
..
আগামী জুন মাসের মধ্যে বিশ্বব্যাংক-আইএমএফের কাছে প্রায় ২০০ কোটি ডলারের ঋণ সহায়তা চাওয়া হবে। এর মধ্যে আইএমএফের ঋণের দুই কিস্তি ১৪০ কোটি ডলার এবং বিশ্বব্যাংকের কাছে প্রতিশ্রুত বাজেট সহায়তার ৫০ কোটি ডলার রয়েছে। এ ছাড়া চলমান অন্যান্য প্রকল্পে বিশ্বব্যাংক যাতে ঋণ সহায়তা বাড়ায় সেই বিষয়টির ওপরও জোর দিচ্ছে সরকার।
আজ সোমবার থেকে যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে বিশ্বব্যাংক-আইএমএফ বসন্তকালীন বৈঠক (২১-২৬ এপ্রিল) শুরু হচ্ছে। বৈঠকে অংশগ্রহণ করতে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ ইতোমধ্যে ঢাকা ত্যাগ করেছেন। তাঁর সঙ্গে ওই বৈঠকে অংশগ্রহণ করবেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান খান, ইআরডি সচিব মো. শাহরিয়ার কাদের সিদ্দিকী ও অর্থ বিভাগের সচিব খায়রুজ্জামান মজুমদার এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে জুনের মধ্যে প্রত্যাশিত ঋণের দুই কিস্তি ১৪০ কোটি ডলার পাওয়ার বিষয়টি এখনো নিশ্চিত করেনি সংস্থাটি। সম্প্রতি ঋণের কিস্তি নিয়ে আলোচনা করতে আইএমএফ মিশন প্রায় দু’সপ্তাহ বাংলাদেশে অবস্থান করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক, এনবিআর, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়সহ সরকারের অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করে। কিন্তু সংস্থাটি থেকে ইতোপূর্বে যেসব শর্ত দিয়েছিল সেগুলো যথাযথভাবে পূরণ না হওয়ায় কিছুটা অসন্তোষ রয়েছে আইএমএফের। বিশেষ করে রাজস্ব আয়ের ভালো প্রবৃদ্ধি না হওয়া, বিনিময় হার বাজারভিত্তিক না হওয়া, ভর্তুকি না কমা এবং ব্যাংক খাতের আশানুরূপ উন্নতি না হওয়ার বিষয়টি আইএমএফের নজরে এসেছে। ফলে মিশন পরবর্তী দুই কিস্তির অর্থ পাওয়ার বিষয়ে চূড়ান্ত মতামত দেয়নি। তবে আইএমএফ বলেছে, এ বিষয়ে আলোচনা আরও চলবে এবং সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে দুই কিস্তির অর্থ পাওয়া যেতে পারে আগামী জুনের শেষদিকে। তবে বাংলাদেশের জনগণ ও সরকারকে সহযোগিতা করতে চাই- একথা উল্লেখ করে আইএমএফ মিশন প্রধান ক্রিস পাপাজর্জিও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠেয় আইএমএফ-বিশ্বব্যাংকের বসন্তকালীন বৈঠকে এ বিষয়ে আরও আলোচনা হবে। সেখানেই ঋণের কিস্তি পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা হবে। তবে এর আগে বাংলাদেশ অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টার কাছে শর্তপূরণের বিষয়গুলো জানতে চাইবে আইএমএফ।
এ কারণে এবারের সফরে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বেশ প্রস্তুতি নিয়েই ওয়াশিংটন সফরে গেছেন বলে জানিয়েছেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। তাঁরা বলছেন, আইএমএফ ঋণের ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণের দুই কিস্তি প্রায় ১৫০ কোটি ডলার। বিপুল পরিমাণ এই অর্থছাড় না করলে দেশের অর্থনীতিতে কিছুটা ধাক্কা তো লাগবেই। আর এ কারণেই