
"কেউ নাই, আমরা খুব অসহায়। ঝড়–বৃষ্টিতে আল্লাহর নাম নেই, আর ঘরের চালা উড়ে গেলে চোখে জল আসে। অভাবেই দিন কাটে, খেয়ে না খেয়ে বাঁচি। জমি কিনব কিভাবে, আর বাড়ি বানাব কিভাবে?" এভাবেই নিজের দুঃখগাথা বলছিলেন শেফালী বেগম, যিনি স্বামী ছোড়াব মিয়াকে নিয়ে ক্যানেলের পাশে এক ঝুপড়িতে বসবাস করছেন।
নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার ছিট রাজীব এলাকার তিস্তা সেচ ক্যানেলের পাশে গড়ে উঠেছে শেফালী–ছোড়াব দম্পতির বসতি। কিন্তু বসতি বলতেও যেন লজ্জা পায় বাঁশ, পলিথিন আর কিছু পুরনো টিনে ঠাঁই করে নেওয়া একখণ্ড জীবন! নিজস্ব জমি নেই, তাই আশ্রয়ণ প্রকল্পের জন্য বহুবার আবেদন করেও ফল মেলেনি।
সরেজমিনে দেখা যায়, অসুস্থ ছোড়াব মিয়া এখন আর কাজ করতে পারেন না। বিভিন্ন শারীরিক জটিলতায় অক্ষম হয়ে পড়েছেন। সংসারের হাল ধরেছেন শেফালী বেগম, যিনি অন্যের বাড়িতে কাজ করে কোনোমতে দুবেলা খেয়ে বেঁচে আছেন। কিছুদিন আগে ঝড়ের তাণ্ডবে তাদের ঘরের চালা উড়ে যায়। অর্থের অভাবে তা মেরামত করা সম্ভব হয়নি। আশপাশের মানুষের দয়ায় কিছু টিন পেয়ে কোনোরকমে ঘরটা দাঁড় করিয়ে রেখেছেন।
"রাতে আলো জ্বালার মতো সামর্থ্য নেই, একটা ছোট্ট টর্চলাইট আছে তা দিয়েই কাজ চালাই। অনেক রাত শুধু পানি খেয়েই কাটিয়েছি। সরকার যদি একটা পাকা ঘর দিত, তাহলে বাকি জীবনটা শান্তিতে কাটাতে পারতাম," বলছিলেন শেফালী।
এই দম্পতি জানান, তারা দুইবার আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরের জন্য আবেদন করেছিলেন, কিন্তু কোনো বরাদ্দ পাননি। "আমরা অনেক কষ্ট করছি, আমাদের কেউ দেখে না," চোখের জল ফেলতে ফেলতেই বলছিলেন তারা।
এ বিষয়ে সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী গ্রেনেট বাবু বলেন, "আমি আগের ইউএনও মহোদয়কে বিষয়টি জানিয়েছিলাম। তখন সুযোগ না থাকায় ঘর দেওয়া সম্ভব হয়নি। আমি আবারও ইউএনও স্যারের সঙ্গে কথা বলব। তারা সত্যিই খুব কষ্টে আছেন।"
কিশোরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মৌসুমি হক বলেন, "বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখব এবং যথাসম্ভব সহায়তা করা হবে।"
সরকারের আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় যেখানে হাজারো পরিবার মাথা গোঁজার ঠাঁই পেয়েছে, সেখানে শেফালী–ছোড়াব দম্পতির মতো মানুষদের জন্য একটু বাড়তি নজর দরকার, দরকার সহানুভূতির হাত। হয়তো একটি ঘরই তাদের জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে।
মিমিয়া