ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৯ মে ২০২৫, ২৬ বৈশাখ ১৪৩২

বাঁধের পতিত বাড়ছে অমৌসুমী তরমুজ চাষ 

স্টাফ রিপোর্টার, বাগেরহাট

প্রকাশিত: ১২:৩০, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩

বাঁধের পতিত বাড়ছে অমৌসুমী তরমুজ চাষ 

তরমুজ। ছবি: জনকণ্ঠ

বাগেরহাটে অমৌসুমী তরমুজ চাষ ক্রমশ বাড়ছে। এ বছর জেলায় প্রায় সাড়ে ৪’শ হেক্টর জমিতে অমৌসুমী(অফসিজন) তরমুজ হয়েছে। পতিত বা অব্যবহৃত জমিতে মাত্র ৩-৪ মাসের মধ্যে বাম্পর ফলন হচ্ছে। একই সঙ্গে ভাল দাম পাচ্ছেন চাষিরা। লাভবান হওয়ায় চাষিরা এ তরমুজ চাষে ব্যাপকভাবে ঝুঁকছেন। 

আরও পড়ুন :মরক্কোয় শক্তিশালী ভূমিকম্পে ৩২ শিক্ষার্থীর সবাই নিহত

বাগেরহাটের পাশাপাশি গোপালগঞ্জ, খুলনা, সাতক্ষীরা, পিরোজপুর-সহ উপকূলীয় এ অঞ্চলে অফসিজন তরমুজ চাষ প্রতি বছর বাড়ছে।

সরেজমিনে জেলার সুন্দরবন সংলগ্ন শরণখোলা উপজেলার উত্তর রাজাপুর-আমতলা গ্রামের কৃষক বিমল চন্দ্র মাঝির ক্ষেতে দেখা যায় অমৌসুমী তরমুজের বাম্পার ফলন হয়েছে। যা দূর থেকে দেখলে মনে হবে লাউ বা কুমড়া ঝুলে আছে। কাছে গেলে দেখা যায় বাশ, গুনো ও লাইলোনের সুতোর জালে তৈরি বিশেষ মাচায় রসালো তরমুজ ঝুলছে। 

ছোট, বড় ও মাঝারি আকারের বিভিন্ন রংয়ের তরমুজে দেখলে মন জুড়াবে যে কারও। মাত্র ৩-৪ মাসেই বপন থেকে ফসল উৎপাদন হচ্ছে। অসময়ের এই তরমুজের দামও ভাল। দরিদ্র কৃষক বিমল চন্দ্র মাঝি এ তরমুজ ক্ষেতকে নিয়ে আশার স্বপ্ন বুনছেন।

তিনি বলেন, নিজের জমি-জমা নেই। এক একর জমি বর্গা নিয়ে মাছ ও ধান চাষ করতাম, এতেই মোটামুটি চলে আমাদের সংসার। কৃষি বিভাগের পরামর্শে ঘেরের পাড়ে অফসিজন বা অমৌসুমী তরমুজের চাষ শুরু করি। তরমুজের বিচি, বাস, কাঠ, লাইলোনের সুতোর জাল, গুনা ও শ্রমিক মিলিয়ে ৫০ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। সৃষ্টিকর্তা যে ফল দিয়েছেন, তাতে এক লাখ টাকার উপরে বিক্রি করতে পারব। তরমুজ শেষ হলে, এই মাচায়ই কুমড়ো, লাউসহ অন্যান্য সবজি চাষ করব।

অসময়ে তরমুজ চাষ সম্পর্কে কৃষক বিমল চন্দ্র মাঝি বলেন, এই চাষটি স্বাভাবিক লাউ-কুমরো চাষের মতই, মাটিতে জৈব ও রাসয়নিক সার দিয়ে বিচি রোপন করতে হয়। পরে গোড়ার আগাছা পরিষ্কার করতে হয়। যখন বৃষ্টি থাকে না, তখন পানি দিতে হয়। তেমন খরচ না হলেও, যত্ন করতে হয় অনেক। তবে তরমুজ চাষে আমাদের সবসময় উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা ও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাগণ সহযোগিতা করেছেন। এভাবে কয়েক বছর ভালভাবে চাষ করতে পারলে সংসারে স্বচ্ছলতা আসবে বলে আশা করছি।

বিমল চন্দ্র মাঝির ছেলে বিপুল চন্দ্র মাঝি বলেন, ইতোমধ্যে বিভিন্ন ব্যবসায়ীরা ৬০ টাকা কেজি দরে তরমুজ ক্রয়ের জন্য যোগাযোগ করেছে। আশাকরি দুই-চারদিনের মধ্যেই আমরা বিক্রি শুরু করতে পারব।

শুধু বিমল চন্দ্র মাঝি নয়, ভাল দাম ও চাষাবাদ সহজ হওয়ায় জেলার কচুয়া, ফকিরহাট, মোল্লাহাট, মোড়েলগঞ্জ, চিতলমারী ও সদর উপজেলার কয়েক’শ কৃষক অফসিজন তরমুজ চাষে ঝুঁকছেন। যা প্রতিবছর বাড়ছে। 

কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, জেলার ৪১ হেক্টর জমিতে প্রায় ৪শ কৃষক তরমুজ চাষ করেছেন। আগামী বছরে চাষের জমি ও কৃষক আরও বাড়বে বলে আশা কৃষি বিভাগের।

অসীম কুমার তরুয়া নামের আরেক কৃষক বলেন, ৩৩ শতক জমিতে তরমুজ চাষ করেছি। ফলনও ভাল হয়েছে। যদি সব মাছের ঘেরের পাড় ও উঁচু পতিত জমিতে অফসিজন তরমুজ চাষ করা যায় তাহলে লাভ বেশী হবে।

শরনখোলা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দেবব্রত সরকার বলেন, গোপালগঞ্জ, খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা ও পিরোজপুর কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় অফ সিজন তরমুজ চাষিদের সহযোগিতা করা হচ্ছে। এই চাষিদের প্রশিক্ষণের পাশাপাশি কৃষি উপকরণ দিয়ে সহায়তা করা হচ্ছে যার কারণে চাষিরা তরমুজ চাষে আগ্রহী হয়ে ওঠছে।

শরণখোলা উপজেলার রায়েন্দা ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা হাসিবুল ইসলাম মনি বলেন, আমরা সব সময় মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের সার্বিক পরামর্শ দিয়ে থাকি। আমাদের ইউনিয়নে অফসিজন তরমুজ চাষিদের সব সময় খোঁজ খবর রাখছি। চাষিদের গাছে কখনও কোন সমস্যা বা রোগ ব্যাধি দেখা দিলে, দ্রুত আমরা মাঠে এসে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকি।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, বাগেরহাটের উপ-পরিচালক শঙ্কর কুমার মজুমদার বলেন, আমরা সব সময় কৃষকদের উচ্চমূল্য সম্পন্ন ফসল চাষে উৎসাহ প্রদান করি। এজন্য কারিগরি সহযোগিতাসহ বিভিন্ন পরামর্শও দেওয়া হয়। এই কারণে জেলায় দিন দিন অমৌসুমী তরমুজ চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে প্রায় ৪শ চাষি ৪১ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ করছেন। প্রতি বছর ঘেরের বাঁধে পতিত জমিতে তরমুজসহ অমৌসুমী ফল ও সবজি চাষ বাড়ছে।

 এসআর

×