ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

গত মাসে দিনে হাজার কোটি

মোবাইল ব্যাঙ্কিংয়ে লেনদেন বাড়ছে

প্রকাশিত: ০৬:০৩, ২৫ জুলাই ২০১৭

মোবাইল ব্যাঙ্কিংয়ে লেনদেন বাড়ছে

রহিম শেখ ॥ মোবাইল ব্যাংকিং সেবার মাধ্যমে আর্থিক লেনদেন ক্রমেই বাড়ছে। গত মাসে প্রতিদিন গড়ে ১ হাজার কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে এই সেবার মাধ্যমে। উৎসবের ধাক্কায় এক মাসের ব্যবধানে এই লেনদেনের পরিমাণ বেড়েছে ১৮ শতাংশেরও বেশি। এছাড়া গত মাসে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মীদের বেতন-ভাতা পরিশোধের হার বেড়েছে প্রায় ৫৯ শতাংশ। এদিকে সর্বশেষ হিসাবমতে, দেশে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের গ্রাহক সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৫ কোটি ৩৭ লাখ। এক মাসের ব্যবধানে সক্রিয় হিসাবের সংখ্যা প্রায় ২৮ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ কোটি ৭৪ লাখ। জানা গেছে, দ্রুততম সময়ে এক স্থান হতে অন্য স্থানে টাকা পাঠানোর অন্যতম জনপ্রিয় মাধ্যম মোবাইল ব্যাংকিং। বর্তমানে এ সেবা ব্যবহার করেই মানুষ তাদের পরিবার পরিজন ও নিকটাত্মীয়ের কাছে বেশি টাকা পাঠাচ্ছেন। ঈদ-উল-ফিতর ও রমজান উপলক্ষে গত জুন মাসে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে লেনদেন হয়েছে ৩০ হাজার কোটি টাকা। ওই মাসে গড়ে প্রতিদিন লেনদেন হয়েছে ১ হাজার কোটি টাকা। মূলত ঈদ এলেই আর্থিক লেনদেন বাড়ে কয়েক গুণ। গ্রামের বাড়িতে ঈদের কেনাকাটার জন্য টাকা পাঠানো, এমনকি ফিতরার টাকাও পাঠিয়েছেন অনেকে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে। মার্কেটে কেনাকাটা করতে গিয়ে কিছু টাকার ঘাটতি পড়লে সঙ্গে সঙ্গে বন্ধু বা পরিবারের অন্য কোন সদস্যকে ফোন করে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা ধার নিয়ে প্রয়োজন মিটিয়েছেন অনেকে। তা ছাড়া মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে কেনাকাটা করে ক্যাশ ব্যাক বা টাকা ফেরতও পেয়েছেন অনেক ক্রেতা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফার্মগেট এলাকার বিকাশের এজেন্ট হাবিবুর রহমান জানান, ঈদের কেনাকাটার পাশাপাশি মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে এবার ফিতরার টাকা গ্রামের পাঠিয়েছেন অনেকে। এজন্য লেনদেন বেড়েছে কয়েকগুণ। বিকাশের মুখপাত্র জাহেদুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, প্রতিবারের ন্যায় এবারও রাজধানীর নামীদামী ব্র্যান্ডের পোশাকের শোরুমগুলোতে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে কেনাকাটার বিল পরিশোধের ব্যবস্থা ছিল। এতে সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ ক্যাশ ব্যাক দেয়া হয়েছে। ফলে ক্রেতাদের আগ্রহে মোবাইলে লেনদেন বেড়েছে। এ বিষয়ে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের এমডি আবুল কাশেম মোঃ শিরিন বলেন, গত ঈদে রকেটের মাধ্যমে লেনদেন বেড়েছে প্রায় ৫০ শতাংশ। গতবারের ঈদের লেনদেন প্রবৃদ্ধির থেকেও এবারের ঈদে লেনদেন প্রবৃদ্ধির হার বেশি। গ্রাহকদের মধ্যে রকেটের ওপর আস্থা বাড়ার কারণেই এমটা হচ্ছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র শুভঙ্কর সাহা জনকণ্ঠকে বলেন, গত