দেওয়ালে দেওয়ালে গ্রাফিতি আঁকছেন শিক্ষার্থীরা
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর কিশোরগঞ্জের বিভিন্ন এলাকা দেওয়ালচিত্র বা গ্রাফিতিতে বর্ণিল হয়ে উঠেছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন ভবনের দেওয়াল, সীমানাপ্রাচীরে গ্রাফিতি আঁকছেন শত শত শিক্ষার্থী। তারা নিজেরাই অর্থ জোগাড় করে রং ও আঁকার সরঞ্জাম কিনে মেতে উঠেছেন দেওয়াল পরিষ্কার করে গ্রাফিতি আঁকায়।
সরেজমিনে দেখা যায়, শহরের গুরুদয়াল সরকারি কলেজ, রেলওয়ে স্টেশন, জেলা প্রশাসকের বাসভবন, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর কার্যালয়ের দেওয়ালসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দেওয়ালে ও সীমানাপ্রাচীরে নানা ধরনের স্লোগান ও গ্রাফিতি চোখে পড়েছে। এসব স্লোগানের মধ্যে আছে ‘গাহি সাম্যের গান, যেখানে আসিয়া এক হয়ে গেছে সব বাধা ব্যবধান’, ‘আজ থেকে মুছে ফেলো সংখ্যালঘু তত্ত্ব, সবাই মোরা বাংলাদেশি এটাই চিরসত্য’, ‘মহাকালের সাক্ষী হলো বাংলাদেশের নাম, যুদ্ধ করে জীবন দিয়ে বিজয় নিয়ে এলাম’, ‘বিকল্প কে? আমি, তুমি, আমরা’ ইত্যাদি।
কুড়িগ্রামে দেওয়াল ভরে দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা
স্টাফ রিপোর্টার, কুড়িগ্রাম থেকে জানান, এ যেন নতুন এক বাংলাদেশ। তারুণ্যের জোয়ার চারদিকে। নিজেদের দেশকে ঢেলে সাজাতে কাজও করে যাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। সারাদেশে ছাত্র শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি কুড়িগ্রামেও শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি এবার চোখে পড়ার মতো। তারাও নতুন বাংলাদেশকে কেমন দেখতে চান তা ফুটিয়ে তুলছেন গ্রাফিকে আর দেওয়ালিকায়। সবাই একই কথা বলছে দেশে আর কোনো বৈষম্য থাকবে না।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছ থেকে সেবা পাবে সাধারণ মানুষসহ সকলে। তারা যেন বন্ধু হিসেবে কাজ করে। কোনো সুদ ঘুষ না থাকে তারা যেন সৎ হয়, নিষ্ঠাবান হয়। এই শিক্ষার্থীরা আরও বলছে তারা দেওয়ালে বিভিন্ন ছবি অঙ্কন ও গ্রাফিক্স করে নতুন প্রজন্মকে জানাচ্ছি আমরা দেশকে কত বেশি ভালোবাসি। দেশের জন্য সব করতে পারি।
নেত্রকোনায় ফুটছে গ্রাফিতির সৌন্দর্য
নিজস্ব সংবাদদাতা নেত্রকোনা থেকে জানান, বিবর্ণ দেওয়ালগুলো আর বিবর্ণ নেই। নেই রাজনৈতিক পোস্টারের হিজিবিজি। এখন ঝকঝকে তকতকে দেওয়ালগুলোতে শোভা পাচ্ছে নানা ধরনের গ্রাফিতি। আর এসব গ্রাফিতির মাধ্যমে যেন ভবিষ্যতের স্বপ্ন আঁকছেন তরুণ প্রজন্ম। জেলা শহরের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাসমূহের সীমানা প্রাচীরগুলোর দিকে তাকালেই দেখা যাচ্ছে এমন দৃশ্য।
ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে প্রাণপণে স্বপ্ন এঁকে যাচ্ছেন তারা। বুধবার দুপুরে নেত্রকোনা সরকারি কলেজ, কলেজমাঠ, আঞ্জমান আদর্শ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, মোক্তারপাড়া সেতু, নেত্রকোনা কোর্ট স্টেশনসহ বেশকিছু স্থাপনা ঘুরে বিভিন্ন বিশ^বিদ্যালয়, কলেজ ও স্কুলের শিক্ষার্থীদেরকে এমন গ্রাফিতি আঁকতে দেখা গেছে।
মাদারীপুরে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের চিত্র
নিজস্ব সংবাদদাতা মাদারীপুর থেকে জানান, কোথাও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, নতুন সম্ভাবনা, আবার কোথাও দেখা মিলবে কোটা সংস্কার আন্দোলনে শহীদ আবু সাঈদের প্রতিবাদী কণ্ঠস্বরের দৃশ্য। এমন চিত্র ফুটে উঠেছে দেওয়ালে-দেওয়ালে। মাদারীপুর সরকারি কলেজের ভেতর তরুণ প্রজন্মের একদল শিক্ষার্থী রং- তুলি হাতে ব্যস্ত।
তাদের হাতের রং-তুলির আঁচড়ে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ জেগে উঠেছে। নতুন সূর্যোদয়ের আভায় হিন্দু-মুসলিমের নেই ভেদাভেদ, ফুটিয়ে তোলা হয় এমনও দৃশ্য। শিক্ষার্থীদের দাবি, দীর্ঘদিন ধরে শহরের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দেওয়াল ও অলিগলির দেওয়াল নোংরা হলেও চোখে পড়েনি কারও।
লালমনিরহাটে দেওয়ালে পানি লাগবে পানি
নিজস্ব সংবাদদাতা লালমনিরহাট থেকে জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে মুগ্ধর পানি লাগবে পানিসহ আলোচিত নানা স্লোগান, গুলিবিদ্ধ ছাত্রের মর্মস্পর্শী কথা আর স্মৃতি এখন ফুটে উঠছে লালমনিরহাটের দেওয়ালে দেওয়ালে। রং-তুলির মাধ্যমে তা ফুটিয়ে তুলছেন দেশ কাঁপানো এই আন্দোলনে যুক্ত থাকা শিক্ষার্থীরা।
বুধবার লালমনিরহাটে মিশন মোড়, কালীগঞ্জের উপজেলা পরিষদ চত্বর, হাতীবান্ধার মেডিক্যাল মোড়ে রঙিন সব ছবি আঁকছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মীরা। শিক্ষার্থীরা শুরুতেই সাদা রং দিয়ে পরিষ্কার করেন দেওয়ালগুলো। তারপর ছবি আঁকার মাধ্যমে আন্দোলনের দৃশ্যচিত্র ফুটিয়ে তুলছেন।