
ছবি : জনকণ্ঠ
সাগরে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির আশঙ্কায় উপকূলজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে উদ্বেগ। আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস বলছে, বঙ্গোপসাগরে একটি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হতে পারে, যা আগামী ৩০ মে’র মধ্যে বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানতে পারে। এমন শঙ্কার মধ্যে ১৬ বছর আগে আঘাত হানা প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় আইলার ক্ষত এখনো শুকায়নি। বিশেষ করে সাতক্ষীরা জেলার উপকূলীয় অঞ্চলের বেড়িবাঁধ এখনো ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তথ্যমতে, সাতক্ষীরা জেলায় দুই বিভাগের আওতায় ৬৭৮ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে। এর মধ্যে ২১টি পয়েন্টে ৩৩ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ বর্তমানে ঝুঁকিপূর্ণ। পাউবো বিভাগ-১-এর অধীনে ছয়টি পয়েন্টে তিন কিলোমিটার ও বিভাগ-২-এর অধীনে ১৫টি পয়েন্টে ৩০ কিলোমিটার বাঁধ নাজুক অবস্থায় আছে।
ঘূর্ণিঝড় উপকূলে আঘাত হানলেও কিংবা উপকূলের বাইরে থেকে গেলেও নদ-নদীতে পানির চাপ বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এতে করে দুর্বল বেড়িবাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলার নদীভাঙন এলাকায় বসবাসকারী হাজারো মানুষের।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালার সৃষ্টি হয়েছে। এর ফলে উপকূলজুড়ে বৃষ্টি হচ্ছে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরগুলোকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
আশাশুনির বিছট গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল হাকিম মোড়ল জানান, ৭/২ পোল্ডারের বিছট সরকারি প্রাইমারি স্কুল থেকে খেয়াঘাট পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার বেড়িবাঁধ অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। গত ৩১ মার্চ ঈদের দিন এই এলাকায় বেড়িবাঁধ ভেঙে সাতটি গ্রাম প্লাবিত হয়। গাজীবাড়ি, সরদারবাড়ি ও মোড়লবাড়ির সামনে থাকা বাঁধের অংশগুলোও নাজুক। কিছু জায়গায় মেরামতের কাজ শুরু হলেও তা দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে।
তিনি বলেন, খোলপেটুয়া নদীর খরস্রোতা প্রবাহে একটু বাতাস হলেই এই বাঁধ ভেঙে পড়বে। বিষয়টি পাউবো কর্মকর্তাদের জানানো হলেও তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেন তিনি।
২০০৯ সালের ২৫ মে উপকূলে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় ‘আইলা’। এতে সাতক্ষীরার শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলার বহু গ্রাম লবণ পানিতে ডুবে যায়। ভেসে যায় ঘরবাড়ি, ফসল, মাছের ঘের। প্রাণ হারায় অন্তত ৭৩ জন। এখনো সেই ক্ষত থেকে পুরোপুরি বেরিয়ে আসতে পারেনি উপকূলবাসী।
উপকূলের আরেক বাসিন্দা সুলতান শাহাজান জানান, এখন আর শুধু দুর্যোগে নয়, জোয়ারের পানির চাপেও দুর্বল বেড়িবাঁধ ভেঙে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে।
শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোছা. রনী খাতুন জানান, ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলো চিহ্নিত করে পাউবোকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। উপজেলা প্রশাসন সার্বিক তদারকি করছে।
পাউবো সাতক্ষীরা বিভাগ-১-এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সালাউদ্দীন বলেন, যে কোনো আপৎকালীন পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে। ৭৫টি জিও টিউব ও ৭৫ হাজার জিও ব্যাগসহ জরুরি উপকরণ মজুত আছে। ঝুঁকিপূর্ণ পয়েন্টগুলো বিশেষ নজরদারিতে রাখা হয়েছে।
পাউবো সাতক্ষীরা বিভাগ-২-এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আব্দুর রহমান তাজকিয়া বলেন, আমাদের কাছে ২০ হাজার জিও ব্যাগ ও ১৫টি জিও রোল মজুত রয়েছে। দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতিতে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপকূলবাসীর আশঙ্কা, দুর্বল বেড়িবাঁধ ও ধীরগতির প্রকল্প বাস্তবায়নের কারণে একটি দুর্যোগ কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই আরেকটি দুর্যোগ নতুন করে বিপর্যয় ডেকে আনছে। তাই তারা দ্রুত বেড়িবাঁধ সংস্কার ও টেকসই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলার জোর দাবি জানিয়েছেন।
সা/ই