ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বেলাবতে লালনশিল্পীদের বাদ্যযন্ত্র গুঁড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় গ্রেপ্তার ১

স্টাফ রিপোর্টার, নরসিংদী 

প্রকাশিত: ১৮:২৪, ৯ মে ২০২৩; আপডেট: ১৮:২৮, ৯ মে ২০২৩

বেলাবতে লালনশিল্পীদের বাদ্যযন্ত্র গুঁড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় গ্রেপ্তার ১

গ্রেপ্তার জাহাঙ্গীর শেখ

নরসিংদীর বেলাব উপজেলায় সাধুসঙ্গে আসা লালন সংগীতশিল্পীদের বাদ্যযন্ত্র ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় মামলার প্রধান আসামি পাটুলি ইউনিয়নের বাবলা গ্রামের বাসিন্দা জাহাঙ্গীর শেখ (৩৫) কে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। 

অন্য দুই আসামি হলেন- একই গ্রামের শাহীন শেখ (৩২) ও ফজলু শেখ (৫৮)। 

মামলা দায়ের করেন ভুক্তভোগী লালনশিল্পী খোকন চিশতী। 

এ বিষয়ে বেলাব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তানভীর আহমেদ বলেন, মামলা হওয়ার পরপরই অভিযান চালিয়ে প্রধান আসামি জাহাঙ্গীর শেখকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত অন্য আসামিদেরও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

মামলার বাদী খোকন চিশতী বলেন, সুমন মিয়া নামের এক লালন ভক্তের চল্লিশা আয়োজন উপলক্ষে সাধুসঙ্গ করতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ওই আশ্রমে এসেছিলেন ১০ থেকে ১২ জন লালন সংগীতশিল্পী। রবিবার দুপুরে শিল্পীরা বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে গান করছিলেন। ওই সময় স্থানীয় যুবক জাহাঙ্গীর শেখ মদ্যপ অবস্থায় সেখানে গিয়ে উৎপাত শুরু করে। পরে শিল্পীরা তাকে বাগানের বাইরে বের করে দেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ওই যুবক কিছুক্ষণ পর তার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে হামলা চালিয়ে শিল্পীদের ব্যবহৃত অন্তত ২০টি বাদ্যযন্ত্র ভেঙে গুঁড়িয়ে দেন। গুঁড়িয়ে দেওয়া বাদ্যযন্ত্রগুলোর মধ্যে রয়েছে হারমোনিয়াম, তবলা, একতারা, ডুগি, হাতবাড়া, খমক, দোতারা, সারিন্দা, গিটার ও বাঁশি। এতে প্রায় এক লাখ টাকা মূল্যের যন্ত্রাংশের ক্ষতি সাধিত হয়। এছাড়া আশ্রমে থাকা নগদ ২০ হাজার টাকা ও মোবাইল ফোন নিয়ে যায় হামলাকারীরা। 

বেলাব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তানভীর আহমেদ জানান, ঘটনা জানার পরপরই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ভুক্তভোগী শিল্পীদের সঙ্গে কথা বলেছে পুলিশ। পুলিশের পক্ষ থেকে তাদের মামলা করার পরামর্শ দেওয়া হয়। কিন্তু তারা মামলা করতে চাইছিলেন না। 

পরে গতকাল রাতে ভুক্তভোগী শিল্পী খোকন চিশতী মামলা করতে রাজি হন। জাহাঙ্গীর, শাহীন ও ফজলু নামের তিনজনকে চিনতে পারায় তাদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে মামলায়। মামলা হওয়ার পর রাতেই আসামিদের গ্রেপ্তার অভিযানে নামে পলিশ। পলাতক জাহাঙ্গীরকে গ্রেপ্তার করা হয় প্রযুক্তি ও গোপন তথ্যের ভিত্তিতে, তার বাড়ি সংলগ্ন স্থান থেকে। অন্য আসামিদেরও গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

ড্রাগন বাগানের মালিক ও আশ্রমের তত্ত্বাবধায়ক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, জাহাঙ্গীর শেখ নেশাগ্রস্ত অবস্থায় তার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এই হামলা চালিয়েছেন। তারা শিল্পীদের ব্যবহৃত সব বাদ্যযন্ত্র লাঠি-রড দিয়ে ভেঙে গুঁড়িয়ে দেন। বাদ্যযন্ত্র ভেঙে দেওয়ার ঘটনার বিচার চান তিনি। এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি কোথাও হোক, তারা চান না। 

খোকন চিশতী দুঃখ প্রকাশ করে তিনি বলেন, হামলায় একটি পুরাতন সারিন্দা ভাঙা পড়েছে। ভেঙে দেওয়া আমার ব্যবহৃত সারিন্দাটি ছিল অন্তত ১৫০ বছরের পুরনো। আমি আমার গুরুর কাছ থেকে আশীর্বাদস্বরূপ এটি পেয়েছিলাম। এমন একটি সারিন্দা আমি আর কোথায় পাব? আমাকে মারধর করলেও এত কষ্ট পেতাম না, যতটা এই সারিন্দা হারিয়ে পাচ্ছি।

লালনশিল্পী রনি জাবালী বলেন, একজন শিল্পীর কাছে সব চেয়ে মূল্যবান হচ্ছে তার বাদ্যযন্ত্র। এই বাদ্যযন্ত্রই যখন ভেঙে দেওয়া হয়, তখন সেটা হয়ে যায় আবহমানকালের লোক সংস্কৃতির ওপর সরাসরি আঘাত। দেশে ধর্মান্ধ একটি দল আছে, তারা চায় না আমরা লালনের গান করি। স্থানীয় উগ্র ধর্মান্ধ ব্যক্তিরাই হামলা চালিয়ে আমাদের সব বাদ্যযন্ত্র ভেঙে দিয়েছে। আমরা এর বিচার চাই। 

এ বিষয়ে নরসিংদী পুলিশ সুপার কার্যালয়ে মঙ্গলবার বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) অনির্বাণ চৌধুরী জানান, প্রধান আসামি জাহাঙ্গীরকে গ্রেপ্তারের পর পুলিশ তার হেফাজত থেকে হামলায় ব্যবহৃত লোহার রড ও লাঠি উদ্ধার করেন। মামলার অন্যান্য আসামিদের গ্রেপ্তার পুলিশ তৎপর রয়েছে। 
 

 এসআর

সম্পর্কিত বিষয়:

×