
ব্রাজিল দলের অনুশীলনে নেইমারের সঙ্গে লুকাস
কাতার বিশ্বকাপে নিজের সবটুকু নিংড়ে দিয়ে ব্রাজিলকে ষষ্ঠ বিশ্বকাপ উপহার দেয়ার সংকল্প ব্যক্ত করেছেন নেইমার। তারকা এই ফরোয়ার্ড বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারে বিশ্বকাপ ছাড়া সবকিছু জয়ের স্বাদ পেয়েছেন। মরুর বুকে তাই সোনার ট্রফি জিততে উন্মুখ হয়ে আছেন ফরাসি জায়ান্ট পিএসজিতে খেলা এই সুপারস্টার।
বিশ্বকাপ মিশন শুরুর আগে ব্রাজিল দল বর্তমানে ইতালির তুরিনে অবস্থান করছে। সেখানে জুভেন্টাসের ট্রেনিং গ্রাউন্ডে নিজেদের ঝালিয়ে নিচ্ছে কোচ তিতের দল। বিশ্বকাপের আগে প্রস্তুতি ম্যাচ না খেললেও গা গরমে ব্যস্ত আছেন সেলেসাওদের ২৬ যোদ্ধা। তুরিনে অনুশীলন ক্যাম্প শেষ করে সেখান থেকে মরুর বুকে পা রাখবেন পেলের দেশের তারকারা। প্রথম দিনে যান্ত্রিক গোলযোগের কারণে ব্রাজিলের অনুশীলনে যোগ দিতে পারেননি নেইমার। তবে একবেলা পর ঠিকই সতীর্থদের সঙ্গী হয়েছেন। আর দলের প্রাণভোমরাকে পেয়ে আরও উজ্জীবিত হয়েছে সেলেসাওরা। শুধু তাই নয়, অনুশীলনে সেরা তারকার পায়ের কারুকাজ দেখে মুগ্ধ বনে গেছেন সতীর্থরা।
অনুশীলনের একটা সেশনে ওপর থেকে পড়া বল নিয়ন্ত্রণে নেয়ার অনুশীলন করানো হয় ব্রাজিলের ফুটবলারদের। এজন্য ৩০ মিটার ওপর থেকে বল মাঠে ফেলা হয়। ফুটবলারদের বলা হয় প্রথম ছোঁয়াতেই বল আয়ত্তে নিতে। শুরুতে রিয়াল মাদ্রিদ তারকা রডরিগোর পালা ছিল। কিন্তু এই তরুণ ফরোয়ার্ড ব্যর্থ হন। এরপর টটেনহ্যাম হটস্পারে খেলা স্ট্রাইকার রিচার্লিসন ভালোভাবেই বল আয়ত্বে নেন। এরপর পালাক্রমে বল আয়ত্বে নিতে ব্যর্থ হন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ফরোয়ার্ড অ্যান্টনি, রিয়াল মাদ্রিদ ফরোয়ার্ড ভিনিসিয়াস জুনিয়র, বার্সিলোনা ফরোয়ার্ড রাফিনহা, রিয়াল ডিফেন্ডার এডার মিলিটাও। এই তারকারা না পারলেও কিছুক্ষণ পর জাদু দেখান নেইমার। ওপর থেকে নেমে আসা বলটাকে দারুণভাবে আয়ত্তে নেন তিনি। শুধু তাই নয়, এরপর অনুশীলনের বাকি সময়ে কয়েকবার বল পায়ে কারিকুরি দেখান।
এমন কারিশমা দেখানোর পর নেইমারের কাছে ছুটে আসেন তার সতীর্থরা। শুরু হয়ে যায় উদযাপন। এই স্কিল শোর প্রতিযোগিতাটা ধারণ করেছে একটি টেলিভিশন চ্যানেল। বিজয়ীর জন্য ছিল একটা ট্রফিও। সেই ট্রফি জিতে নিয়েছেন নেইমার। বিশ্বকাপ সামনে রেখে অনুশীলনেই পায়ের জাদু দেখিয়ে নেইমার আভাস দিয়েছেন বিশ্বকাপেও তেমন কিছু দেখাতে প্রস্তুত তিনি। ২০২১ সালে ঘরের মাঠে আর্জেন্টিনার কাছে কোপা আমেরিকা ফাইনালে হারের পর এখন পর্যন্ত কোন ম্যাচে পরাজিত হয়নি ব্রাজিল। এবারের মৌসুমে এখন পর্যন্ত পিএসজির হয়ে সবমিলিয়ে ১৯ ম্যাচে ১৫ গোল ও ১২টি অ্যাসিস্টসহ দুর্দান্ত ফর্মে থেকে নেইমার মরুর বুকে আসছেন।
