ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

মাদারীপুরে পিট কয়লার অফুরন্ত ভাণ্ডার

প্রকাশিত: ০৪:০৫, ১১ জুন ২০১৬

মাদারীপুরে পিট কয়লার অফুরন্ত ভাণ্ডার

মাদারীপুর জেলার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে রয়েছে প্রাকৃতিক সম্পদ পিট কয়লার অফুরন্ত ভা-ার। রাজৈর উপজেলার আলম দস্তার, বাজিতপুর, আমগ্রাম, খালিয়া, কদমবাড়ি ইউনিয়নসহ আশপাশের এলাকার ৩/৪ ফুট মাটির নিচেই পাওয়া যায় সম্ভাবনাময় এই প্রাকৃতিক সম্পদ। পিট কয়লা উত্তোলন করে আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে ব্রিকেট তৈরি করা হলে বাংলাদেশের একশ’ বছরের জ্বালানি চাহিদা মেটানো সম্ভব। পিট দিয়ে আধুনিক পদ্ধতিতে ব্রিকেট তৈরি করে উচ্চমানের জ্বালানি হিসাবে ব্যবহার করা যায়। ব্রিকেটের দাহ্য ক্ষমতা অত্যন্ত বেশি। যেসব ক্ষেত্রে জ্বালানির অব্যাহত সরবরাহ প্রয়োজন সে ক্ষেত্রে ব্রিকেট ব্যবহার করা হলে স্বল্প ব্যয়ে বেশি তাপ পাওয়া যায়। এতে গ্যাসের ওপর চাপ কমানো সম্ভব। ১৯৮০ সালের দিকে মাদারীপুর জেলার রাজৈরের আলম দস্তার, টেকেরহাট, ইশিবপুর, শাখারপাড়, হৃদয়নন্দী, খালিয়া, বাজিতপুর, নয়াকান্দি, লখ-ার বিল, লাউসার বিল, আমগ্রাম বিল, পশ্চিম খালিয়া, সেনদিয়া, পলিতা, আড়ুয়াকান্দি, লক্ষ্মীপুর, কদমবাড়ি, বিল বাঘিয়া ও পার্শ্ববর্তী ভেন্নাবাড়ি, জলিরপাড়, কলিগ্রাম, সাতপাড়, চান্দার বিল এলাকার মানুষ বাড়ি-ঘর তৈরি করতে গিয়ে বিল-বাঁওড়, খানা-খন্দ থেকে মাটি কাটার সময় এবং নতুন পুকুর খনন করতে গিয়ে পিট কয়লার সন্ধান পায়। তখন থেকে এ সকল এলাকার বিশাল দরিদ্র জনগোষ্ঠী মজা পুকুর বা ডোবার ৩/৪ ফুট মাটি খুঁড়ে পিট কয়লা তুলে জ্বালানি চাহিদা মিটিয়ে আসছিল। রাজৈর উপজেলার নি¤œকুমার নদীর তীরবর্তী এলাকায় মাঠ-ঘাট ও হাওড়-বাঁওড় এবং বিলাঞ্চলের ৪/৫ ফুট মাটি খুঁড়লে পাওয়া যায় পিট কয়লা। এসব এলাকার দরিদ্র কৃষক, দিনমজুর ও স্বল্প আয়ের মানুষ কোদাল দিয়ে মাটি খুঁড়ে পিট কয়লা তুলতে শুরু করে। দরিদ্র জনগোষ্ঠী বাড়তি আয়ের আশায় পিট কয়লা বস্তায় ভরে মাথায় করে ও নৌকায় চেপে বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করে। পিট কয়লা দামে খুব সস্তা। ৪০ কেজির এক বস্তা পিটের দাম ৪০ থেকে ৫০ টাকা। ছোট্ট ডিঙ্গি নৌকা ভর্তি ১০ থেকে ১২ মণ পিট কয়লার দাম পাঁচশ’ থেকে ছয়শ’ টাকা। রাজৈর ও পাশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ রান্নার কাজে জ্বালানি হিসেবে পিট কয়লা ব্যবহার করে। তখন থেকে গ্রামের গৃহিণীরা পিট কয়লা দিয়ে রান্নাসহ যাবতীয় জ্বালানির কাজ করে। পিট কয়লার দাহ্য ক্ষমতা বেশি হওয়ায় রান্না-বান্না দ্রুত হয়। ১৯৯২-৯৩ অর্থবছরে পিট কয়লার উজ্জ্বল ভবিষ্যতের কথা বিবেচনা করে পেট্রোবাংলা ‘মাদারীপুর পিট উন্নয়ন ও প্রদর্শন প্রকল্প’ নামে প্রকল্প হাতে নেয়। এডিপির আর্থিক সহায়তায় প্রথম বছর এক কোটি ২০ লাখ টাকা বরাদ্দ পেয়ে প্রকল্পের কাজ শুরু করে। প্রকল্প কর্তৃপক্ষ ওই বছর মাদারীপুর সদর উপজেলার কেন্দুয়া ইউনিয়নের চৌহদ্দি মৌজায় ৯ একর জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে ব্রিকেট প্লান্ট তৈরি ও তা প্রদর্শনের জন্য খনন কাজ শুরু হয়। ১৯৯৩ সালের প্রথম দিকে আধুনিক মেশিনের সাহায্যে পিট দিয়ে ব্রিকেট তৈরির পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো হয়। প্রকল্প কর্মকর্তাদের সীমাহীন দুর্নীতি আর অদক্ষতার কারণে প্রকল্পটি মুখ থুবড়ে পড়ে। ফলে পেট্রোবাংলার উদ্দেশ্য ব্যর্থ হয় এবং সোয়া শ’ কোটি টাকা লোপাট করে প্রকল্প গুটিয়ে কর্মকর্তারা চলে যায়। উকিলবাড়ি এলাকায় পড়ে থাকে মজুদ শতাধিক টন পিট কয়লা। ফলে সম্ভাবনাময় এ প্রাকৃতিক সম্পদের ভবিষ্যত পরীক্ষা-নিরীক্ষার আগেই বন্ধ হয়ে যায়। দীর্ঘ ২৩ বছরে আর কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। -সুবল বিশ্বাস, মাদারীপুর থেকে
×