
তিন সীমান্ত দিয়ে আরও ৪২ জনকে ঠেলে দিল ভারত
ফেনীর ছাগলনাইয়া ও ফুলগাজী সীমান্ত দিয়ে নারী ও শিশুসহ ২৪, পঞ্চগড় সীমান্তে ১৩ এবং খাগড়াছড়ি সীমান্ত দিয়ে ৫ জনকে ঠেলে দিয়েছে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ। তাদের মধ্যে শিশুসহ আটক হয়েছে ২১ জন।
বৃহস্পতিবার ভোরে এ ঘটনা ঘটে। পরে স্থানীয়রা তাদের আটক করে বিজিবির হাতে সোপর্দ করে। আটকদের মধ্যে ৬ জন পুরুষ, ৫ জন নারী ও ১৩ জন শিশু রয়েছে। তারা কুড়িগ্রাম জেলার বাসিন্দা।
বিজিবি জানায়, ভোরে ছাগলনাইয়া উপজেলার যশপুর ও ফুলগাজীর খেজুরিয়া সীমান্তে ৬টি পরিবারের ২৪ জনকে পুশ ইন করে বিএসএফ। পরে তাদের আটক করে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা কুড়িগ্রাম জেলার বাসিন্দা বলে জানান।
বিজিবির ফেনী ব্যাটালিয়ন (৪ বিজিবি) অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন বলেন, পুশ ইন করা ১৩ শিশুসহ মোট ২৪ জনকে আটক করা হয়েছে। তাদের ছাগলনাইয়া ও ফুলগাজী থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পঞ্চগড় সদর উপজেলার জয়ধরভাঙ্গা বড়বাড়ি সীমান্ত দিয়ে ১৩ শিশুসহ ২১ জনকে পুশ ইন করেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ।
নীলফামারী ৫৬ বিজিবি ব্যাটালিয়নের দায়িত্বপূর্ণ এলাকা উপজেলার হাড়িভাসা ইউনিয়নের বড়বাড়ি সীমান্তের মেইন পিলার ৭৫৭-এর ১০ নম্বর সাব পিলার এলাকা দিয়ে তাদের বাংলাদেশে পুশ ইন করা হয়। এর মধ্যে ৬ জন নারী, ২ জন পুরুষ ও ১৩টি শিশু রয়েছে। পরে জয়ধরভাঙ্গা বিওপির টহল দল তাদের আটক করে। তারা সবাই বাংলাদেশি নাগরিক।
পুশ ইন হওয়া ব্যক্তিদের মাধ্যমে জানা যায়, তারা বাংলাদেশের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করে এবং ভারতে অবস্থান করে কাজ করে আসছিল। ২১ মে ভারতীয় পুলিশ তাদের গুজরাট এলাকা হতে আটক করে বিমানযোগে কলকাতা নিয়ে আসে। পরে কলকাতা থেকে বাসযোগে ২২ মে রাত ২টায় নিয়ে এসে ভারতীয় সীমান্ত বাহিনীর বিএসএফের ৯৩ ব্যাটালিয়নের টিয়াপাড়া বিএসএফ ক্যাম্পের নিকট হস্তান্তর করে। পরবর্তী সময় টিয়াপাড়া বিএসএফ ক্যাম্প তাদের টিয়াপাড়া বড়বাড়ি সীমান্ত গেইট দিয়ে বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়া হয়। আটককৃতদের বিরুদ্ধে বিজিবির পক্ষ থেকে পঞ্চগড় সদর থানায় পাসপোর্ট আইনে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলে জানা গেছে।
নীলফামারী ৫৬ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফট্যানেন্ট কর্নেল শেখ মোহাম্মদ বদরুদ্দোজা বলেন, জয়ধরভাঙ্গা ক্যাম্পের বড়বাড়ি সীমান্ত দিয়ে নারী-শিশুসহ ২১ জনকে অবৈধ উপায়ে বাংলাদেশে পাঠিয়েছে বিএসএফ। পরে আমাদের টহল দল সীমান্তে তাদের আনাগোনা দেখে আটক করে। ইতোমধ্যে আমাদের ব্যাটালিয়ন কোম্পানি ও ক্যাম্প কমান্ডার পর্যায়ে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। আমরা বিএসএফের কাছে জানতে চেয়েছি তারা কেন অবৈধ উপায়ে বাংলাদেশে তাদের ফেরত পাঠালো। বিজিবিকে জানিয়ে আইনি প্রক্রিয়ায় তাদের ফেরত পাঠানো উচিত ছিল। এ বিষয়ে আমরা বিজিবি পক্ষ থেকে অনুপ্রবেশের দায়ে মামলা দায়ের করব। তবে যারা শিশু রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে মামলা নয়। সীমান্তে বিজিবি সর্বদা সচেতন। যে কোনো পরিস্থিতির মোকাবিলায় বিজিবির টহল দল ২৪ ঘণ্টা সীমান্তে কড়া টহলদারি করছে।
পার্বত্য খাগড়াছড়ির রামগড় সীমান্ত দিয়ে নারী ও শিশুসহ পাঁচজনকে পুশ ইন করেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ। তারা সকলেই ভারতের গুজরাটের বাসিন্দা ও মুসলিম সম্প্রদায়ের বলে জানা গেছে। রামগড়ের উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) ইসমত জাহান তুহিন বিষয়টি নিশ্চিত করেন। বৃহস্পতিবার ভোর ৬টার দিকে খাগড়াছড়ির রামগড় পৌরসভার ফেনীরকুল চর এলাকার সীমান্ত দিয়ে তাদের পুশ ইন করা হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ফেনী নদী সীমান্ত দিয়ে পার হয়ে রামগড়-ফেনী সড়কের সোনাইপুল বাজার যাত্রীছাউনিতে অবস্থান করলে স্থানীয়রা তাদের আটকে রেখে মহামুনি বিজিবি ক্যাম্পে খবর দেয়। পরে বিজিবি তাদের হেফাজতে নেয়। আটককৃতরা হলেন মো. উম্মেদ আলী (৪২) তার স্ত্রী সেলিনা বেগম (৩৫), তিন মেয়ে রিমা খাতুন (১৫), রুম্পা খাতুন (১২) ও সুমামিয়া খাতুন (৮)।
আটককৃত মো. উম্মেদ আলী জানান, ভারতের হরিয়ানা থেকে তাদের ধরে হাত-পা বেঁধে ত্রিপুরা সীমান্তের ফেনী নদীতে ফেলে দেয় বিএসএফ। মারধর করে জোরপূর্বক নদীতে ফেলে দেওয়ার পর সারারাত তারা নদীর পানিতে ভেসে বৃহস্পতিবার ভোর ৫টার দিকে নদীর বাংলাদেশ কিনারায় ভিড়ে।
রামগড়ের উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইসমত জাহান তুহিন বলেন, রামগড় সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে অনুপ্রবেশকারী পাঁচ ভারতীয় নাগরিককে বিজিবি আটক করেছে। তাদের পুলিশ ও বিজিবির হেফাজতে রাখা হয়েছে।
এ মাসেই খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা ও পানছড়ি সীমান্ত দিয়ে ৮১ জনকে ঠেলে দেয় ভারত।