ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৯ মে ২০২৫, ১৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ফেসবুক লাইভে বিষপান, “আমি আর পারছি না”—ভেঙে পড়লো এক স্বপ্নময় তরুণের জী

আব্দুল মোমিন, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, বগুড়া

প্রকাশিত: ২১:০২, ২৭ মে ২০২৫

ফেসবুক লাইভে বিষপান, “আমি আর পারছি না”—ভেঙে পড়লো এক স্বপ্নময় তরুণের জী

“আমি আর পারছি না” এই আর্তনাদ দিয়েই শেষ হয় রাসেল আহম্মেদের জীবন। ফেসবুক লাইভে এসে বিষপান করে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন তিনি। এক সময়ের স্বপ্নবাজ ফ্রিল্যান্সার, প্রযুক্তিনির্ভর জীবনের সঙ্গে যিনি যুদ্ধ করে টিকে থাকার চেষ্টা করেছিলেন, তিনি হার মানলেন পারিবারিক টানাপোড়েনের কাছে।

মঙ্গলবার সকালে বগুড়ার ধুনট পৌরসভার দক্ষিণ অফিসারপাড়ার একটি ভাড়া বাসায় এই হৃদয়বিদারক ঘটনাটি ঘটে। নিজ ফেসবুক প্রোফাইল থেকে লাইভে এসে রাসেল মুখে তুলে নেন দু’টি ‘অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইট’ ট্যাবলেট। কয়েক মিনিটের মধ্যে অচেতন হয়ে পড়েন তিনি।
লাইভ দেখে প্রতিবেশীরা ছুটে যান, পরিবারের সদস্যরাও দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছান। দরজা ভেঙে তাকে উদ্ধার করে ভর্তি করা হয় শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। দুপুর ১২টার দিকে চিকিৎসকরা তাঁর মৃত্যুর ঘোষণা দেন।

রাসেলের বাবা সোনা মিয়া কাঁদতে কাঁদতে বলেন, “একটা কথা যদি বলতো আগে, কিছু একটা করতাম।আমি জানতেই পারলাম না, সে এমন সিদ্ধান্ত নেবে!”

রাসেল প্রেম করে বিয়ে করেছিলেন নাদিয়া আক্তার প্রেমাকে। এক সময় ভালোবাসার সংসার হলেও, সময়ের ব্যবধানে সম্পর্কটিতে ফাটল ধরে। পারিবারিক কলহ বাড়তে বাড়তে তা সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে যায়।

ধুনট থানার উপপরিদর্শক (এসআই) অমিত হাসান জানান, “রাসেল পারিবারিক কলহে ভুগছিলেন। প্রাথমিকভাবে আত্মহত্যার পেছনে এ কারণই পাওয়া যাচ্ছে। বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে।”

রাসেলের বন্ধুরা জানাচ্ছেন, তিনি ছিলেন অত্যন্ত অনুভূতিপ্রবণ ও পরিশ্রমী। জীবনের নানা চাপ তাঁর মনের ভেতরেই জমে থাকতো, যা কারও সঙ্গে খুব একটা ভাগ করতেন না।

আজ তাঁর ঘরে নীরবতা। নেই আর সেই মধ্যরাতের টাইপিং সাউন্ড, নেই হাসি, শুধু কাঁদছেন মা-বাবা। তার প্রিয় ডেস্কটপ কম্পিউটারটি এখনো টেবিলের ওপর নিঃশব্দ দাঁড়িয়ে আছে স্বপ্নগুলো নিয়ে।

মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেন, হতাশা বা আত্মঘাতী চিন্তা দেখা দিলে তা অবহেলা করা উচিত নয়। সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে হবে, পাশে থাকতে হবে।

রাসেলের মৃত্যু শুধু একটি পরিবারকে নয়, পুরো এলাকাকেই নাড়া দিয়েছে। শেষ মুহূর্তে হয়তো কেউ পাশে থাকলে, কোনো একটি কথা যদি তাকে থামাতে পারতো এই ভাবনায় ভারাক্রান্ত পরিচিতজনেরা।

মিমিয়া

×