ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

চলছে জরিপ

দারিদ্র্য কমেছে ॥ আগামী বছরের মধ্যে দেশ হবে ভিক্ষুকমুক্ত

প্রকাশিত: ০৫:১৩, ৪ এপ্রিল ২০১৭

দারিদ্র্য কমেছে ॥ আগামী বছরের মধ্যে দেশ হবে ভিক্ষুকমুক্ত

সমুদ্র হক ॥ দারিদ্র্যের হার কমে যাওয়ার পাশপাশি ভিক্ষাবৃত্তি কমে গেছে। দেশকে আগামী বছরের মধ্যে ভিক্ষুকমুক্ত করার লক্ষ্যে সরকার নানামুখী কর্মসূচী নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। পাইলট প্রকল্পের আওতায় দেশে প্রথম ভিক্ষুকমুক্ত জেলা হিসেবে পরিচিত পেয়েছে দক্ষিণাঞ্চলের নড়াইল জেলা। উত্তরাঞ্চলের বগুড়া জেলা ইতোমধ্যে ভিক্ষুকমুক্ত করতে বহুমুখী পদক্ষেপ নিয়ে অনেক দূর এগিয়ে গেছে। বগুড়ার জেলা প্রশাসক আশরাফ উদ্দিন আশা প্রকাশ করেছেন, নির্ধারিত সময়ের আগেই জেলা ভিক্ষুকমুক্ত হবে। ভিক্ষুকমুক্ত করতে বিভিন্ন কর্মসূচীর অগ্রগতি এবং নানা উদ্যোগে আশা করা হয়েছে নড়াইলের পরই বগুড়া ভিক্ষুকমুক্তের তালিকায় উঠতে পারবে। দেশকে ভিক্ষুকমুক্ত করতে প্রতিটি উপজেলায় ভিক্ষুক জরিপের কাজ চলছে। প্রাথমিক তালিকা যাচাই-বাছাই করে শীঘ্রই তা চূড়ান্ত করা হবে। ভিক্ষাবৃত্তি বন্ধের আওতায় জীবিকার ব্যবস্থা করা হবে। ইতোমধ্যে দেশজুড়ে একটি বাড়ি একটি খামার, গুচ্ছগ্রাম প্রকল্প, জেলা পরিষদ, পৌরসভার বিভিন্ন কর্মসূচী, সরকারের গৃহীত নানামুখী প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। এসব প্রকল্পের পাশাপাশি ভিক্ষুকদের পুনর্বাসনে বেসরকারী সংস্থাগুলো কর্মসূচী নিচ্ছে। ভিক্ষাবৃত্তি বন্ধে সরকার প্রতিটি জেলার সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্স করে গৃহীত পদক্ষেপগুলো গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরে তা বাস্তবায়নের রূপরেখা দিচ্ছে। জাতিসংঘ ঘোষিত সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্টে গোলের (এসডিজি) বেশ কয়েকটি টার্গেট পূরণে দেশ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার পর রূপকল্প-২০২১-এর আওতায় মধ্যম আয়ের দিকে ধাবিত হচ্ছে দেশ। আশা করা হয়েছে, ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে। মাথাপিছু জাতীয় আয় ২০০৯ সালে ছিল ৭৫২ মার্কিন ডলার। বর্তমানে মাথাপিছু জাতীয় আয় ১ হাজার ৪৬৬ মার্কিন ডলার। মধ্যম আয়ের দেশের জন্য প্রয়োজন মাথাপিছু জাতীয় আয় ১ হাজার ৫০০ মার্কিন ডলার। দরিদ্রতার হার ২০০৯ সালে যেখানে ছিল ৪০ শতাংশ, বর্তমানে এই হার ২৪ শতাংশে নেমে এসেছে। অতি দরিদ্রতার হার ১২ দশমিক ৯ শতাংশ। এই অতি দরিদ্রতার হারের মধ্যে রয়েছে ভিক্ষুকরা। ভিক্ষাবৃত্তি যে দিনে দিনে কমে গেছে তার প্রমাণও এখন মেলে। উত্তরাঞ্চলের মধ্য নগরী বগুড়ায় বছর তিনেক আগেও প্রতিটি মহল্লায় সপ্তাহের নির্দিষ্ট দিনগুলোতে ভিক্ষুকদের আনাগোনা ছিল। