
ছবি: সংগৃহীত
বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ ও সমাজসেবক আলহাজ্ব কবীর আহমেদ ভূঁইয়া দীর্ঘদিন ধরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সার্বিক উন্নয়ন নিয়ে কাজ করে আসছেন। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির অন্যতম সদস্য এবং একজন সফল আন্তর্জাতিক ব্যবসায়ী। তাঁর বিশ্বাস—নারীদের সম্ভাবনা সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া একটি অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী এবং উদ্ভাবনী জেলা হিসেবে গড়ে উঠতে পারে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জনসংখ্যা ও শিক্ষার চিত্র (তথ্যসূত্র: বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো, আদমশুমারি ২০২২)
২০২২ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জনসংখ্যা প্রায় ৩৩,৬৫,০৬৩ জন, যার মধ্যে নারীর সংখ্যা প্রায় ১৭,৬৮,০০০—পুরুষের তুলনায় কিছুটা বেশি। শিক্ষা খাতে সাম্প্রতিক উন্নয়ন লক্ষণীয়। ২০১২ সালে জেলার সাক্ষরতার হার ছিল ৪৫.২৯%, যা ২০২২ সালে বেড়ে দাঁড়ায় ৭২.১২ শতাংশে। মেয়েদের সাক্ষরতার হার ৭২.৪৪% এবং ছেলেদের ৭১.৭৪%, যা নারী শিক্ষায় অগ্রগতির ইঙ্গিত দেয়। তবে গ্রামীণ এলাকায় এখনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংকট এবং মাধ্যমিক পর্যায়ে ড্রপআউটের সমস্যা রয়েছে।
নারীর আর্থ-সামাজিক বাস্তবতা :
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অধিকাংশ নারী এখনো কৃষি, গার্মেন্টস ও স্বল্প মজুরির খাতে কাজ করেন। অনেকে বিদেশে গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করতে বাধ্য হন। প্রাথমিক শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবায় উন্নতি হলেও কর্মজীবনে নারীদের অংশগ্রহণ তুলনামূলকভাবে কম। কবীর আহমেদ ভূঁইয়া মনে করেন—নারীর আর্থ-সামাজিক অবস্থা উন্নত না হলে জেলার সার্বিক উন্নয়ন সম্ভব নয়।
যুব নারী শ্রমশক্তি ও নিষ্ক্রিয়তার চিত্র (তথ্যসূত্র: শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, ২০২৩) :
বিভাগীয় কর্মপরিসংখ্যানে দেখা যায়, ১৫–২৪ বছর বয়সী ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ৪১.৭০% যুবক-যুবতী কোনো শিক্ষা, প্রশিক্ষণ বা কর্মসংস্থানে জড়িত নয়। এর মধ্যে ৫৭.৩২% নারী এবং ২০.১৯% পুরুষ। সামাজিক মানসিকতা, পরিবারিক বাধা, নিরাপত্তা ও প্রশিক্ষণের অভাবে তরুণীদের মধ্যে কর্মজীবন গড়ার আগ্রহ কমে যাচ্ছে।
প্রশিক্ষণ ও ক্ষমতায়ন উদ্যোগ (তথ্যসূত্র: টেকনিক্যাল এডুকেশন অধিদপ্তর, BRAC, SME ফাউন্ডেশন) :
সরকারি-বেসরকারি নানা উদ্যোগে নারীদের জন্য প্রশিক্ষণ কর্মসূচি চালু রয়েছে। যেমন:
STEP প্রকল্প: ৪৫টি পলিটেকনিকে মেয়েদের ভর্তি এবং ৪০,০০০ শিক্ষার্থীকে বৃত্তি।
ব্র্যাক, কারিতাস, লাইট হাউজ (টারা): দর্জি, বয়ন, কৃষি, তথ্যপ্রযুক্তি প্রশিক্ষণ।
নারী উদ্যোক্তা ঋণ: এসএমই ফাউন্ডেশন, ব্যাংক ও অর্থমন্ত্রণালয়ের যৌথ উদ্যোগে সহজ শর্তে ঋণ।
স্থানীয় উদাহরণ: আশুগঞ্জের চরনারায়ণপুর গ্রামের নাসরিন আক্তার, ব্র্যাকের দর্জি প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজেই একটি সেলাই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালু করেছেন। তিনি এখন ১২ জন নারীকে প্রশিক্ষণ দিয়ে স্বনির্ভর করেছেন। এমন উদাহরণ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নারীদের মধ্যেও নতুন আশা জাগাচ্ছে।
বিএনপির ৩১ দফা ও নারীর অগ্রাধিকার :
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-এর ৩১ দফা কর্মসূচির ২৩ নম্বর দফায় নারীর কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি রয়েছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ঘোষিত নতুন পরিকল্পনায়—
প্রতি পরিবারে “ফ্যামিলি কার্ড” থাকবে মায়ের নামে।
**SME ঋণ সহজতর হবে।
**প্রাথমিক ও কন্যাশিক্ষায় অগ্রাধিকার দিয়ে বাজেট বাড়ানো হবে।
এগুলো নারীর ক্ষমতায়নের একটি সুসংহত নীতিগত দিকনির্দেশনা।
নারী-কেন্দ্রিক অর্থনৈতিক অঞ্চল: কৌশল ও চ্যালেঞ্জ :
১. শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়ন: স্কুল-কলেজে মেয়েদের উপস্থিতি নিশ্চিতকরণ, ভোকেশনাল ও কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন।
চ্যালেঞ্জ: পারিবারিক বাধা, সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি।
২. অর্থায়ন ও উদ্যোক্তা সহায়তা: মহিলাদের জন্য ঋণ, অনুদান ও সমিতি-ভিত্তিক উদ্যোগ।
চ্যালেঞ্জ: পুঁজি সংকট, জামানতের জটিলতা।
৩. সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন: সচেতনতামূলক প্রচারাভিযান, লিঙ্গ সমতা পাঠ্যক্রম।
চ্যালেঞ্জ: রক্ষণশীল মনোভাব, নারীর চলাচলে প্রতিবন্ধকতা।
৪. অবকাঠামোগত সহায়তা: নিরাপদ পরিবহন, হোস্টেল, ব্রডব্যান্ড, প্রযুক্তি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র।
চ্যালেঞ্জ: দুর্বল যোগাযোগ ও বিদ্যুৎ সুবিধা।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া একটি রোল মডেল জেলার পথে :
আলহাজ্ব কবীর আহমেদ ভূঁইয়া দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন—নারীর ক্ষমতায়নই ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে জাতীয় উন্নয়নের রোল মডেল জেলায় রূপান্তর করতে পারে। স্থানীয় সরকার, রাজনৈতিক নেতৃত্ব, এনজিও ও জনগণের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় নারীর দক্ষতা ও উদ্যোগকে কাজে লাগিয়ে টেকসই উন্নয়ন অর্জন সম্ভব।
আসুন, নারী-পুরুষ একসাথে কাজ করি—ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে সমতার আলোয় আলোকিত একটি রোল মডেল জেলায় পরিণত করতে। নারীর পাশে দাঁড়ানো মানেই একটি উন্নত ও মানবিক সমাজ নির্মাণের পথে এগিয়ে যাওয়া।
ফারুক