
নতুন গবেষণা বলছে, মহাবিশ্বের মৃত্যু ঘটবে আরও আগেই । ১০⁷⁸ বছরের মধ্যেই ভেঙে পড়বে সব কিছু!ডাচ বিজ্ঞানীদের চমকপ্রদ আবিষ্কার, হকিং রেডিয়েশনের নতুন ব্যাখ্যায় উঠে এলো এই হিসাব
মহাবিশ্ব কি চিরকাল থাকবে? নাকি একদিন সব তারকা, গ্রহ, গ্যালাক্সি মিলিয়ে ভেঙে পড়বে? সম্প্রতি নেদারল্যান্ডসের তিনজন বিজ্ঞানীর গবেষণায় উঠে এসেছে এক বিস্ময়কর তথ্য । মহাবিশ্ব ধ্বংস হয়ে যাবে ১০⁷⁸ বছরের মধ্যেই, যা পূর্ববর্তী অনুমানের তুলনায় অনেক অনেক আগেই।
এই গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে Journal of Cosmology and Astroparticle Physics-এ। গবেষণায় অংশ নিয়েছেন ব্ল্যাক হোল বিশেষজ্ঞ হেইনো ফাল্কে, কোয়ান্টাম পদার্থবিদ মাইকেল ওয়ানড্রাক এবং গাণিতিক ওয়াল্টার ভ্যান স্যুজলেকম। তিনজনই র্যাডবাউড ইউনিভার্সিটি, নেজমেইগেনের বিজ্ঞানী।
হকিং রেডিয়েশনের নতুন দৃষ্টিভঙ্গি
এই গবেষণা হকিং রেডিয়েশনের একটি নতুন ব্যাখ্যার ওপর ভিত্তি করে করা হয়েছে। ২০২৩ সালেও এই একই গবেষক ত্রয়ী একটি প্রবন্ধে দেখিয়েছিলেন, শুধু ব্ল্যাক হোল নয়, নিউট্রন তারকা এবং অন্যান্য অতিবদ্ধ বস্তুও হকিং রেডিয়েশনের মতো এক ধরনের বিকিরণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ‘বাষ্পীভূত’ হতে পারে।
নতুন গবেষণায় বিজ্ঞানীরা এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজেছেন ।পুরো মহাবিশ্বকে শেষ হতে কত সময় লাগবে, যদি কেবল এই ধরনের বিকিরণই বিবেচনায় নেওয়া হয়?
তাদের হিসাব অনুযায়ী, মহাবিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘজীবী বস্তু হোয়াইট ডোয়ার্ফ তারকারাও হকিং-সদৃশ বিকিরণের মাধ্যমে অবশেষে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে প্রায় ১০⁷⁸ বছরের মধ্যে। অথচ এর আগের গবেষণাগুলোতে এই সময় ধরা হয়েছিল অবিশ্বাস্য ১০¹¹⁰⁰ বছর!
গবেষণার প্রধান লেখক হেইনো ফাল্কে বলেন,“মহাবিশ্বের চূড়ান্ত মৃত্যু হয়তো প্রত্যাশার চেয়েও আগেই আসবে, তবে সেটিও এখনও থেকে অনেক অনেক দূরের ভবিষ্যৎ।”
গবেষণায় একটি বিস্ময়কর তথ্য উঠে এসেছে ।নিউট্রন তারকা ও ব্ল্যাক হোলের বিকিরণ প্রক্রিয়ায় বিলুপ্ত হতে সময় লাগে প্রায় একই, ১০⁶⁷ বছর। অথচ ব্ল্যাক হোলের মহাকর্ষীয় টান অনেক বেশি হওয়ায় ধারণা করা হয়েছিল, তারা আরও দ্রুত বিলুপ্ত হবে।
গবেষক মাইকেল ওয়ানড্রাক ব্যাখ্যা দেন,“ব্ল্যাক হোলের কোন দৃশ্যমান পৃষ্ঠ নেই। ফলে তাদের নির্গত বিকিরণের একাংশ আবার তাদের ভেতরেই ফিরে যায়, যা বিলুপ্তির গতি কমিয়ে দেয়।”
এই গবেষণায় কৌতূহলী হিসাব করা হয়েছে ,যদি মানুষ ও চাঁদও হকিং-সদৃশ বিকিরণের মাধ্যমে অদৃশ্য হয়, তাহলে সময় লাগবে ১০⁹⁰ বছর! যদিও বিজ্ঞানীরা ইঙ্গিত দিয়েছেন, এর আগেই মানুষ বা চাঁদের অন্তর্ধান ঘটানোর মতো অন্য অনেক কারণ থাকতেই পারে।
গবেষণার আরেক সহ-লেখক ওয়াল্টার ভ্যান স্যুজলেকম বলেন,“এই গবেষণায় জ্যোতির্বিজ্ঞান, কোয়ান্টাম পদার্থবিদ্যা এবং গণিত একত্রে কাজ করেছে। এই ধরনের চূড়ান্ত প্রশ্নগুলো করার মধ্য দিয়ে আমরা তত্ত্বগুলো আরও ভালোভাবে বুঝতে চাই এবং একদিন হয়তো হকিং রেডিয়েশনের রহস্যও উদঘাটন করতে পারব।”
মহাবিশ্বের মৃত্যু এখন কল্পনা নয়, এটা একটা গণনাযোগ্য সময়ের অপেক্ষা। যদিও সেই দিন এখনও কোটি কোটি কোটি কোটি কোটি কোটি বছর দূরে, তবে নতুন এই ব্যাখ্যা আমাদের মহাবিশ্বের শেষ পরিণতির ধারণাকে আরও স্পষ্ট করে তোলে।
আপনি কি বিশ্বাস করেন, একদিন সবকিছুই বিলীন হয়ে যাবে?
সূত্র:https://tinyurl.com/37jwwf93
আফরোজা