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভিক্ষা প্রদানের ধার্য করা দিন বৃহস্পতিবার। শুক্রবার ভিক্ষা প্রদানের কমন দিন। একটা সময় ভিক্ষুকরা সারিবদ্ধ হয়ে বাসাবাড়িতে যেত। কখনও ভিক্ষুকদের ভিড় অসহনীয় হয়ে পড়ত। ভিক্ষুকরা হাত পাতলেই বলতে হতো ‘মাফ কর’। বর্তমানে এই কথা আর সহজে বলতে হয় না। ভিক্ষুকদের ভিড়ও লক্ষ করা যায় না। ধর্মীয় কোন কারণে ভিক্ষুকদের ভোজনের দাওয়াত দিতে হলে সহজে খুঁজে পাওয়া যায় না। খোঁজখবর করে জানা যায়, কাজের বিনিময়ে খাদ্য, কাজের বিনিময়ে টাকা, ভালনারাবেল গ্রুপ ডেভেলপমেন্ট (ভিজিডি), গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন এবং সংস্কার কাজসহ বিভিন্ন কর্মসূচী প্রায় সারা বছর চালু থাকায় ভিক্ষুকরা কাজ পাচ্ছে। কেউ কোন সমিতি থেকে ঋণ নিয়ে নিজেরাই স্বাবলম্বী হওয়ার চেষ্টা করছে। এমনও দেখা যায়, গ্রামের অনেকে বিভিন্ন কাজ নিয়ে বিদেশমুখী হওয়ার পর যে রেমিটেন্স পাঠায় তার একটি অংশ দিয়ে বাড়ি নির্মাণ ও জমি কেনা হচ্ছে। ব্যক্তি উন্নয়নের এই ক্ষেত্রে কাজ পাচ্ছে ভিক্ষাবৃত্তি পেশার অনেকে। মাঠ পর্যায়ে দেখা যায় অনেক বৃদ্ধ ভিক্ষুকের সন্তানেরা রোজগার করায় আর ভিক্ষা করতে হয় না। এর বাইরে দেশজুড়ে প্রতি জনে ৫০০ টাকা করে বয়স্ক ভাতা পাচ্ছে ৩১ লাখ ৫০ হাজার জন। প্রায় ১৫ লাখ প্রতিবন্ধী প্রতি মাসে ভাতা পাচ্ছে। অসচ্ছল প্রতিবন্ধীরা প্রতি মাসে ৬০০ টাকা করে ভাতা পাচ্ছে। এই সংখ্যা ৭ লাখ ৫০ হাজার জন। বিধবা, স্বামী পরিত্যক্ত ও দুস্থ মহিলা ভাতা পাচ্ছে ১১ লাখ ৫০ হাজার জন। ভিজিডি কর্মসূচীর উপকারভোগী নারীর সংখ্যা অন্তত ১০ লাখ। তারপরও যখন কোন কাজ থাকে না তখনই অনেকে শহরের দিকে যায় ভিক্ষাবৃত্তি করতে। এই অবস্থা যাতে না হয় সেই পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। বগুড়া জেলা প্রশাসক জানান, প্রাথমিকভাবে বগুড়ায় ৫ হাজার ৯৬৬ জন ভিক্ষুকের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। তবে এই তালিকা আরও যাচাই-বাছাই করতে প্রত্যেক উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে (ইউএনও) নির্দেশ দেয়া হয়েছে। যাচাই-বাছাইয়ের পর ভিক্ষুকদের পুনর্বাসনে জনকল্যাণমুখী উদ্যোগ নেয়া হবে। বিশেষ করে একটি বাড়ি একটি খামার, গুচ্ছগ্রাম প্রতিষ্ঠা ও অন্যান্য কর্মসূচী বাস্তবায়ন করা হবে। বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলায় ৭১০ জন ভিক্ষুকের তালিকা করা হয়। এদের মধ্যে ৩১৭ জন সমিতির মাধ্যমে পুনর্বাসিত হয়েছে। তারা ৪ লাখ টাকা সঞ্চয় করেছে। এর মধ্যে থেকে ১ লাখ টাকা স্বল্প সুদে ঋণ দেয়া হয়েছে। কাহালু উপজেলায় ৫০ জন ভিক্ষুককে পুনর্বাসন করা হয়েছে। বগুড়ার জেলা প্রশাসক বললেন, ভিক্ষাবৃত্তি প্রতিরোধে উপজেলা পর্যায়ে যে কমিটি আছে তা পুনর্বিন্যাস করে জেলা পর্যায়ে নতুন কমিটির সুনির্দিষ্ট বিধিমালা প্রণয়নের সুপারিশ করা হয়েছে।
×