ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

খুলনায় দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে সংগ্রহ করতে হয়

উপকূলে সুপেয় পানির তীব্র সংকট

প্রবীর বিশ্বাস, খুলনা অফিস

প্রকাশিত: ০০:৪৮, ৫ মে ২০২৩

উপকূলে সুপেয় পানির তীব্র সংকট

কয়রার মহারাজপুর ইউনিয়ের আশপাশের গ্রাম থেকে আসা মানুষ খাবার পানি সংগ্রহ করছেন 

বিকেল হতে এখনো কিছুটা বাকি, রোদের প্রতাপও বেশ। কারও কারও দুপুরের খাবার গ্রহণ শেষ। ভাতঘুমের জো নেই। পায়ে হেঁটে যেতে হবে দেড় মাইল দূর। দিতে হবে লাইন। তারপর আবার বাড়ি ফেরা। সন্ধ্যার আগে গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি ঘরে তোলা এবং উঠান-ঘর ঝাড়ু দেওয়া। হিন্দু ধর্মালম্বীদের সন্ধ্যাবাতি দেওয়া। সন্তানের যতœ, রান্নাবান্না, পরিবারের সদস্যদের সামলানো আরও কত কি? এত প্রতিদিনকার বৈকালিক কাজ।

এমন তথ্য মিলল খুলনার পাইকগাছা উপজেলার গড়ইখালী ইউনিয়নের বাশাখালী সংলগ্ন গ্রামগুলোতে। যেখানে ফকির আলম শাহ্ নামের পুকুরের পানি সংগ্রহ করতে আসেন ফকিরাবাদ, শান্তা, কুমখালী, গড়ইখালীসহ আশপাশের গ্রাম ও ইউনিয়নের মানুষ। একটি বেসরকারি সংস্থার বদৌলতে পাইপের মাধ্যমে পানি সংগ্রহের দূরত্ব কিছুটা কমলেও সপ্তাহে পাওয়া যায় মাত্র একদিন।
দেখা গেল বাড়ির বৌ, মা, মেয়ে আবার কখনো পুরুষ সদস্যরা, সকলে যান খাবার পানি সংগ্রহ করতে। কলসি, জগ, বোতল কিংবা ভ্যান, নসিমন বা আলমসাধুতে করে ড্রাম। হেমন্তের শুরু থেকে বর্ষা ঋতুতে ভারি বৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত চলে এই হাড়ভাঙ্গা খাটুনি। এমন পরিস্থিতি শুধু পাইকগাছার ইউনিয়নগুলোতেই নয়, কয়রার দক্ষিণ বেদকাশি, উত্তর বেদকাশি, সদর, মহেশ্বরীপুর, মহারাজপুর, বাগলীসহ বিভিন্ন ইউনিয়ন এবং দাকোপ ও বটিয়াঘাটা উপজেলার উপকূলীয় অঞ্চলের জনপদের।

