ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৮ মে ২০২৫, ২৫ বৈশাখ ১৪৩২

সৈয়দপুরে ইটভাটার বিষাক্ত ধোঁয়ায় পুড়ে গেছে বর্গা চাষীদের স্বপ্ন

নিজস্ব সংবাদদাতা,সৈয়দপুর

প্রকাশিত: ২১:৪১, ৭ মে ২০২৫; আপডেট: ২১:৪২, ৭ মে ২০২৫

সৈয়দপুরে ইটভাটার বিষাক্ত ধোঁয়ায় পুড়ে গেছে বর্গা চাষীদের স্বপ্ন

ছবি: দৈনিক জনকণ্ঠ

সৈয়দপুরের পল্লিতে  ইটভাটার বিষাক্ত ধোয়ায় প্রায় দশ একর জমির ফসল পুড়ে গেছে। এ নিয়ে ভুক্তভোগী কৃষকরা ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেছেন। 

জানা যায়, উপজেলার খাতামধুপুর ইউনিয়নের কোচারপাড়া  এলাকায় কৃষি ক্ষেতে গড়ে উঠেছে তানিয়া ব্রিকস লিমিটেড (টিবিএল) নামে একটি অবৈধ ইটভাটা। সেই ভাটার পাশের জমিগুলোতে চলতি মৌসুমে চাষাবাদ করা হয়েছে ইরি বোরো ধান। বর্তমানে ওই সকল ক্ষেতের ধান কাঁচাপাকা। সবুজ আর হলুদ বর্ণ ধারণ করেছে। তবে দুর থেকে দেখলে বোঝার উপায় নেই, যে পাকা ধানগুলোর ভিতরে চাল নেই। রয়েছে চিটা। সংলগ্ন ভাটার বিষাক্ত ধোঁয়ায় পুড়ে চিটা হয়ে গেছে। 

রাকিবুল ইসলাম নামে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক বলেন, এখানে কৃষিজমিতে ইটভাটা করা হয়েছে। সেটা কতটুকু বৈধ? আমরা জানি না। এর কালো ধোঁয়ায় প্রতি ইরিবোরো মৌসুমে ক্ষতির স্বীকার হই। আকাঙ্ক্ষিত ফসল পাই না। এ নিয়ে ভাটায় অভিযোগ করলে তারা গালাগাল করে। বিশেষ করে ওই ভাটার ম্যানেজার ও কর্মচারীদের অসৌজন্যমূলক আচরণের বিষয়টি ওই এলাকার দায়িত্ব প্রাপ্ত উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাকে জানালে কোন ব্যবস্থা নেয়নি। ক্ষতির শিকার হলেও সান্ত¡নাও দেননি। পরে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিলেও সুরাহা না পেয়ে বাধ্য হয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দেই। এবার সেখানে থেকে খালি হাতে ফিরলে বৃহত্তর আন্দোলনে যাবো। 

কৃষক ওবায়দুল ও তার স্ত্রী জাহিদা খাতুন বলেন, আমরা গরীব মানুষ। এক দোন (৩০ শতক) জমির আবাদ দিয়েই আমাদের সারাবছরের ভাতের জোগান হয়। কিন্তু ইটভাটার কারণে ভালোভাবে চাষাবাদ করতে পারি না। ভাটার ধোঁয়ায় প্রতি বছর ধান নষ্ট হওয়ায় চরম ক্ষতির মুখে পরতে হয়। এবার ক্ষতিপূরণ না পেলে সারাবছর না খেয়ে থাকতে হবে। কারণ চাল কিনে খাওয়ার সামর্থ্য নাই। ধরিয়া নামে এক ক্ষতিগ্রস্ত চাষি বলেন, অন্যের জমি বর্গা নিয়ে চাষাবাদ করি। এবার করেছি ৩০ শতক। সেখানে ধান চাষ করায় চিটার কারণে ব্যয় উত্তোলন হবে না। এখন আমরা ভাটার মালিকের কাছে ক্ষতিপূরণ চাইলে চাঁদাবাজ বলে গালমন্দ করছে। এমন অভিযোগ অভিযোগ ক্ষতিগ্রস্ত সকল কৃষকের। 

জানা যায়, এই ইটভাটার পাশে রয়েছে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কমিউনিটি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স,জামিয়া মাদ্রাসা, রেশম বোর্ডের চাকী পশুপালন কেন্দ্র। যা ভাটা স্থাপন নীতিমালার পরিপন্থি। এই ভাটার কারণে প্রতিনিয়ত পরিবেশ দূষণ সমস্যা হচ্ছে। সাথে আবাসিক এলাকার ফলফলাদি গাছের ফলন কমে গেছে। তাই এখান থেকে ভাটাটি অপসারণ জরুরি  বলে মতামত প্রকাশ করেন এলাকাবাসী।

আজিজুল কবির নামে ওই ইট ভাটার ম্যানেজার বলেন, ভাটার ধোঁয়ায় ধানের ক্ষতি হয়নি। প্রাকৃতিক কারণে এই সমস্যা দেখা দিয়েছে। আহসান হাবীব সাজু নামে ওই ইটভাটার মালিক বলেন, ভাটার ধোঁয়ায় ধানের ক্ষতি হয়নি। কেননা আমার ভাটার আগুন এখনও জ্বলছে। দোষ ঢাকতে তিনি ভিন্ন একটি ভাটার নাম উল্লেখ করেন।

এ নিয়ে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আনছারুল ইসলাম বলেন, সামান্য ওষুধ ব্যবহার করলেই ধানগুলোর ভালো ফলন পাওয়া যাবে। আমরা ওষুধের খরচ দিতে চেয়েছি। কিন্তু তারা তা নেয়নি। তবে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের দাবি ন্যায্য।  ভাটা মালিকের উচিত হচ্ছে নষ্ট ফসলের ক্ষতিপূরণ দেওয়া। 
 

এম আর মহসিন/ফারুক

×