ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৫ জুলাই ২০২৫, ৩১ আষাঢ় ১৪৩২

বাড়ছে পৃথিবীর ঘূর্ণন গতি, আসন্ন সবচেয়ে ছোট দুটি দিনের তারিখ প্রকাশ

প্রকাশিত: ১৭:৩২, ১৫ জুলাই ২০২৫

বাড়ছে পৃথিবীর ঘূর্ণন গতি, আসন্ন সবচেয়ে ছোট দুটি দিনের তারিখ প্রকাশ

ছবি: প্রতীকী

চলতি বছর জুলাই ৯-এ বিশ্ববাসী পেয়েছে ইতিহাসের অন্যতম সবচেয়ে ছোট দিন, যা গড়ে প্রতিদিনের তুলনায় ১.৩ মিলিসেকেন্ড কম দীর্ঘ ছিল। তবে বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই রেকর্ডও ভাঙতে যাচ্ছে।

পৃথিবীর ঘূর্ণনের গতি আবারও বাড়ছে, ফলে আগামী ২২ জুলাই ও ৫ আগস্ট দিনগুলো আরও ছোট হবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছেন গবেষকরা।

২২ জুলাই: গড় দিনের চেয়ে ১.৩৮ মিলিসেকেন্ড কম

৫ আগস্ট: গড় দিনের চেয়ে ১.৫১ মিলিসেকেন্ড কম

এই পরিবর্তনের পেছনে রয়েছে চন্দ্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা—সে সময় চাঁদ পৃথিবী থেকে সবচেয়ে দূরে থাকবে (Apogee)। এর ফলে মহাকর্ষীয় টান কমে গিয়ে জোয়ার-ভাটার প্রভাবও কমে আসে, যার কারণে পৃথিবীর ঘূর্ণন কিছুটা দ্রুত হয়।

যদিও এই সময়ের পার্থক্য একটি চোখের পলকের ১০০ মিলিসেকেন্ডের তুলনায় খুবই সামান্য, তবুও এটাই বোঝায় যে পৃথিবীর ঘূর্ণন এখন অস্বাভাবিকভাবে ত্বরান্বিত হচ্ছে। বিজ্ঞানীরা ২০২০ ও ২০২২ সালেই এই গতি বৃদ্ধির ইঙ্গিত পেয়েছিলেন।

কেন কিছু দিন এতো ছোট হয়?

আমরা জানি, একদিন বলতে বুঝি ২৪ ঘণ্টা বা ৮৬,৪০০ সেকেন্ড। কিন্তু পৃথিবীর ঘূর্ণন আসলে এতটা স্থির নয়।

বছরের পর বছর ধরে গড়ে প্রতি শতাব্দীতে পৃথিবীর ঘূর্ণন ২ মিলিসেকেন্ড করে ধীর হয়। চাঁদের টানে সৃষ্ট জোয়ার-ভাটা এই ধীরগতির প্রধান কারণ। এই প্রক্রিয়াকে বলা হয় Tidal Braking।

তবে যখন চাঁদ পৃথিবী থেকে অনেক দূরে অবস্থান করে, তখন এই টান দুর্বল হয়। ফলে পৃথিবীর ঘূর্ণন স্বাভাবিকের চেয়ে দ্রুত হতে থাকে।

রেকর্ডের সংক্ষিপ্ত তালিকা

সবচেয়ে ছোট দিন: ২০২৩ সালের ৫ জুলাই, গড় দিনের চেয়ে ১.৬৬ মিলিসেকেন্ড কম

২০২৪ সালের ৯ জুলাই: ১.৩ মিলিসেকেন্ড কম

আসন্ন সম্ভাব্য রেকর্ড:

২২ জুলাই, ২০২৫: ১.৩৮ মিলিসেকেন্ড কম

৫ আগস্ট, ২০২৫: ১.৫১ মিলিসেকেন্ড কম

এত অল্প পার্থক্য চোখে না পড়লেও, বিজ্ঞানীদের মতে ঘূর্ণনের এই পরিবর্তন আমাদের সময় মাপার পদ্ধতিতে প্রভাব ফেলতে পারে। ২০২৯ সালে প্রথমবারের মতো সময় গণনায় একটি ‘Leap Second’ বাদ দেওয়া হতে পারে—যা ইতিহাসে বিরল ঘটনা।

ড. লিওনিড জোটভ, রাশিয়ার মস্কো স্টেট ইউনিভার্সিটির গবেষক, বলেন, ‘এই ঘূর্ণন ত্বরান্বিত হওয়ার কারণ এখনো ব্যাখ্যা করা যায়নি। আমরা কেউই এটা আশা করিনি।’

অনেক গবেষক মনে করছেন, পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ কোরে কিছু পরিবর্তন হয়েছে, যার কারণে এই গতি বেড়েছে। তবে ভবিষ্যতে এটি আবার ধীরে ধীরে স্বাভাবিক বা ধীরগতিতে ফিরে যাবে।

জলবায়ু পরিবর্তনেরও রয়েছে প্রভাব

২০০০ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বরফ গলন ও ভূগর্ভস্থ পানি সরানোয় দিন দীর্ঘ হয়েছে ১.৩৩ মিলিসেকেন্ড।

এছাড়াও ভূমধ্যবর্তী অঞ্চলের পরিবর্তন, ভূমিকম্প, ও অভ্যন্তরীণ কোরের গতি কমে যাওয়া—সব মিলে পৃথিবীর ঘূর্ণনের গতি অপ্রত্যাশিতভাবে কমবেশি হচ্ছে।

সুতরাং, ২২ জুলাই ও ৫ আগস্ট ২০২৫ সালের দিনগুলো পৃথিবীর ইতিহাসে অন্যতম ছোট দিন হিসেবে নথিভুক্ত হতে যাচ্ছে। যদিও সময়ের এই ক্ষুদ্র পরিবর্তন দৈনন্দিন জীবনে কোনো বড় প্রভাব ফেলবে না, তবে এটি ভবিষ্যতের সময় গণনা ও উপগ্রহ প্রযুক্তির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।

 

সূত্র: ডেইলি মেইল।

রাকিব

×