
টানা তিন দিন পরে পটুয়াখালীর কলাপাড়ার উপকূলের মানুষ আজ শনিবার ভোরে সূর্যের দেখা পেয়েছে। তবে ঝলমলে রোদ নেই। আকাশে রয়েছে মেঘের আনাগোনা। টানা তিন দিন আর চার রাতের দুর্যোগ পেরিয়ে স্বাভাবিক কাজকর্মে ফিরছে সাধারণ মানুষ। স্বস্তি ফিরলেও এখনও জলাবদ্ধতার কবলে রয়েছে অন্তত ছয় হাজার মানুষ। শ্রমজীবী মানুষ নিত্যদিনের কর্মে ফিরতে শুরু করেছে। কৃষকরা মাঠে সেই সকালেই। ক্ষেতে যদিও তেমন ফসল নেই। তবে সবজি চাষিরা ক্ষেতের পরিচর্যায় নেমেছেন। কৃষক সুলতান গাজী জানান, বৃষ্টি যতটুকু হয়েছে তা খাল শুকনো থাকায় নেমে গেছে। জলাবদ্ধতা হয়নি।
অস্বাভাবিক জোয়ারের সৃষ্ট ৫-৬ দফার জলোচ্ছ্বাসে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে বেড়িবাঁধের বাইরে থাকা মানুষ। অন্তত ছয় হাজার পরিবার কমবেশি ক্ষতির শিকার হয়েছেন। সরকারি হিসাবে ছয় হাজার ৪৮০ জন মানুষ পানিবন্দী হয়ে আছেন। রিংবেড়িবাঁধ ভেঙে পশ্চিম লোন্দা গ্রামের আড়াইশ’ পরিবারের জোয়ারের পানি নামলেও ঘরের উঠোন থেকে শুরু করে চলাচলের রাস্তা নষ্ট হয়ে গেছে। বহু পরিবারের রান্নার চুলা পর্যন্ত অচল হয়ে গেছে। এসব মানুষের কাছে অস্বাভাবিক জোয়ার আতঙ্ক বিরাজ করছে।
সম্পূর্ণভাবে কোনো ঘর বিধ্বস্ত না হলেও আংশিক ক্ষতির শিকার হয়েছে কিছু ঘর। সরকারি হিসাবে আংশিক ক্ষতি হয়েছে ৪৬০টি পরিবার। ভেঙেছে বেশ কিছু গাছপালা। বিপর্যস্ত হয়েছে বেশ কিছু বিদ্যুৎ লাইন। এখনও হাজার হাজার গ্রাহক বিদ্যুৎহীন অবস্থায় রয়েছেন। তবে চার মাস আগে জরুরি প্রটেকশন দেওয়া চম্পাপুর ইউনিয়নের করমজাতলা বেড়িবাঁধের স্লোপসহ দুই-তৃতীয়াংশ মূল বাঁধ ফের রাবনাবাদ নদী গিলে খেয়েছে।
বাকিটুকুও আছে চরম ঝুঁকিতে। স্থানীয় বাসিন্দা রাসেল ফকির জানান, বাঁধটি ভেসে গেলে তাঁদের মরণদশা হবে। একই দশায় লোন্দা হাফেজ প্যাদা বাজার সংলগ্ন বেড়িবাঁধের। ধসে গেছে জিও ব্যাগ। মৎস্য চাষিদের ক্ষতি হয়েছে অনেক। উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা জানান, পুকুর-ঘের মিলে অন্তত ১২ শ’ চাষির প্রায় চার কোটি ৬৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
সরকারিভাবে ক্ষয়ক্ষতির তথ্য তৈরির চূড়ান্ত কাজ চলছে। তবে টানা তিন দিনের দুর্যোগ পেরিয়ে উপকূলের দুর্যোগের গ্রাসে থাকা জনপদ কলাপাড়ার মানুষ ফের স্বাভাবিক কর্মে ফিরতে শুরু করেছে। এ যেন বর্ষা মৌসুমে তাঁদের নিত্যদিনের লড়াই। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রবিউল ইসলাম জানান, আজ থেকে পানিবন্দী মানুষকে শুকনা খাবারের পাশাপাশি খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেওয়ার কার্যক্রম শুরু হচ্ছে।
আফরোজা