
ছবি : জনকণ্ঠ
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে গত কয়েক দিন ধরে টানা বৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। বৃষ্টির ফলে চলতি মৌসুমের খেতের ধান ঘরে তুলতে হিমশিম খেতে হচ্ছে কৃষকদের। বৃষ্টির পাশাপাশি চাহিদা অনুযায়ী মিলছে না শ্রমিকও। এখনো অনেক কৃষকের পাকা ধান খেতেই পড়ে রয়েছে। জমি থেকে ধান কেটে বাড়িতে আনলেও তা শুকাতে পারছেন না। সব মিলিয়ে বৃষ্টিতে বিপাকে পড়েছেন ফুলবাড়ীর কৃষক।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, অনেক কৃষকের পাকা ধান এখনো মাঠেই পড়ে রয়েছে। গত ১০ দিন ধরে কখনো হালকা, কখনো মাঝারি আবার কখনো ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টিতে নিচু জমির ধানের খেত ডুবে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। কৃষকের বাড়ির উঠানে, রাস্তায়, মাঠে পাকা ধান নিয়ে এ ভোগান্তির যেন শেষ নেই। কৃষকরা বারবার আকাশের দিকে তাকিয়ে রোদের অপেক্ষায় আছেন।
উপজেলার ঘোগারকুটি এলাকার কৃষক মজিবর রহমান। এ বছর তিনি ৭ বিঘা জমিতে বোরোধান আবাদ করেছেন। খেতের পাকা ধান নিয়ে ভোগান্তির কথা জানিয়ে তিনি বলেন,
"আমার সব জমির ধান পেকেছে। ৩-৪ দিন ধরে কামলার পেছনে ঘুরছি। প্রতি বিঘা জমির ধান কাটতে ৫ হাজার টাকা করে চাচ্ছে। তাও দিতে রাজি হয়েছি। কিন্তু তাতেও কামলারা আমার ধান কেটে দিচ্ছে না। তারা সময়ই পাচ্ছে না। এলাকায় একটা কম্বাইন হারভেস্টার এসেছিল। এর চালককেও ধান কেটে দিতে অনুরোধ করেছি। সেও আমার অনুরোধ রাখেনি। আরো অনেকের ধান কাটতে হবে বলে এলাকা থেকে চলে গেছে। এখন খেতের পাকা ধান নিয়ে মহা বিপদে আছি। কপালে কী আছে, উপরওয়ালাই ভালো জানেন।"
একই এলাকার কৃষক আব্দুল গনি মিয়া জানান, তিনি আট দিন আগে তিন বিঘা জমির ধান কেটে বাড়িতে এনেছেন। সেই ধান মাড়াই করে ঘরে তুলেছেন। কিন্তু রোদ না থাকায় ধান ঘরেই পড়ে রয়েছে। তার ভেজা ধানে চারা গজাতে শুরু করেছে।
পূর্ব ধনিরাম গ্রামের কৃষক আব্দুস সামাদ জানান, তিনি এবারে আড়াই বিঘা জমিতে বোরোধান আবাদ করেছেন। এর মধ্যে ১৬ শতাংশ জমির ধান কেটে বাড়িতে এনে মাড়াই করে নিয়েছেন। রোদের অভাবে মাড়াই করা ধান শুকাতে পারছেন না। ধান থেকে পঁচা গন্ধ বের হচ্ছে। খেতের বাকি ধানও পেকে গেছে। কিন্তু টানা বৃষ্টির কারণে ধান কাটতে পারছেন না। ধান নিয়ে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে এই কৃষকের কপালে।
চন্দ্রখানা এলাকার কৃষক আলম মিয়া বলেন,
"ধান আবাদ করে এবার এমন পরিস্থিতিতে পড়েছি, মনে হচ্ছে কামলাদের কাছ থেকে জমি বর্গা নিয়েছি। বৃষ্টিতে ধান নিয়ে কী যে বিপদ! ধান কাটার লোকই পাওয়া যাচ্ছে না। পেলেও যে দাম চাচ্ছে, তাতে জমির অর্ধেক ফসল বিক্রি করে তাদের টাকা দিতে হবে। এ যেন কামলার সঙ্গে সমান সমান ভাগ!"
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিলুফা ইয়াসমিন জানান, উপজেলায় এবছর ১০ হাজার ২০৫ হেক্টর জমিতে বোরোধান আবাদ হয়েছে। এখন পর্যন্ত প্রায় ৬ হাজার ১২৫ হেক্টর জমির ধান কাটা হয়েছে। বৃষ্টিতে ১০ হেক্টর জমির ধান পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। বৈরী আবহাওয়ার কারণে খেতের ধান কাটা-মাড়াইয়ের কাজ অনেকটাই থমকে আছে বলেও জানান তিনি।
আলিফ