ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৮ জুন ২০২৫, ২৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

‘নিথর দেহে সক্রিয় চেতনা’, আট মিনিটের মৃত্যু, আত্মার জীবন্ত অভিজ্ঞতা!

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ৮ জুন ২০২৫

‘নিথর দেহে সক্রিয় চেতনা’, আট মিনিটের মৃত্যু, আত্মার জীবন্ত অভিজ্ঞতা!

ছবি: সংগৃহীত

এক নারীর মৃত্যু হয়েছিল আট মিনিটের জন্যনা ছিল শ্বাস, না স্পন্দন, না ছিল মস্তিষ্কের কোনো কার্যকলাপ। অথচ ফিরেও এসেছেন জীবনে। ফিরেছেন এমন এক অভিজ্ঞতা নিয়ে, যা প্রচলিত বিজ্ঞানের গণ্ডি ছাড়িয়ে গেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডো অঙ্গরাজ্যের বাসিন্দা ৩৩ বছর বয়সী ব্রায়ানা ল্যাফার্টি এক বিরল স্নায়ুবিক ব্যাধিতে আক্রান্ত। এই রোগের কারণে তার দেহ একপর্যায়ে কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। সেই মুহূর্তে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়।

তবে তার দাবিচেতনা তখনও জাগ্রত ছিল। ‘মৃত্যু আসলে একটি ভ্রান্তি, আত্মা কখনোই মরে না। আমাদের চেতনা টিকে থাকে, এবং আত্মা শুধু রূপান্তরিত হয়,’ বলেন ব্রায়ানা।

‘আমার দেহ নিথর ছিল, তবু আমি জীবন্ত অনুভব করছিলাম’

মায়োক্লোনাস ডিসটোনিয়া নামের এই বিরল রোগে আক্রান্ত ব্রায়ানার মস্তিষ্কের স্বাভাবিক কার্যক্রম একবার সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। তার ভাষায়, সে মুহূর্তে তিনি শুনতে পান এক রহস্যময় কণ্ঠস্বর, ‘তুমি কি প্রস্তুত?’—তারপর অন্ধকার।

কিন্তু এরপর যা ঘটেছে, তা ব্রায়ানার মতে ‘বিজ্ঞানের ব্যাখ্যার বাইরে।’ তিনি বলেন, তার আত্মা যেন দেহ ছেড়ে এক অন্য জগতে প্রবেশ করেছিল, যেখানে সময়ের অস্তিত্ব নেই।

‘আমি আমার মানবসত্তাকে দেখতে পাইনি। আমি ছিলাম নিঃশব্দ, কিন্তু গভীরভাবে সচেতন, এমনকি আগের চেয়ে অনেক বেশি নিজস্ব।’

ভাবনার শক্তিতে গড়ে উঠছিল সেই জগত

ব্রায়ানার দাবি, মৃত্যু-পরবর্তী জগতে তার চিন্তাগুলোই গঠন করছিল আশপাশের বাস্তবতা।

‘আমার চিন্তাই চারপাশে গড়ে তুলছিল পরিবেশ। সেখানে চিন্তা করলেই তা বাস্তব হয়ে উঠছিল, তবে কিছুটা সময় লাগত।’

এই সময়ের অভিজ্ঞতা তাকে নতুন এক উপলব্ধি দেয়। ‘আমরা যত কষ্টই পাই, সেসবের একটি অর্থ থাকে। সব কিছুই কোনো না কোনো কারণে ঘটে।’

‘উচ্চতর এক বুদ্ধিমত্তার অস্তিত্ব অনুভব করেছি’

এই অভিজ্ঞতার সময় ব্রায়ানা জানান, তিনি দেখেছেন কিছু সত্তাযারা মানুষ ছিল না, তবে অদ্ভুতভাবে পরিচিত মনে হচ্ছিল। সেই সঙ্গে অনুভব করেছেন একটি উচ্চতর ‘বুদ্ধিমত্তার’ উপস্থিতি, যেটি তাকে নিঃশর্ত ভালোবাসা দিয়ে ঘিরে রেখেছিল।

‘একটি সত্তা বা বুদ্ধিমত্তা, যা আমাদের উপর নজর রাখেভালোবাসা ও স্নেহে। মৃত্যুর ওপারেও এই ভালোবাসা ছিল।’

গবেষণায় মিলছে চেতনার অব্যাহত থাকার ইঙ্গিত

এই অভিজ্ঞতা যে একেবারে কল্পনা নয়, তার ইঙ্গিত মিলছে সাম্প্রতিক এক গবেষণায়ও। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং বুলগেরিয়ার ২৫টি হাসপাতালের ৫৬৭ রোগীর ওপর চালানো এক গবেষণায় দেখা গেছে, কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের পর CPR চলাকালে অন্তত ৪০ শতাংশ রোগীর মস্তিষ্কে চেতনার সঙ্গে যুক্ত তরঙ্গ ছিল।

নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির গবেষক ড. স্যাম পার্নিয়া বলেন, ‘এই অভিজ্ঞতাগুলো আমাদের নিয়ে যায় এক নতুন মাত্রার চেতনার জগতে, যা মৃত্যুর সময় উন্মোচিত হয়।’

মৃত্যুর কাছ থেকে ফিরে আসার পর, ব্রায়ানাকে আবার হাঁটতে এবং কথা বলতে শিখতে হয়েছে। তার পিটুইটারি গ্রন্থির ক্ষতি সেরে উঠেছে পরীক্ষামূলক মস্তিষ্ক অস্ত্রোপচার।

তবু এখন তিনি বলছেন, ‘মৃত্যু নিয়ে আমার আর কোনো ভয় নেই। বরং জীবনকে আমি নতুন চোখে দেখি। যা একসময় আমাকে তাড়িয়ে বেড়াত, তার কোনো মূল্য নেই এখন।’

 

সূত্র: ডেইলি মেইল।

রাকিব

×