ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২০ মে ২০২৫, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ওষুধে কাজ হচ্ছে না?এবার সুপারবাগ দমন করবে নতুন অ্যান্টিবায়োটিক!

প্রকাশিত: ০৮:৪৮, ২০ মে ২০২৫

ওষুধে কাজ হচ্ছে না?এবার সুপারবাগ দমন করবে নতুন অ্যান্টিবায়োটিক!

ক্রমশ শক্তিশালী হয়ে ওঠা ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে বিজ্ঞানীরা এবার হাতে পেলেন নতুন এক অস্ত্র।পরিবর্তিত ড্যারোব্যাকটিন (Darobactin)। গবেষণায় দেখা গেছে, ওষুধ প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ ঠেকাতে এটি কার্যকর হতে পারে, বিশেষ করে ই. কোলাই (E. coli)-এর মতো ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে, যেগুলো বর্তমান অ্যান্টিবায়োটিকে আর সাড়া দিচ্ছে না।

বিশ্বজুড়ে ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অ্যান্টিবায়োটিক একটি গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র। কিন্তু দিনকে দিন নানা ব্যাকটেরিয়া এসব ওষুধের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলছে, ফলে বহু কার্যকর চিকিৎসাই অকার্যকর হয়ে পড়ছে। এই সংকট মোকাবিলায় নতুন ওষুধের প্রয়োজনীয়তা দিন দিন বাড়ছে।

এই পরিস্থিতিতে, ACS Infectious Diseases জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায় বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন—তারা ড্যারোব্যাকটিনের একটি পরিবর্তিত সংস্করণ তৈরি করেছেন, যা পরীক্ষাগারে ও প্রাণীতে (animal model) ইতিবাচক ফল দেখিয়েছে। এটি প্রমাণ করেছে, এই যৌগটি ভবিষ্যতে কার্যকর অ্যান্টিবায়োটিক হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে।

এই গবেষণাটি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ‘এন্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স অ্যাওয়ারনেস সপ্তাহ’ উপলক্ষে (১৮–২৪ নভেম্বর) প্রকাশিত হয়েছে।

অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স: এক বৈশ্বিক হুমকি
২০২৪ সালের শুরুতেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তাদের উচ্চ-প্রাধান্যপ্রাপ্ত ব্যাকটেরিয়ার তালিকায় Acinetobacter baumannii, Pseudomonas aeruginosa এবং E. coli-কে অন্তর্ভুক্ত করেছে। এগুলোর বিরুদ্ধে কার্যকর অ্যান্টিবায়োটিক প্রায় নেই বললেই চলে।

এই ব্যাকটেরিয়াগুলোর বিরুদ্ধে কার্যকর হতে পারে এমন একটি সম্ভাব্য যৌগই হলো ড্যারোব্যাকটিন। এটি একটি প্রাকৃতিক অ্যান্টিবায়োটিক, যা ব্যাকটেরিয়া থেকেই পাওয়া গেছে। এটি ব্যাকটেরিয়ার কোষের একটি নির্দিষ্ট প্রোটিনে বন্ধন তৈরি করে, ফলে কোষ ধ্বংস হয়ে যায়।

বিজ্ঞানী রলফ মুলার এবং জেনিফার হারম্যানের নেতৃত্বে পরিচালিত পূর্ববর্তী গবেষণায় দেখা গেছে, জেনেটিকভাবে পরিবর্তিত ড্যারোব্যাকটিন (বিশেষত D22 নামে একটি সংস্করণ) A. baumannii-এর বৃদ্ধিকে দমন করতে পারে।

এবার প্রাণীতে সফলতা: D22-এর নতুন পরীক্ষা
নতুন এই গবেষণায় দেখা গেছে, পরিবর্তিত ড্যারোব্যাকটিন D22 বিভিন্ন প্রাণীতে কার্যকরভাবে কাজ করেছে।

 জেব্রাফিশে পরীক্ষা: D22 ঠিক সিপ্রোফ্লক্সাসিনের মতোই A. baumannii দূর করতে পেরেছে।

 ইঁদুরে পরীক্ষা:

মুখে খাওয়ানোর চেয়ে ইনজেকশন দেওয়াই বেশি কার্যকর।

একাধিক মাত্রায় ডোজ দিলে Pseudomonas aeruginosa-এর বৃদ্ধিকে অনেকটাই সীমিত করা গেছে (যদিও পুরোপুরি নির্মূল নয়)।

২৫ ঘণ্টায় ৪ বার D22 ইনজেকশন দিলে E. coli-এর পেরিটোনাইটিস সংক্রমণ পুরোপুরি দূর হয়েছে।

ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশনের মডেলে তিন দিন ধরে দিনে দুইবার D22 ইনজেকশন দিলে ব্যাকটেরিয়া অনেকটাই হ্রাস পেয়েছে। যদিও জেন্টামাইসিনের মতো নয়, যেটি প্রায় শূন্যে নিয়ে আসে।


গবেষকদের মতে, D22 এমন এক শক্তিশালী অ্যান্টিবায়োটিক হতে পারে, যা ভবিষ্যতে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের জন্য প্রস্তুত করা যেতে পারে। এটি অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স মোকাবিলার এক নতুন, উদ্ভাবনী সমাধান হয়ে উঠতে পারে।

 

 

 


সূত্র:https://tinyurl.com/3v2xvjxw

আফরোজা

×