কয়েক বছর ধরে যে কোন উৎসবেই মোবাইল ব্যাংকিংয়ে লেনদেন বাড়ছে। এই লেনদেনের পরিসীমা অদূর ভবিষ্যতে আরও বাড়বে বলে তিনি জানান। শুভঙ্কর সাহা বলেন, বর্তমানে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে টাকা পাঠাতে ২ শতাংশ হারে চার্জ কাটা হয়। এটা অনেক বেশি। কীভাবে এটা কমানো যায় এ বিষয়ে ইতোমধ্যে বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা যায়, দেশে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের গ্রাহক সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৫ কোটি ৩৭ লাখ। এক মাসের ব্যবধানে সক্রিয় হিসাবের সংখ্যা প্রায় ২৮ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ কোটি ৭৪ লাখ। গত মে মাসে মোবাইল ব্যাংকিং সেবার আওতায় খোলা হিসাবের মধ্যে সক্রিয় হিসাব ছিল দুই কোটি ১৪ লাখ। রূপালী ব্যাংক ও শিওর ক্যাশের মোবাইল ব্যাংকিং সেবার আওতায় প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা মায়েদের মোবাইল ব্যাংকিং হিসাবে পাঠানোর কার্যক্রম গত মার্চ থেকে শুরু হওয়ার পরপরই মোবাইল ব্যাংকিং সেবার আওতায় নতুন করে এক কোটি সক্রিয় হিসাব যোগ হয়। জানা গেছে, নিয়ম অনুযায়ী, কোন এ্যাকাউন্ট থেকে টানা তিন মাস কোন ধরনের লেনদেন না হলে তা ইন-এ্যাকটিভ বা নিষ্ক্রিয় এ্যাকাউন্ট হিসেবে বিবেচিত হয়। আর তিন মাসের মধ্যে একটি লেনদেন হলেই তা সক্রিয় হিসেবে বিবেচিত। অবশ্য বড় কোন অনিয়ম না পাওয়া গেলে এ্যাকাউন্ট বন্ধ করে না ব্যাংক। প্রতিবেদনে দেখা যায়, জুন মাস শেষে ব্যাংকগুলোর মনোনীত এজেন্টের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৫৮ হাজার ৫৭০ জন। মে মাস পর্যন্ত এজেন্টর সংখ্যা ছিল ৭ লাখ ৪৬ হাজার ৪৭৫ জন। ফলে এক মাসে এজেন্ট বেড়েছে ১ দশমিক ৬২ শতাংশ। প্রতিবেদনে দেখা যায়, জুন মাসে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে ক্যাশ ইন ট্রানজেকশন হয়েছে ১২ হাজার ৩৩৬ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। এ সময়ে ক্যাশ আউট ট্রানজেকশন হয়েছে ১১ হাজার ৪২৭ কোটি ১৭ লাখ টাকা। জুন মাসে ব্যক্তি থেকে ব্যক্তি পর্যায়ে ট্রানজেকশন হয়েছে ৪ হাজার ৩৭৪ কোটি ১৫ লাখ টাকা। মোবাইল ব্যাংকিং সেবায় মে মাসের তুলনায় গত মাসে প্রবাসীরা তাদের কষ্টার্জিত অর্থ পাঠিয়েছেন ৯ দশমিক ৯২ শতাংশ বা ৯ কোটি ৩১ লাখ টাকা। অন্যদিকে এক মাসের ব্যবধানে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে বেতন পরিশোধের হার বেড়েছে প্রায় ৫৯ শতাংশ। জুন মাসে এই মাধ্যমে বেতন পরিশোধ করা হয়েছে ৬৬৬ কোটি ১০ লাখ টাকা। গ্যাস-বিদ্যুতসহ মোবাইল ব্যাংকিং সেবায় গত মাসে ইউটিলিটি বিল পরিশোধ করা হয়েছে ২৩২ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। আগের মাসের তুলনায় জুন মাসে অন্যান্য বিল বাবদ লেনদেন ৯১ দশমিক ৭৭ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৬৩ কোটি ১৪ লাখ টাকা। প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে দেশের ১৯টি ব্যাংক মোবাইল ব্যাংকিং করার অনুমোদন পেলেও ১৭টি ব্যাংক বর্তমানে মোবাইল ব্যাংকিং চালু করেছে। এর মধ্যে ব্র্যাক ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ‘বিকাশ’ এবং ডাচ্ বাংলা ব্যাংকের ‘রকেট’ মোবাইল ব্যাংকিং এ সেবায় এগিয়ে রয়েছে।
×