তাই অনেকেই বাধ্য হয়ে পান করছেন পুকুরের কাদা ও লবণযুক্ত অস্বাস্থ্যকর পানি। এসব অঞ্চলের নলকূপে পানযোগ্য পানি না উঠার কারণে বছরের অন্যান্য সময় বৃষ্টির পানি জমিয়ে রেখে পান করে তারা। পাইকগাছার বাশাখালি গ্রামের মালতি মালাকার বলেন, সাত দিনির জল একদিনি নিতি হয়। পাইপে আমাগে গ্রামের মাথায় একদিন খাওয়ার জল দেয়। কি ঝামেলা তা আপনাগে কয়ে বুঝোতি পারবো না।
কয়রার মহারাজপুর ইউনিয়নের রাবেয়া স্মৃতি জানান, তিন কিলোমিটার হাটে পানি নিতি আসলাম। দিনে তিন চার কলস পানি লাগে। মাইয়েরে নিয়ে আসি। তাড়াতাড়ি যাতি হবে, বাড়ি মেলা কাজ।  পাইকগাছার বাসিন্দা মো. আব্দুল আজিজ জানান, লোনাপানি গবেষণা কেন্দ্রের পাঁচটি বড় পুকুর রয়েছে। যেখানে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করা হয়। দুইটি এখন শুকনা। পৌরসভা, সরল, শিববাটি ও বাটিখালী এলাকাসহ কয়েক কিলোমিটার দূর থেকে এসে ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পানি নেয় মানুষ এখান থেকে। কোথাও কোথাও আবার টাকা দিয়ে কলসি ভরতে হয়।
অন্যদিকে খুলনা মহানগরীতেও রয়েছে পানির সংকট। শেখপাড়া এলাকার ব্যবসায়ী তোবারক হোসেন বলেন, অনেক নলকূপে পানি ওঠে না। যদিও ওঠে তাহলে চাপতে চাপতে জান শেষ।
খুলনা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর নির্বাহী প্রকৌশলী আকমল হোসেন জানান, সুপেয় পানির সংকটের মূলে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব, অনাবৃষ্টির ফলে প্রাকৃতিক উৎসগুলো শুকিয়ে যাওয়া, লবণাক্ততা বৃদ্ধি ও বৃক্ষনিধন। এছাড়া আমরা ভূগর্ভস্থ পানি পাই ২০ থেকে ২২ ফুট নিচে, বর্তমানে তা নেমে দাঁড়িয়েছে ৩০ থেকে ৩৫ ফুটের নিচে। তাই জোর দিচ্ছি ভূ-উপরিস্থ পানি ও প্রাকৃতিক উৎস বৃষ্টির পানিতে। 
খুলনা লবণাক্ততা ব্যবস্থাপনা ও গবেষণা কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক অমরেন্দ্র নাথ বিশ্বাস বলেন, এক দশমিক পাঁচ ডেসিসিমেন্ট/মিটার (ডিএস) লবণাক্ত পানি পানযোগ্য। ফসলের জন্য তিন ডিএস পার মিটার লবণাক্ততা সহনশীল। এছাড়া ফসলের জন্য মাটিতে থাকতে হবে সর্বোচ্চ চার। কিন্তু বর্তমানে রূপসা নদীর পানিতে ২০ থেকে ২২ এবং উপকূলের মাটিতে ১২ থেকে ১৪ ডিএস পার মিটার লবণ রয়েছে। যা ভয়াবহ। যেমন বেশি লবণাক্ততার কারণে এ বছর খুলনার তরমুজের আকৃতি ছোট হয়েছে।
খুলনা আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবহাওয়াবিদ আমিরুল আজাদ জানান, ২০২১ সালে বৃষ্টিপাত হয়েছিল এক হাজার ৯৭৪ মিলিমিটার। সেখানে ২০২২ সালে মোট বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে মাত্র এক হাজার ২৯৯ মিলিমিটার। আর এ বছরও জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে কোনো বৃষ্টি হয়নি। মার্চে বৃষ্টি হয়েছে ৯৪ মিলিমিটার এবং এপ্রিলে মাত্র ৪৩ মিলিমিটার।
যশোরে পৌরসভা ঘেরাও
স্টাফ রিপোর্টার যশোর অফিস থেকে জানান, পানি সরবরাহ নিশ্চিতকরণ, রাস্তা, ড্রেন সংস্কার ও নতুন সড়ক নির্মাণের দাবিতে যশোর পৌরসভা ঘেরাও করে বিক্ষোভ করেছে ৭ নম্বর ওয়ার্ডবাসী। বৃহস্পতিবার দুপুরে সচেতন এলাকাবাসীর ব্যানারে এ কর্মসূচি পালন করা হয়। এলাকাবাসী বলেন, ‘পৌরসভা বিল নিলেও নিয়মিত পানি সরবরাহ করছে না। গত মার্চ ২৩ থেকে ৭ নম্বর ওয়ার্ডে পানি সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে। পাশাপাশি চোপদারপাড়া সড়ক, জমাদারপাড়া সড়ক, কবরখানা সড়ক, শহীদ মাহফুজ সড়কসহ সকল বাইলেনসমূহ চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এছাড়া ড্রেনেজ সংস্কারের অভাবে সামান্য বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে।

গত ২১ মার্চ সমস্যা সমাধানে স্মারকলিপি দেওয়া হলেও পৌর কর্তৃপক্ষ কোনো উদ্যোগ নেয়নি। যে কারণে তারা পৌরসভা ঘেরাও করে বিক্ষোভ করেছে। দাবি আদায় না হলে পৌরকরসহ সকল ধরনের সার্ভিস বিল বন্ধ করে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয় বিক্ষোভ কর্মসূচি থেকে। এর আগে ওয়ার্ডটির বাসিন্দারা বিভিন্ন দাবি সম্মিলিত প্লেকার্ড নিয়ে শহরের তালতলা থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। শহরের বিভিন্ন শহর প্রদক্ষিণ করে পৌর চত্বরে এসে জড়ো হন। 
স্থানীয় বাসিন্দা ও আন্দোলনকারী নেতা জিল্লুর রহমান ভিটু বলেন, ‘যশোর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে শহরে প্রবেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বাইপাস সড়ক চোপদারপাড়া। দুই যুগের মধ্যে এই সড়ক সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নেয়নি পৌর কর্তৃপক্ষ। 
পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী শরীফ হাসান বলেন, ‘অনেক রাস্তাগুলো সংস্কারের জন্য টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে। দ্রুতই সমস্যার সমাধান হবে।

×