
.
ঢাকাসহ দেশের ৬২ জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে তাপদাহ বইছে। তীব্র গরমে হাঁসফাঁস অবস্থা। শুধুমাত্র সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলার আওতামুক্ত। দেশজুড়ে তীব্র গরমে উঠেছে নাভিশ^াস। অধিকাংশ জেলায় তাপমাত্রার পারদ ৪০ ছুই ছুই। প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকেও বের হচ্ছে না মানুষ। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, তাপমাত্রার পারদ রবিবারও উর্ধ্বমুখী থাকবে। তবে সোমবার থেকে কমে আসতে শুরু করবে। এদিন ময়মনসিংহ, নেত্রকোণা ও সিলেট এলাকায় বৃষ্টির সম্ভাবনাও রয়েছে।
শনিবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গায় ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা এ বছরে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। এদিন রাজধানীর তাপমাত্রা ছিল ৪০ দশমিক ১ ডিগ্রি। এর আগে শুক্রবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রাও রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গায় ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৯ দশমিক ২ ডিগ্রি।
শনিবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় তীব্র গরমে মানুষের ত্রাহি অবস্থা। বিশেষ করে দিন মজুর, রিকশা চালক ও খেটে খাওয়া মানুষের অবস্থা ছিল কাহিল। কেউ রাস্তার পাশে গাছ তলায় রিকশা রেখে জিরিয়ে নিচ্ছে। কেউ আবার শরীর জুড়াতে ঠান্ডা শরবতের দোকানে। মিরপুর এক নম্বরে কথা হয় কেরামত মিয়ার সঙ্গে। পেশায় ডাব ও তালের শাস বিক্রেতা। তিনি জনকণ্ঠকে জানান, এ গরমে তালের শাসের চাহিদা বেড়েছে। কিন্তু কাঠফাটা রোদ আর গরম বাতাসে বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে না। রাজধানীর সড়কগুলোতে বিশেষ করে রিকশা চালকদের কষ্ট ছিল চোখে পড়ার মত। যারা ব্যাটারিচালিত রিক্সাচালক তাদের কায়িক পরিশ্রম নেই। কিন্তু প্যাডেলচালিত রিক্সাচালকদের শরীর ও ঘামে একাকার হতে দেখা গেছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ শাহনাজ সুলতানা জনকণ্ঠকে বলেন, দেশের ওপর দিয়ে শক্তিশালী তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে খুলনা, রাজশাহী, ঢাকা ও বরিশাল বিভাগে তাপপ্রবাহের তীব্রতা বেশি। রবিবারও এ অবস্থা অব্যাহত থাকবে। তবে সোমবার থেকে কোথাও কোথাও বজ্র-বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকায় তাপমাত্রা কয়েক ডিগ্রি নেমে আসতে পারে। তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৭ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত থাকলে তাকে মৃদু তাপপ্রবাহ বলা হয়। তাপমাত্রা ৩৮ থেকে ৩৯ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে তা মাঝারি তাপপ্রবাহ। তাপমাত্রা ৪০ থেকে ৪১ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে তীব্র তাপপ্রবাহ ধরা হয়। তাপমাত্রা ৪২-এর বেশি হলে তা অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বলে গণ্য হয়।
চুয়াডাঙ্গা জেলার উপর দিয়ে টানা তিনদিন তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। গত তিন দিনে এই জেলায় তাপমাত্রা বেড়েছে ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর ফলে পানিবাহিত রোগসহ তীব্র গরমের রোগের আধিক্য বেড়েছে। পদ্মাপাড়ের রাজশাহীতেও তাপমাত্রার পারদ উঠেছে ৪০ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ২০২৩ সালে ১৭ এপ্রিল জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি। যা গত ৯ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।
আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, রবিবার ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের দু’এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ বজ্রসহ বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। সারাদেশে চলমান তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে। সোমবার ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম দু’এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা (১-২) ডিগ্রি সে. কমতে পারে।
এদিকে আগামী ১৬ থেকে ১৮ মে’র মধ্যে বঙ্গোপসাগরে একটি ঘূর্ণন সৃষ্টি হতে পারে। এটিই পর্যায়ক্রমে ঘনীভূত হয়ে ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ওয়েদার অবজারভেশন টিম (বিডব্লিউওটি)। সে সঙ্গে ১২ মে’র মধ্যে তাপমাত্রা সর্বোচ্চ পর্যায়েও উঠতে পারে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। শনিবার বাংলাদেশ ওয়েদার অবজারভেশন টিম (বিডব্লিউওটি) এ তথ্য জানায়।
সংস্থাটি আরও জানায়, চলমান এই তাপপ্রবাহের পরপরই দেশের দিকে একটি ক্রান্তীয় আংশিক বৃষ্টিবলয় আসবে, যা আগামী ১৩ মে থেকে দেশের ওপর সক্রিয় হতে পারে এবং আগামী ১৫ মে থেকে দেশের অনেক এলাকায় অধিক সক্রিয় হতে পারে।
এই বৃষ্টি বলয়ের জন্য তাপপ্রবাহ কমে যাবে। এই বৃষ্টিবলয়টি একটি শক্তিশালী ও তীব্র বজ্রপাতযুক্ত বৃষ্টিবলয়। যা সবচেয়ে বেশি সক্রিয় থাকতে পারে সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগে। আর সবচেয়ে কম সক্রিয় থাকবে খুলনা, রাজশাহী ও চট্টগ্রাম বিভাগে। বৃষ্টিবলয়টি ১৩ মে থেকে ২০ মে পর্যন্ত সক্রিয় থাকতে পারে। বেশি সক্রিয় থাকতে পারে ১৫ থেকে ১৯ মে পর্যন্ত। এ বৃষ্টিবলয়ের পর তীব্র তাপপ্রবাহ আসার সম্ভাবনা রয়েছে।
বিডব্লিউওটি জানায়, বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির জন্য অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হচ্ছে। মে মাসের তৃতীয় সপ্তাহে বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড়ের জন্য প্রয়োজনীয় সকল প্যারামিটার উপস্থিত থাকতে পারে। এতে করে আগামী ১৬ থেকে ১৮ মে’র মধ্যে বঙ্গোপসাগরে একটি ঘূর্ণন সৃষ্টি হতে পারে। যা ক্রমান্বয়ে ঘনীভূত হয়ে পরবর্তী চার পাঁচ দিনে পর্যায়ক্রমে লঘুচাপ, সুস্পষ্ট লঘুচাপ, নি¤œচাপ, গভীর নি¤œচাপ ও ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে।