ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৯ মে ২০২৫, ২৬ বৈশাখ ১৪৩২

অর্থাভাবে উন্নত চিকিৎসা হচ্ছে না ছাত্র আন্দোলনে দৃষ্টিশক্তি হারানো আজিজুলের

কাজী খলিলুর রহমান, নিজস্ব সংবাদদাতা, বাঞ্ছারামপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া

প্রকাশিত: ২১:২৭, ৫ মার্চ ২০২৫; আপডেট: ২১:২৮, ৫ মার্চ ২০২৫

অর্থাভাবে উন্নত চিকিৎসা হচ্ছে না ছাত্র আন্দোলনে দৃষ্টিশক্তি হারানো আজিজুলের

ছবি: জনকণ্ঠ

চোখের ভেতর ৭টি ও মাথার চামড়ার ভেতর দিয়ে মগজের কাছাকাছি আরও ৪১টি পুলিশের গুলির স্প্লিন্টার নিয়ে এখন অন্ধ চোখে জীবন্মৃত হয়ে পরগাছার মতো বেঁচে আছে আজিজুল। দৃষ্টিশক্তি হারানো আজিজুলের খোঁজ আর কেউ নেয়নি। অনেকটা বিনা চিকিৎসায় বাড়িতেই এখন দিন কাটছে আজিজুলের।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে নরসিংদীর মাধবদী এলাকায় গত বছরের ১৮ জুলাই আরও অনেকের মতো রাজপথে প্রতিবাদে নেমেছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরের তেজখালী ইউনিয়নের বাহেরচর গ্রামের আজিজুল হক। হঠাৎ দুই চোখে পুলিশের ছোড়া ছররা গুলির স্প্লিন্টার এসে লাগে। সেই যে মাধবদী এলাকার পৌলানপুর ইসলামিয়া ফাজিল ডিগ্রি মাদ্রাসার এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আজিজুল দৃষ্টিশক্তি হারান, তা আর ফেরত আসেনি।

ওই ঘটনার পর দেশে বহু ঘটনা ঘটে গেছে— আওয়ামী লীগ সরকারের পতনসহ রাজনৈতিক পট পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু দৃষ্টিশক্তি হারানো আজিজুলের খোঁজ আর কেউ নেয়নি। অনেকটা বিনা চিকিৎসায় বাড়িতেই এখন দিন কাটছে তার।

জানা গেছে, মাদ্রাসায় পড়ার পাশাপাশি মাধবদীতে একটি টেক্সটাইল কারখানায় চাকরি করতেন আজিজুল। তার আয়েই চলত সংসার, বাবার চিকিৎসা ও ছোট বোনের লেখাপড়া। ফলে আজিজুলের অসুস্থতার কারণে পরিবারেও নেমে এসেছে চরম অন্ধকার।

সরকারের কাছে পরিবারের আবেদন, বিদেশে নিয়ে আজিজুলের চিকিৎসা করানো হোক। অন্তত একটি চোখও যদি ভালো হয়, তাহলে আজিজুল আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবেন, ধরতে পারবেন সংসারের হাল।

কথা হয় দৃষ্টিশক্তি হারানো আজিজুলের সঙ্গে। তিনি বলেন, "স্বৈরাচার সরকার হটিয়ে বিপ্লবী সরকার এনেছি আমরা। তবু আমাদের খোঁজ কেউ নিচ্ছে না। ইউএনও জুলাই আন্দোলনে আহতদের তালিকায় আমাকে অন্তর্ভুক্ত করেছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত জুলাই বিপ্লব ফাউন্ডেশন থেকে ১ লক্ষ টাকা, ইউএনও-এর পক্ষ থেকে ৫ হাজার টাকা সহায়তা পেয়েছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত আমি সরকারি চিকিৎসা সেবার কিছুই পেলাম না।

"ঢাকার ইস্পাহানি চক্ষু হাসপাতালসহ কয়েকটি হাসপাতালে দৌড়াদৌড়ি করে খরচ হয়েছে ৪ লক্ষ টাকা। আমি টাকা চাই না, আমাকে উন্নত চিকিৎসা সেবা দিয়ে দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দেওয়া হোক। আমি পৃথিবীর আলো দেখতে চাই। আমি বেঁচেও যেন পড়ে আছি পরিবারের বোঝা হয়ে।"

পরিবার জানায়, গত ১৮ জুলাই আন্দোলনে অংশ নিয়ে দুই চোখে ও মুখের বিভিন্ন অংশে গুলিবিদ্ধ হন আজিজুল। আহত অবস্থায় প্রথমে তাকে নরসিংদী সদর হাসপাতাল ও পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে স্থানান্তর করা হয় জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে। কিন্তু আজিজুলের দৃষ্টিশক্তি ফিরে আসেনি। এ পর্যন্ত তার চিকিৎসার জন্য যা খরচ করা হয়েছে, সেটা আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুরা জুগিয়েছেন।

আজিজুলের বাবা কামাল মিয়া বলেন, "আমার এই ছেলে পরিবারের একমাত্র অবলম্বন ছিল। কিন্তু বর্তমানে সে ঘরে অন্ধ হয়ে বসে আছে। কোনো লোক আসে না তাকে দেখতে।"

এ বিষয়ে বাঞ্ছারামপুরের ইউএনও ফেরদৌস আরা জানান, "জুলাই অভ্যুত্থানে আহতদের তালিকায় আজিজুলের নাম অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। তাকে আর্থিক সহায়তা করা হয়েছে। আজিজুলের উন্নত চিকিৎসার বিষয়ে আমি আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলবো। তার চিকিৎসায় যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"

এম.কে.

×