কিন্তু কাতারে ব্যক্তিগত অর্জনের জন্য যাচ্ছেন না জানিয়ে নেইমার বলেন, ‘আমি এই বিশ্বকাপ ভালোভাবে খেলতে চাই। বিশ্বকাপে নিজেকে উৎস্বর্গ করতে চাই। কারণ আমি নিশ্চিত এবারের বিশ্বকাপে ব্রাজিলের অনেক দূর যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। যদিও অনেক মানুষই আমাদের ওপর বিশ্বাস রাখতে পারছে না। কিন্তু আমরা মাঠেই তার প্রমাণ দেব। এই দলটির ওপর আমার পূর্ণ আস্থা আছে। বিশ্বকাপ জয়ের জন্যই খেলবে দল। আমি ফুটবল খেলতে ভালোবাসি এবং জিততে ভালোবাসি। প্রতিদিনই নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়ার প্রতিযোগিতায় মেতে থাকি। আমি সতীর্থদের সহযোগিতা করতে পছন্দ করি যা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি ফুটবলের ইতিহাসে আমার নাম খোদাই হয়ে থাকবে।’
ব্রাজিল জাতীয় দলে নেইমারের অভিষেক হয় ২০১০ সালে। সময়ের পরিক্রমায় এখন দলের প্রাণভোমরা তিনি। ক্লাবের হয়ে ফর্ম যেমনই থাকুক; দেশের হয়ে বরাবরই সেরা ছন্দে দেখা যায় তাকে। এ প্রমাণ ৩০ বছর বয়সী নেইমার বারবার দিয়েছেন। এখন পর্যন্ত জাতীয় দলের হয়ে ৭৫ গোল করা নেইমার ব্রাজিলের সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলদাতার তালিকায় আছেন দুই নম্বরে। আর মাত্র তিন গোল করলেই ছাড়িয়ে যাবেন কিংবদন্তি পেলেকে (৭৭ গোল)। সঙ্গতকারণেই কাতার বিশ্বকাপে ব্রাজিলের শিরোপা সম্ভাবনায় বড় ভরসা নেইমার। সেটা মানছেন দলটির কোচ তিতেও, ‘নেইমার তো নেইমারই। সে আমাদের সবচেয়ে বড় তারকা।
এখন পার্থক্য হলো তার আশপাশে তারকা হওয়ার কাছাকাছি থাকা কিছু খেলোয়াড় আছে যারা জ্বলে উঠতে পারে। নেইমারের ক্ষেত্রে বড় ব্যাপার হলো সে তরুণদের উন্নতির ধারাটা বোঝে। সে ছেলেদের একটি স্তরে যেতে উৎসাহিত করে। সময় আর অভিজ্ঞতার সঙ্গে মানুষের এই পরিণতিবোধ আসে। বড় মাপের খেলোয়াড় হওয়ায় নেইমারকে নিয়ে সব সময়ই প্রত্যাশা বেশি থাকবে। কিন্তু এটা এখন কেবল তার একার ওপর নয়। নেইমার ছাড়াও প্রত্যাশা থাকবে ভিনিসিয়াস, রাফিনহাদের নিয়েও। থিয়াগো সিলভাও সেরা ছন্দে ফিরেছে। লুকাস পাকুয়েটা, কাসেমিরোরা তো আছেই’।