ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

শরীরে আঘাতের চিহ্ন নেই ॥ ঘটনা নিয়ে রহস্য

ফতুল্লায় মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা করে টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার লুট

স্টাফ রিপোর্টার, নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত: ০০:০৮, ২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

ফতুল্লায় মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা করে টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার লুট

ফতুল্লায় বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হালিম (ইনসেটে) হত্যার ঘটনায় ছেলে মাসুদের আহাজারি

ফতুল্লার এনায়েতনগর ইউনিয়নের মাওলাবাজার এলাকায় একটি বাড়িতে ডাকাতদলের হাতে আব্দুল হালিম (৭২) নামে এক বীর মুক্তিযোদ্ধা নিহত হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। পরে তার বাড়ি থেকে নগদ ২০ লাখ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার লুট করে নিয়ে যায়। মঙ্গলবার দিবাগত রাত আনুমানিক সাড়ে ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় অপর একটি কক্ষে নিহতের ছেলে হাফেজ মো. মাসুদকে হাত, পা ও মুখ বেঁধে রাখে ডাকাতদল। খবর পেয়ে আশপাশের শত শত লোক ওই বাড়িতে ভিড় করেন।

এ সময় এ বিষয়ে অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন। বুধবার সকালে নিহতের লাশ উদ্ধার করে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়। নিহতের স্বজনরা জানায়, ফতুল্লার এনায়েতনগর ইউনিয়নের মাওলাবাজার এলাকায় নিজেদের বাড়িতে ঘটনার দিন রাতে বাবা আব্দুল হালিম ও ছেলে হাফেজ মো. মাসুদ ছিলেন। পরিবারের অন্য সদস্যরা বেড়াতে যান। রাত এগারোটার পর বাবা-ছেলে দুজন ঘুমিয়ে পড়েন। নিহতের ছেলে মাসুদ জানান, রাত আনুমানিক সাড়ে বারোটার দিকে ঘুমন্ত অবস্থায় তিনজন তার হাত, পা ও মুখ বেঁধে মারধর করতে থাকে।

তারা পাশের ঘরের মধ্যে বাবাকেও মারধর করে। পরে ঘরে থাকা ২০ লাখ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার লুট করে নিয়ে যায়। পাশের ফ্ল্যাটের লোকজন আমার গোঙানি শুনে ঘরে ঢুকে আমার হাত, পা, চোখের বাঁধন খুলে দেয়। 
তখন গিয়ে দেখি বাবা নড়াচড়া করছেন না। খবর পেয়ে বুধবার সকালে ঘটনাস্থলে আসে ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশ। পরে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে।
ফতুল্লা মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) হুমায়ূন কবির জানান, বাইরে থেকে কেউ কীভাবে ঘরে ঢুকেছে তা ধারণা করা যাচ্ছে না। কারণ বাইরে থেকে ভেতরে ঢোকার কোনো আলামত প্রাথমিকভাবে পাওয়া যায়নি। বাড়িতে চারটি সিসিটিভি ক্যামেরা থাকলেও মেশিন থেকে হার্ডড্রাইভ খুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। মরদেহ নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের মর্গে রাখা আছে। ময়না তদন্তের পর মৃত্যুর কারণ জানা যাবে।
নিহতের ছোট মেয়ে নুরুন্নেছা বলেন, রাত আড়াইটার দিকে ভাড়াটিয়াদের মাধ্যমে ডাকাতির ঘটনা জানতে পেরে বাড়িতে আসি। বাড়িতে কাজ করানোর কথা ছিল। সে কারণে মঙ্গলবার ব্যাংক থেকে ত্রিশ লাখ টাকা তোলা হয়েছিল বলেও জানান তিনি। বাড়ির ভাড়াটিয়া মাহিনূর বেগম বলেন, রাত দুইটার দিকে শব্দ পেয়ে ঘুম ভাঙলে স্বামীকে ডেকে তোলেন। পরে বাড়িওয়ালার ফ্ল্যাটের প্রধান ফটক খোলা দেখতে পেয়ে ভেতরে ঢোকেন। ঘরের দুটি দরজা বাইরে থেকে ছিটকিনি আটকানো ছিল। বাইরের ছিটকিনি খুলে গামছা দিয়ে বাড়িওয়ালার ছেলের হাত, পা ও মুখ বাঁধা অবস্থায় দেখতে পাই। পরে পাশের ঘরে গিয়ে বাড়িওয়ালার নিথর দেহ দেখতে পাই।
ফতুল্লা মডেল থানার ওসি মোহাম্মদ রিজাউল হক বলেন, নিহতের এক ছেলে দুই মেয়ে। মেয়েরা স্বামীর বাড়ি থাকেন। ছেলের পরিবারের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হালিম নিজ বাড়িতে থাকেন। ঘটনার সময় ছেলে ও আব্দুল হালিম ছাড়া কেউ বাড়িতে ছিলেন না। তিনি বলেন, বাড়ির লোকজন প্রথমে বলেছিল ৩০ লাখ টাকা লুট হয়েছে। পরে বলছে ২০ লাখ টাকা, আবারও পরে বলে ১০ লাখ টাকা লুট হয়েছে। ঘটনাটি রহস্যজনক মনে হচ্ছে। গুরুত্ব সহকারে তদন্ত চলছে। পরে বিস্তারিত জানা যাবে। এ ঘটনায় এখনো কেউ গ্রেপ্তার হয়নি।
নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল সাংবাদিকদের বলেন, আমরা তদন্ত করছি, তদন্ত করে প্রকৃত ঘটনা তুলে ধরব। 

×