ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৮ মে ২০২৫, ২৫ বৈশাখ ১৪৩২

১৫ মে থেকে নামছে রাজশাহীর গুটি আম

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী

প্রকাশিত: ২৩:৩৬, ৭ মে ২০২৫

১৫ মে থেকে নামছে রাজশাহীর গুটি আম

১৫ মে থেকে নামছে রাজশাহীর গুটি আম

সুমিষ্ট আমের জন্য খ্যাতি অর্জনকারী জেলা রাজশাহীতে পাকা আমের কারবার শুরু হতে যাচ্ছে আগামী ১৫ মে থেকে। ওইদিন থেকে সবধরনের গুটি আম গাছ থেকে নামাতে পারবেন চাষিরা। 
রাজশাহী জেলায় আম পাড়ার সময় নির্ধারণ বিষয়ে আম পরিবহন, বাজারজাতকরণ ও সংগ্রহ বিষয়ে মতবিনিময় সভায় এমন তথ্য জানান জেলা প্রশাসক। বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজশাহী জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত মতবিনিময়ে সভাপতিত্ব করেন, জেলা প্রশাসক আফিয়া আখতার। সভায় উপস্থিত ছিলেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সালমা আক্তার।
এ সময় কৃষি কর্মকর্তা, আমচাষি, ব্যবসায়ী ও আম পরিবহনে নিয়োজিত সবার সঙ্গে আলোচনা করে নিরাপদ, বিষমুক্ত ও পরিপক্ব আম নিশ্চিত করতে ‘ম্যাঙ্গো ক্যালেন্ডার’ প্রকাশ করা হয়।
রাজশাহীর ‘ম্যাঙ্গো ক্যালেন্ডার’ অনুযায়ী, ১৫ মে থেকে সবধরনের গুটি জাতের আম নামাতে পারবেন চাষিরা। গত বছরও আম পাড়ার শুরুর সময় ছিল ১৫ মে। তার আগেরবার ৪ মে। এ ছাড়া ২০২২ সালে ছিল ১৩ মে থেকে। 
বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এ বছর সকল গুটি জাতের আম ১৫ মে থেকে পাড়া শুরু হবে। ২০ মে থেকে গোপালভোগ, রানীপছন্দ বা লক্ষণভোগ ২৫ মে, হিমসাগর বা খিরসাপাত ৩০ মে, বানানা ম্যাঙ্গো বা ল্যাংড়া ১০ জুন, আমরুপালি বা ফজলি ১৫ জুন, ৫ জুলাই বারি আম-৪, আশ্বিনা ১০ জুলাই, গৌড়মতি ১৫ জুলাই পাড়া যাবে। এ ছাড়া সারাবছর কাটিমন ও বারি আম-১১ জাতের আম পাওয়া যাবে। 
রাজশাহী কৃষি অফিসের তথ্যানুযায়ী এ বছর জেলায় ১৯ হাজার ৬০৩ হেক্টর জমিতে আমের চাষ হয়েছে। এবার সম্ভাব্য গড় উৎপাদন ধরা হয়েছে ১৩ দশমিক ২৬ (টন) আর সম্ভাব্য মোট উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ৬০ হাজার ৬ মেট্রিক টন। এ ছাড়া সম্ভাব্য আমের মোট বিক্রি এক হাজার ছয়শ পঁচানব্বই কোটি পঁচাশি লাখ পঁচাত্তর হাজার ছয়শ বিশ টাকা।
সভায় রাজশাহী জেলা প্রশাসক আফিয়া আখতার বলেন, আগামী ১৫ মে থেকে সবধরনের গুটি আম পাড়তে পারবেন চাষিরা। যদি কোনো ধরনের দুর্যোগ হয়, সেক্ষেত্রে চাষিরা নিজ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের অনুমতি নিয়ে আগাম আম পাড়তে পারবেন।
এদিকে এখন আম পাড়ার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন রাজশাহীর আমচাষি ও ব্যবসায়ীরা। ম্যাঙ্গো পঞ্জি অনুযায়ী এক সপ্তাহ পরেও নামানো যাবে গুটিজাতের আম। তাই শেষ সময়ের পরিচর্যাও চলছে গাছে গাছে। 
এদিকে এবার একই সময়ে লিচুও বাজারে আসবে বলে আশা করছেন রাজশাহীর চাষিরা। তারা বলছেন, এখন গাছে গাছে যেমন ঝুলছে আম তেমনি পাতার ফাঁকে ফাঁকে রং ধরছে রসালো ফল লিচুর। রাজশাহীর চাষিরা বলছেন, বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এবার লিচুতে লাভের দেখা মিলবে। আমের পাশাপাশি রাজশাহীর লিচুর একটা আলাদা সুনাম রয়েছে। 
রাজশাহী কৃষি বিভাগের সূত্র বলছে, এ বছর রাজশাহীতে ৫৩০ হেক্টর জমিতে লিচু চাষ হয়েছে। যা থেকে প্রায় তিন হাজার ৮০০ মেট্রিক টন লিচুর উৎপাদনের আশা করা হচ্ছে। এবার জেলায় সবচেয়ে বেশি বাগমারা উপজেলায় ১১৫ হেক্টর জমিতে লিচু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় ৮২৫ মেট্রিক টন।

