
মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার জাগীর ইউনিয়নের মহেশপুর গ্রামের অন্ধ মুদি দোকানি মো. আলী আকবর প্রতিকূলতার মাঝেও ৩০ বছর ধরে চালিয়ে যাচ্ছেন জীবনের সংগ্রাম। মাত্র তিন বছর বয়সে দৃষ্টিশক্তি হারানো এই মানুষটি ১৯৯৪ সাল থেকে অন্ধ অবস্থায় দোকানদারির মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করছেন। অন্ধত্ব যেন হার মেনেছে আলী আকবরের কাছে।
আধুনিক যুগে যেখানে অনেক সুস্থ মানুষ জীবনের কঠিন সময়ে ভিক্ষাবৃত্তি বা অনৈতিক পথ বেছে নেয়, সেখানে মো. আলী আকবরের আত্মসম্মানবোধ ও কঠোর পরিশ্রমের দৃষ্টান্ত সত্যিই অনুকরণীয়। তার দোকানে প্রবেশ করলে বুঝার উপায় নেই তিনি একজন দৃষ্টিহীন ব্যক্তি। ১০০, ৫০০ কিংবা ১০০০ টাকার যেকোনো নোট হাতে দিলেই নিখুঁতভাবে ভাঙতি দিয়ে দেন তিনি।
পাঁচ সদস্যের সংসার তার—স্ত্রী ও তিন মেয়ে নিয়ে। ইতোমধ্যে দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। ছোট মেয়ে এখনো স্কুলে পড়ে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে প্রতিদিনের খরচ মেটানো এখন তার জন্য অত্যন্ত কষ্টসাধ্য হয়ে উঠেছে।
আলী আকবর বলেন, “ছোটবেলা থেকেই চোখে দেখি না। ভিক্ষা নয়, কাজ করে খেতে চাই বলেই দোকান দিয়েছিলাম। প্রতিবন্ধী ভাতা পাই, কিন্তু তা দিয়ে সংসার চলে না। সহযোগিতা পেলে দোকানে মালামাল বাড়িয়ে আরও ভালোভাবে চলতে পারতাম।”
স্থানীয়রা বলছেন, আলী আকবরের দোকানে জিনিসপত্র খুবই সীমিত। বর্তমানে সবকিছুর দাম বেড়ে যাওয়ায় দোকান চালানোও কঠিন হয়ে পড়েছে। জাগীর ইউনিয়নের শামীম, শাকিল ও আবুল জানান, “তিনি চোখে না দেখলেও টাকা বুঝে নিতে এবং সঠিক ভাঙতি দিতে পারেন। সরকার বা কোনো বিত্তবান সহযোগিতা করলে আলী আকবর আরও ভালোভাবে বাঁচতে পারতেন।”
এ বিষয়ে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা রুশিয়া আক্তার জানান, “তিনি আমাদের প্রতিবন্ধী ভাতার আওতায় রয়েছেন। এছাড়াও প্রতিবন্ধীদের জন্য সুদমুক্ত ক্ষুদ্রঋণ সুবিধা রয়েছে। তিনি যদি উপজেলা অফিসে যোগাযোগ করেন, আমরা তাকে এই প্রকল্পের আওতায় নিয়ে আসবো। এছাড়া অন্যান্য আর্থিক সুবিধাও দেওয়ার চেষ্টা করবো।”
আলী আকবরের মতো মানুষেরা প্রমাণ করে, শারীরিক সীমাবদ্ধতা কোনো মানুষকে থামিয়ে রাখতে পারে না যদি আত্মবিশ্বাস ও পরিশ্রমের শক্তি থাকে। সমাজ ও রাষ্ট্রের উচিত এমন সংগ্রামী নাগরিকদের পাশে দাঁড়ানো।
রিফাত