ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৯ মে ২০২৫, ১৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতাল

মেশিন আছে, চিকিৎসক নেই 

নিজস্ব সংবাদদাতা, ঠাকুরগাঁও

প্রকাশিত: ২১:৩৭, ২৬ মে ২০২৫; আপডেট: ২১:৩৮, ২৬ মে ২০২৫

মেশিন আছে, চিকিৎসক নেই 

হাসপাতালের রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিং বিভাগে চিকিৎসক না থাকায় বন্ধ আলট্রাসনোগ্রাম

ঠাকুরগাঁও ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালের রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিং বিভাগে এখন তালা ঝুলছে কার্যত। আধুনিক মেশিন আছে, চিকিৎসাসেবা দেওয়ার ঘরও আছে, নেই শুধু আলট্রাসনোগ্রাম করার চিকিৎসক। ফলে গত দেড় মাস ধরে বন্ধ রয়েছে হাসপাতালের গুরুত্বপূর্ণ এই সেবা। বাধ্য হয়ে রোগীদের যেতে হচ্ছে বহুগুণ বেশি খরচে বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে।
জেলার বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার দিনমজুর শাহাজাহান হাবিব (৫১) পেটের ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে জানতে পারেন তার পিত্তথলিতে পাথর ধরা পড়েছে। চিকিৎসকের পরামর্শে তাকে আলট্রাসনোগ্রাম করাতে বলা হয়। কিন্তু হাসপাতালে গিয়ে জানতে পারেন, মেশিন আছে, চিকিৎসক নেই। শাহাজাহান হাবিব বলেন, ‘হাসপাতালে এসে শুনলাম আলট্রাসনোগ্রাম হচ্ছে না। পরে বাধ্য হয়ে বাইরে করালাম, ১২শ’ টাকা লাগল। অথচ সরকারি ফিতে হতো ২২০ টাকা। গরিবের জন্য হাসপাতাল যদি এভাবে বন্ধ হয়ে থাকে, তা হলে কোথায় যাব আমরা ?’
এই হাসপাতালের রেডিওলজি বিভাগে আলট্রাসনোগ্রাম সেবার জন্য প্রতিদিন গড়ে ৪০-৫০ জন রোগী আসেন। কিন্তু চিকিৎসক না থাকায় সবাইকেই ফিরতে হচ্ছে। হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী, পুরো পেটের আলট্রাসনোগ্রামের সরকারি ফি ২২০ টাকা এবং আংশিক পেটের জন্য ১১০ টাকা। অথচ বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে এই সেবার জন্য দিতে হচ্ছে এক হাজার থেকে দেড় হাজার টাকা। হাসপাতালের রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিং বিভাগে দেখা যায়, মেশিন চালু অবস্থায় আছে। সাজানো রয়েছে চিকিৎসকের চেয়ার, ডেস্ক, কম্পিউটার, ফটোকপিয়ার। কিন্তু কক্ষের দরজায় একটি কাগজ টাঙানোÑ ‘চিকিৎসক না থাকায় আলট্রাসনোগ্রাম অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ।’
হরিপুর উপজেলা থেকে আসা রহিমা খাতুন (২৭) বলেন, ‘আমার মেয়েটা তিন দিন ধরে পেটে ব্যথা নিয়ে কাতরাচ্ছে। হাসপাতালে এসে দেখি সেবা বন্ধ। পাঁচশ’ টাকা নিয়ে এসেছিলাম, এখন বাইরে গেলে আরও এক হাজার লাগবে। এত টাকা কোথায় পাব?’একই উপজেলার ডাঙ্গীপাড়া এলাকার কৃষক করিম মিয়া (৫৭) বলেন, ‘আমি চোখে ভালো দেখি না। মেয়েকে নিয়ে আসছি, আলট্রাসনোগ্রামের জন্য। এসে দেখি সবই আছে, শুধু চিকিৎসক নেই। তা হলে সরকার এত বড় হাসপাতাল বানিয়ে কী লাভ করল?’

জানতে চাইলে হাসপাতালের রেডিওলজি বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত ইনচার্জ আব্দুর রব চৌধুরী বলেন, ‘গত দেড় মাস ধরে এখানে সনোলজিস্ট নেই। এর আগে একজন মেডিক্যাল অফিসার প্রেষণে এসে সপ্তাহে তিন দিন আলট্রাসনোগ্রাম করতেন। তার প্রেষণ প্রত্যাহার হওয়ায় সেবাটি পুরোপুরি বন্ধ।’ এ বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন আবুল বাশার সায়েদুজ্জামান বলেন, ‘আগে যিনি এখানে সেবা দিতেন, বালিয়াডাঙ্গীর সেই মেডিক্যাল অফিসার ডা. শাহ আজমীর রাসেলকে আবারও প্রেষণে আনার চেষ্টা চলছে। তবে সারাদেশে সনোলজিস্টের সংকট রয়েছে, তাই স্থায়ীভাবে কাউকে এখানে পাওয়া যাচ্ছে না।’

×