই বিস্ময়কর—এটি দেখতে একেবারে একটি ছোট কোল বালিশের মতো। এর ওজন সাধারণত ২ থেকে আড়াই কেজি পর্যন্ত হয় এবং বিভিন্ন মাপের কারণে দাম ৫০ টাকা থেকে শুরু করে ১,০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।
এটি তৈরিতে সময় লাগে প্রায় দেড় ঘণ্টা। মিষ্টিটি ভাপ দিয়ে সিদ্ধ করা হয় এবং এতে ব্যবহৃত উপাদান যেমন ছানা, চিনি, সামান্য সুজি, দুধ এবং ঘি, সবকিছু মিলিয়ে তৈরি হয় এক অতুলনীয় স্বাদের সংমিশ্রণ। এর স্বাদ একদিকে মিষ্টি, আবার খানিকটা হালকা তিক্ততাও থাকে—যা একে অন্যান্য মিষ্টির তুলনায় আলাদা করে তোলে। মুখে দিলেই গলে যাওয়া এই মিষ্টি খেলে এক বিশেষ অভিজ্ঞতার জন্ম দেয়।
বালিশ মিষ্টি এখন শুধু নেত্রকোনায় সীমাবদ্ধ নেই—এটি ছড়িয়ে পড়েছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। বিশেষ করে বিয়ে, জন্মদিন, শুভ অনুষ্ঠানে এই মিষ্টি এখন এক আকর্ষণীয় উপহার বা পরিবেশনার অংশ হয়ে উঠেছে। ভিন্ন আকারে কেটে পরিবেশন করা যায় বলে এটি পার্টি ও বড় অনুষ্ঠানের জন্যও উপযুক্ত।
নেত্রকোনায় যারা বেড়াতে যান, তারা যেন এই মিষ্টি না খেলে সফর অসম্পূর্ণ মনে করেন। অনেক পর্যটক বা অতিথি বালিশ মিষ্টি সঙ্গে নিয়েই ফেরেন—একটি স্মৃতিস্বরূপ এবং এক স্বাদভরা উপহার হিসেবে।
বালিশ মিষ্টি শুধু একটি খাবার নয়, এটি নেত্রকোনার একটি সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। সময়ের পরিক্রমায় এটি যেন অঞ্চলের ইতিহাস, কৃষ্টি ও শিল্পের প্রতিনিধিত্ব করছে। এই মিষ্টির প্রতিটি কামড় যেন নেত্রকোনার মাটির ঘ্রাণ বহন করে, মানুষের ভালোবাসা প্রকাশ করে।
সত্যিই, “বালিশ মিষ্টি” এখন একটি নাম নয়, এক আবেগ, এক ঐতিহ্য—যা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে পৌঁছে যাচ্ছে।
ফারুক