
ছবি: ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলার উত্তর জয়লস্কর সিলোনিয়া নদীর উপর নির্মিত সেতু
ফেনীর তিনটি উপজেলায় সংযোগ সড়কের অভাবে ৪টি সেতু ব্যবহার করতে পারছেন না স্থানীয়রা। অথচ সেতু নির্মাণ প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়েছে কয়েক বছর আগে। যাতায়াত ও কৃষি পণ্য পরিবহনে প্রতিনিয়ত দুর্ভোগ পোহাতে হয় স্থানীয়দের পাশাপাশি অপরিকল্পিত সেতু নির্মানের নামে সরকারি বরাদ্দ লুটপাটের অভিযোগ এলাকাবাসীর। সহসাই সংযোগ সড়ক তৈরি করে সেতুগুলো চলাচল উপযোগী করার আশ্বাস স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ফেনীর দাগনভুঞা, সোনাগাজী ও ছাগলনাইয়ায় উপজেলায় প্রায় ৩৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪টি সেতু নির্মান করছে এলজিইডি। যার মধ্যে দাগনভূঞা উপজেলার মাতুভূঞা থেকে বেকের বাজার সড়ক ও ছোট ফেনী নদীর উপর ৬০ মিটার ব্রিজ ৯ কোটি ২০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে সেতু নির্মাণ কাজ করেন মেসার্স ছালেহ আহমদ নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু কাজের মেয়াদ শেষ হলেও এখনো সেতুর সংযোগ সড়ক সহ ৩০ ভাগ কাজ বাকি রয়েছে। অন্যদিকে একই উপজেলার উত্তর জয়লস্কর থেকে ওমরপুর যাতায়তের জন্য সিলোনিয়া নদীর উপর সংযোগ ব্রিজ নির্মাণের কাজ করেণ মেসার্স হক ট্রেডার্স নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ৮ কোটি ৩০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ৮১ মিটার সেতুটির নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০২১ সালের ১লা ফেব্রুয়ারি আর শেষ হওয়ার কথা ছিলো ২০২৩ সালের ১৮ ডিসেম্বর। কিন্তু কাজের মেয়াদ শেষ হলেও সেতুর সংযোগ সড়কের জায়গা জটিলতার কারণে এখনো ৭ ভাগ কাজ বাকি রয়েছে।
এছাড়া ছাগলনাইয়া মহামায়া ইউনিয়নে মহুরি নদীর উপর ৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ৯৬ মিটার মাওলানা ওবায়দুল হক সংযোগ সড়ক ব্রিজ সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। এবং সোনাগাজী উপজেলার নবাবপুর থেকে ভোরবাজারে যাতায়াতের জন্য কালিদাস পাহালিয়া নদীর উপর ৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ৯৬ মিটার সংযোগ ব্রিজ নির্মাণ করা হলেও এখনো সেতু দুটির সংযোগ সড়কের জায়গা জটিলতারর কারণে ব্যবহার করা যাচ্ছে না।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দাগনভূঞা উপজেলার মাতুভূঞা ও বেকের বাজার সড়কের মোমারিজপুর ছোট ফেনী নদীর উপর ১০টি পিলারের উপর দাঁড়িয়ে আছে একটি সেতু। যার উচ্চতা মাটি থেকে ১০/১২ ফিট এবং সেতুর দু'পাশের কোন সংযোগ সড়ক নেই। আর একই চিত্র দেখা যায় উপজেলায় উত্তর জয়লস্কর থেকে ওমরপুর যাতায়াতের জন্য সিলোনিয়া নদীর উপর নির্মাণ সেতু। নির্মানের ৩বছর পার হলেও তৈরি হয় নি সংযোগ সড়ক। এছাড়াও সোনাগাজী ও ছাগলনাইয়াতে সেতুর সংযোগ সড়ক না থাকায় কাজে আসছে না এলাকাবাসীর। এতে স্কুল, কলেজ মাদ্রাসায় যাতায়াত ও কৃষি পণ্য আনা-নেওয়ার চরম ভোগান্তি পোহাতে হয় স্থানীয়দের।
মোমারিজপুর এলাকার আবদুল কালাম ধনা মিয়া জানান, সেতুটি আমাদের উপকার জন্য করা হয়েছে। কিন্তু উপকারের পরিবর্তে এখন ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেতুতে উঠার মতো কোনো ব্যবস্থা নেই। সেতুর উপরে উঠতে হলে মই দিয়ে উঠতে হবে। সেতু সাথে আমার দোকান। সেতু নির্মাণকে কেন্দ্র করে আমার দোকান ভেঙে দিয়েছে ঠিকাদার। বলেছিল সেতু নির্মাণ শেষে আমার দোকান ঠিক করে দিবে। কিন্তু সেতুর কাজ বাকি রেখে ঠিকাদারি এখান থেকে পালিয়ে গেছে। এখন প্রতিনিয়ত আমাদের কষ্ট করতে হচ্ছে।
উত্তর জয় লস্করের আবদুর রহিম জানান, সেতুটি নির্মাণ হয়েছে তিন-চার বছর পেরিয়েছে। কিন্তু এখনও ব্রিজের উঠানামার যে রাস্তা নেই। দ্রুত ব্রিজটি চালু করার দাবি জানান তিনি।
সোনাগাজীর নবাবপুর ইউনিয়নের নুর হোসেন জানান, কোটি টাকা ব্যয়ে করে সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু যার সুফল এলাকাবাসী ভোগ করতে পারছে না। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক। আমরা চাই কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সেতু মানুষ ভোগ করতে পারে। সেই ব্যবস্থা করার জোর দাবি জানান তিনি।
এদিকে সেতু নির্মাণ পাশে নদী ভাঙ্গনের কবলে পড়েছে এলাকাবাসী। মানুষের ঘর-বাড়ি আসবাবপত্র নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে। তাই দ্রুত সংযোগ সড়ক নির্মাণ করে সেতুগুলো চলাচলের উপযোগী করার দাবি এলাকাবাসীর।
মোমারিজপুর গ্রামের ফাতেমা খাতুন ও রহিমা বেগম জানান, ব্রিজের কাজের সময় নদীতে বাঁধ দেয়া হয়। বন্যার সময় সেই বাদ দিয়ে পানি যেতে পারে নি। পানি আমাদের বাড়ির উপর দিয়ে পানি গড়িয়ে যায়। যার ফলে আমাদের ঘরবাড়ি, টিউবওয়েল, বাথরুমের কিছু অংশ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বাকি অংশ টুকু যাওয়ার পথে। যারা সেতু নির্মাণ করছে তাদের সাথে যোগাযোগ করলে তারা আশ্বাস দিয়েছিল ব্লক দিয়ে নদীর ভাঙ্গন রোধ করবে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত ভাঙ্গন রোধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
আশঙ্কা করছি এবারের বরষায় সর্বাত্ম হারিয়ে বাড়ীর তিন পরিবার নিঃস্ব হয়ে যাব।
আসিফ