
তুষারের স্বজনদের আহাজারি। ছবি: জনকণ্ঠ
সৌদি আরবে ওমরাহ করতে গিয়ে পথে বাস দুর্ঘটনায় এই পর্যন্ত বাংলাদেশি ১৮ জন নিহত হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে নিহত তুষার মজুমদারের বাড়ি চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলায়। মৃত্যুর সংবাদ জানার পর থেকেই চলছে তার বাড়িতে শোকের মাতম।
পরিবারের একমাত্র বড় ছেলে তুষার। তার মৃত্যু পরিবারের স্বপ্ন ভেঙে চুরমার। শেষ বারের মতো সন্তানের মরদেহ হলেও দেখতে চান বাবা-মা।
বৃহস্পতিবার (৩০ মার্চ) দুপুরে উপজেলার খাদেরগাঁও ইউনিয়নের দক্ষিণ ঘিলাতলী গ্রামের মজুমদার বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে তুষারের মা-বাবাসহ আত্মীয় স্বজনদের আহাজারি। বাড়ির লোকজন সব স্তব্ধ হয়ে পড়েছে। পরিবারের বড় সন্তান হিসেবে সকলের আদরের ছিলেন তুষার। মা-বাবা, ছোট এক ভাই এক বোন নিয়ে ছিল তাদের পরিবার। ভাঙা একটি ঘরেই থাকেন তারা।
তুষারের মা মনোয়ারা বেগম ছেলের নাম ধরেই চিৎকার করে কাঁদছেন। ঘরের বাইরে মাটিতে বসে কাঁদতে দেখা যায় পিতা মনির হোসেন মজুমদারকে। পিতাকে জড়িয়ে ভাই ভাই করে কাঁদছেন তুষারের ছোট বোন ও ভাই। এলাকার বিভিন্ন স্থান থেকে মৃত্যুর সংবাদ জানতে এসেছেন স্বজনরা। স্বজনদের দেখে তুষারের মা জড়িয়ে ধরছেন আর চিৎকার করে কাঁদছেন।
তুষারের বাবা মনির হোসেন মজুমদার কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, আমি দীর্ঘদিন নানা রোগে অসুস্থ। অটোরিকশা চালিয়ে সংসার চালাতাম। অটোরিকশাও চোরে নিয়ে গেছে। আমার সন্তানের উপার্জনেই চলছিল সংসার। আবার ছেলে ওমরাহ যাওয়ার আগে বলেছে, ওমরাহ শেষ করে এসে ফোন দিবে এবং বাড়িতে টাকা পাঠাবে। ফোন করে নানা পরিকল্পনার কথা বলত আমার ছেলে। সব কিছুই শেষ হয়ে গেলো।
মা মনোয়ারা বেগম বলেন, গত ১১ মাস আগে আমার ছেলে সৌদিতে গেছে। প্রথমে ভাল কাজ পায়নি। কিছুদিন আগে একটি কোম্পানিতে চাকরি পেয়েছে। তারাই ওমরাহ করার জন্য পঠিয়েছে। তার বাবা অসুস্থ থাকায় বিভিন্ন সমিতি ও আত্মীয় স্বজনের কাছ থেকে ৬ লাখ টাকা ঋণ করে সৌদিতে পাঠিয়েছি। কীভাবে ঋণ পরিশোধ করব বুঝতে পারছি না। সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি, আমার সন্তানের মরদেহ যেন দেশে আনার ব্যবস্থা করে এবং আমাদেরকে আর্থিকভাবে সহযেগিতা করে।
মজুমদার বাড়ির বাসিন্দা জাহাঙ্গীর মজুমদার বলেন, তুষার খুবই ভাল ছিল। সে এসএসসি পাশ করার পরেই সংসারের হাল ধরে। স্থানীয় একটি মুদি দোকানে কাজ করত। তার বাবা-মা ঋণ করে সৌদিতে পাঠিয়েছে। দুর্ঘটনায় তাদের সব শেষ হয়ে গেছে। সরকার যদি তাদের পাশে না দাঁড়ায় পরিবারটি খুবই ক্ষতিগ্রস্থ হবে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. মোস্তফা খন্দকার বলেন, শুধমাত্র জনপ্রতিনিধি হিসেবে না, প্রতিবেশী হিসেব আমি বলব, সরকার যেন তুষারের মরদেহ দেশে আনার ব্যবস্থা করে এবং ঋণগ্রস্থ এই পরিবারের প্রতি সরকারের দৃষ্টি থাকে। ইউনিয়ন পরিষদসহ আমাদের অবস্থান থেকে সব ধরনের সহযোগিতা থাকবে।
এসআর