কিস্তি পাওয়ার বিষয়টি এবার নিশ্চিত করতে চায় সরকার। এ পর্যন্ত গত বছরের জুন অবধি আইএমএফ তিন কিস্তিতে মোট ২৩০ কোটি ডলার ছাড় করেছে, যা মোট প্রতিশ্রুত অর্থের অর্ধেক। বাকি কিস্তিগুলোও সঠিক সময়ে পাওয়ার ব্যাপারে চেষ্টা করা হচ্ছে। সেলক্ষ্যে কি কি কারণে উল্লিখিত চারশর্ত পূরণ ঠিকভাবে পূরণ হয়নি সেই বিষয়ে বসন্তকালীন বৈঠকে খোলামেলা আলোচনা হবে। এদিকে, ওয়াশিংটনের উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগের আগে অর্থ উপদেষ্টা ঋণের কিস্তি পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলেন। বিশ্বব্যাংকের কাছে প্রতিশ্রুত বাজেট সহায়তার বাকি ৫০০ মিলিয়ন বা ৫০ কোটি ডলার দ্রুত ছাড় করার অনুরোধ জানাবে বাংলাদেশ। পাশাপাশি জুলাই থেকে শুরু হতে যাওয়া সংস্থাটির তিন বছর মেয়াদি নতুন সহজ শর্তের ঋণ কর্মসূচির আওতায় বাড়তি ঋণও চাওয়া হবে। প্রতিশ্রুত অর্থ দ্রুত ছাড় করার অনুরোধের পাশাপাশি বাংলাদেশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিনির্ভর অবকাঠামো প্রকল্প, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও মানব উন্নয়ন প্রকল্পে বাড়তি অর্থায়ন চাইবে বলে জানিয়েছেন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) কর্মকর্তারা। এ ছাড়া প্রস্তাবিত বে টার্মিনাল গভীর সমুদ্র প্রকল্পের জন্য সামুদ্রিক অবকাঠামো গড়ে তুলতে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে ৬৫০ মিলিয়ন ডলারের ঋণ চুক্তি স্বাক্ষর হওয়ার কথা রয়েছে। এ ছাড়া আলোচনায় ঢাকার চারপাশের নদী রক্ষায় বিশ্বব্যাংকের ১০০ কোটি ডলারের প্রতিশ্রুতিও গুরুত্ব পাবে। আলোচনা সন্তোষজনক হলে অক্টোবরের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষর হতে পারে। বিশ্বব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, ৫১টি চলমান প্রকল্পে মোট আইডিএ (ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশন) প্রতিশ্রুতি ১৪.৫ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে ৯.২ বিলিয়ন ডলার এখনো ছাড় করা হয়নি।
বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে আলোচনার পাশাপাশি বাংলাদেশের প্রতিনিধিদের মার্কিন ট্রেজারি বিভাগ ও ফেডারেল রিজার্ভ কর্মকর্তাদের সঙ্গেও বৈঠক করার কথা রয়েছে। এ প্রসঙ্গে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, বাংলাদেশের জন্য আইডিএ বরাদ্দ বাড়ানোর বিষয়টি নির্ভর করে কান্ট্রি পলিসি অ্যান্ড ইন্সটিটিউশনাল অ্যাসেসমেন্ট-এ (সিপিআইএ) বাংলাদেশ কেমন করছে, তার ওপর। সিপিআইএর ১৬টি গুরুত্বপূর্ণ সূচক রয়েছে। বাংলাদেশ যদি স্কোর বাড়াতে পারে, বিশেষ করে সুশাসনের ক্ষেত্রে, তাহলে দেশের বরাদ্দ বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সে কারণে আলোচনায় বাংলাদেশ সে ধরনের সংস্কারের বিষয় আনতে পারে। ওয়াশিংটনে সম্মেলন শেষে ২৯ এপ্রিল অর্থ উপদেষ্টার নেতৃত্বে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের ঢাকায় ফেরার কথা রয়েছে।