এ ছাড়াও নগরীর বোয়ালিয়া থানায় ১০ হেক্টর জমিতে লিচুর লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ৭০ মেট্রিক টন। জেলার পুঠিয়া উপজেলায় ৭৮ হেক্টর, পবা উপজেলায় ৭৫ হেক্টর, দুর্গাপুরে ৭০ হেক্টর, মোহনপুরে ৫২ হেক্টর, চারঘাটে ৪৫ হেক্টর, তানোর উপজেলায় ৩০ হেক্টর, বাঘা উপজেলায় ২৮ হেক্টর, মতিহারে ২০ হেক্টর ও গোদাগাড়ী উপজেলায় ১৯ হেক্টর জমিতে লিচুর আবাদ হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রাজশাহী কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েক বছরে শুধু লিচু চাষ করে জেলার কয়েকশ’ চাষি স্বনির্ভর হয়েছেন। ফলে প্রতি বছর লিচুর চাষ বাড়ছে। বাগান ছাড়াও বসতবাড়িতে দেশী লিচুর পাশাপাশি উচ্চফলনশীল চায়না-৩ এবং বোম্বে ও মাদ্রাজি জাতের লিচুর চাষ হচ্ছে।
এখন গাছের পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। রাজশাহীর বাগান মালিকরা জানান, গাছে গাছে এখন লিচুর গুটি বেশ বড় হয়েছে। লিচুতে রং আসতেও শুরু করেছে। কোনো ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে চলতি সপ্তাহের মধ্যে কৃষকরা গাছ থেকে লিচু পাড়া শুরু করতে পারবে।
স্থানীয় লিচু ব্যবসায়ীরা জানান, গাছে গাছে গুটি দেখে ধারণা করা হচ্ছে এ বছর আশানুরূপ লিচুর ফলন হয়েছে। তার মতে শেষ পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে, লিচুর ভালো ফলন হবে এ অঞ্চলে।
রাজশাহীর পবা উপজেলার পারিলা এলাকার লিচু চাষি এরশাদ আলী জানান, তার বাগানে বোম্বে জাতের ৫০টি লিচু গাছ আছে। গত বছর দেড় লাখ টাকার লিচু বিক্রি করেছেন। এবার দুই লাখ টাকার লিচু বিক্রির আশা করছেন।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, প্রতিবছর লিচুর চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে জেলায়। এ বছর লিচুর চাষ হয়েছে ৫৩০ হেক্টর জমিতে। রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোছা. উম্মে ছালমা বলেন, রাজশাহীর লিচু স্বাদে ও গন্ধে অতুলনীয় হওয়ায় এই জেলার প্রায় সব উপজেলাতেই রয়েছে লিচুর বাগান। তাই এই ফলের চাষ খুবই লাভজনক। তবে কোনো মৌসুমে ফলন একটু কম আবার কোনো মৌসুমে বেশি হয়। তবে প্রতি বছর লিচুর আবাদ বাড়ছে।

×