ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৭ মে ২০২৫, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

স্বামীর সম্পত্তির অধিকার পেতে স্ত্রীর সংবাদ সম্মেলন

নিজস্ব সংবাদদাতা, রামগতি, লক্ষ্মীপুর

প্রকাশিত: ১৫:৫৩, ১৬ মে ২০২৫

স্বামীর সম্পত্তির অধিকার পেতে স্ত্রীর সংবাদ সম্মেলন

লক্ষ্মীপুরের রামগতিতে আবদুল ওহাব নামের এক ব্যবসায়ী মৃত্যুর পর কৌশলে দ্বিতীয় স্ত্রীকে বাদ রেখে ভুয়া ওয়ারিশ সনদ তৈরির মাধ্যমে সম্পত্তি দখলের অভিযোগ উঠেছে তার প্রথম স্ত্রী ও ছয় সন্তানের বিরুদ্ধে।

জানা যায়, উপজেলার চরআলগী ইউনিয়নের চর টগবী গ্রামের ব্যবসায়ী আবদুল ওহাব (৭০) চলতি বছরে মে মাসের ২ তারিখে মারা যান। তিনি পারিবারিক জীবনে দুটি বিয়ে করেন। প্রথম স্ত্রী থাকা সত্ত্বেও আবদুল ওহাব আলেকজান্ডার ইউনিয়নের সবুজগ্রামের মো. ইউসুফের মেয়ে সোনিয়া বেগমকে (৪৩) কে দ্বিতীয় বিয়ে করেন। পাবিরাবিক ভাবে দ্বিতীয় স্ত্রীকে প্রথম স্ত্রী ও তার সন্তানরা সহ্য করতে না পারায় নোয়াখালীর মাইজদীতে একটি ভাড়া বাসায় রেখেছেন আব্দুল ওহাব। আবদুল ওহাব নিয়মিত দ্বিতীয় স্ত্রীর কাছে যাতায়াত করতেন এবং দ্বিতীয় স্ত্রীসহ প্রথম স্ত্রীর আগের ঘরের সন্তানদের ভরণ পোষণ ও পড়ালেখার ব্যয় বহন করতেন।

এরই মধ্যে আবদুল ওহাব মারা যাওয়ার পর প্রথম স্ত্রী শাহিনুর বেগম ও তার ৬ সন্তান-আব্দুল হান্নান, পারভেজ, বাবলু, লাভু, কহিনুর ও মনি সংঘবদ্ধ হয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সহসভাপতি জাকির হোসেন লিটন চৌধুরী ও ইউপির প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো.নজরুল ইসলাম খসরুর সহযোগীতায় ভুয়া ওয়ারিশসনদ তৈরি করে সম্পত্তি আত্মসাৎ চেষ্টা করা হচ্ছে। স্বামীর সম্পত্তির অধিকার ফিরে পেতে দ্বিতীয় স্ত্রী সোনিয়া বেগম আজ শুক্রবার (১৬ মে) সকালে রামগতি উপজেলা সাংবাদিক ইউনিটির কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেন। 

সংবাদ সম্মেলনে বিয়ের কাবিননা দেখিয়ে সোনিয়া বলেন, ২০২০ সালে নোয়াখালী পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাজী নুরল আমিনের অফিসে ৩ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা দেনমোহরে বিয়ে সম্পন্ন হয় তাদের। বিয়েতে স্বাক্ষী হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আলেকজান্ডার ইউনিয়নের সবুজ গ্রামের মো. মফিজের ছেলে মোহাম্মদ হৃদয় এবং মাইজদী কোর্ট এলাকার আবুল খায়েরের ছেলে আবুল কালাম। 

সোনিয়া বেগম বলেন, উদ্দেশ্যপ্রনোদিত হয়ে আমি স্ত্রী হিসেবে সব ধরনের প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করার অপচেষ্টা করা হচ্ছে। আমাকে বাদ রেখে ওয়ারিশ সনদ প্রদানের বিষয়ে আমার মেয়ের জামাই মো. ইউসুফসহ (আগের সংসার) সরাসরি গিয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান জাকির হোসেন লিটনচৌধুরীকে অবহিত করি। তিনি আমার থেকে এবিষয়ে সমাধান করার জন্য দুইদিন সময় নিয়েছেন। যাচাই বাছাই করে প্রকৃত ওয়ারিশ সনদ দিবেন বলে জানালেও পরবর্তীতে তালবাহানা শুরু করেন। আমার স্বামীর রেখে যাওয়া সহায় সম্পদ ও অধিকার থেকে আমাকে কৌশলে বাদ রাখতে ইউপি চেয়ারম্যানসহ স্বামী আবদুল ওহাবের প্রথম স্ত্রী ও তার ছয় সন্তান মিলে প্রতারণার আশ্রয় গ্রহন করছেন। যা দেশের ওয়ারিশ সম্পদ বন্টন নীতিমালার পরিপূর্ণ বিরোধী। আমি প্রকৃত ওয়ারিশ সনদ ইস্যু করাসহ এবং স্ত্রী হিসেবে আমার সকল অধিকার পাওয়ার আশায় স্থানীয় প্রশাসন ও গন্যমান্যদের কাছে সু বিচার প্রত্যাশা করছি।

বাবার দ্বিতীয় স্ত্রী সোনিয়া বেগমকে বাদ রেখে ওয়ারিশ সনদ নেওয়া প্রসঙ্গে জানতে আবদুল ওহাবের প্রথম স্ত্রী শাহিনুর ও বড় ছেলে মো. আবদুল হান্নানের সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করে তাদেরকে পাওয়া যায়নি।

চরআলগী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাকির হোসেন লিটন চৌধুরী জানান, মৃত আবদুল ওহাবের ওয়ারিশদের সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে তাদেরকে সনদ দেওয়া হয়েছে। পরবর্তীতে শুনলাম তার দ্বিতীয় স্ত্রী রয়েছে। কাবিনামার ফটোকপি নিয়ে আমি নিজ উদ্যোগে নোয়াখালীর ওই কাজী অফিসে লোক পাঠিয়ে যোগাযোগ করি। উক্ত কাবিনামাটি প্রাথমিক ভাবে সত্যতা মেলেনি। তিনি আরো বলেন, সোনিয়া বেগম যথাযথ কাগজপত্র প্রদর্শন করতে পারলে আমি আগের ওয়ারিশসনদটি বাতিল করে নতুন সনদ প্রদান করব।

কাজী মো. নুরুল আমিনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, উক্ত কাবিননামটির বিষয়ে চরআলগী ইউনিয়ন পরিষদ থেকে মো. খসরু নামের এক ব্যক্তি এসে জিজ্ঞাসা করেন। তখন তাড়াহুড়া করে যথাযথ ভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি। তবে পরবর্তীতে যাচাই বাছাই করে সোনিয়া বেগম এবং আবদুল ওহাবের কাবিনামাটি রেজিস্ট্রারে পাওয়া গেছে। উক্ত কাবিননামা সঠিক। 

 

রাজু

×