
ছবি: সংগৃহীত।
ইহুদিরা দাবি করে তারা হযরত মূসা (আ.) অনুসারী, আর আখেরাতে জান্নাত নাকি শুধুই তাদের জন্য! তারা বলে, তাদের ধর্মগ্রন্থই সেই তাওরাত যা সিনাই পর্বতে আল্লাহ মূসা নবীর উপর নাজিল করেছিলেন। কিন্তু প্রশ্ন হলো—আজ তারা আসলে কোন কিতাব অনুসরণ করছে? তাওরাত? না কি তালমুদ?
আজকের আলোচনায় আমরা কুরআন, হাদীস ও ইতিহাসের আলোকে জানব, ইহুদিরা কিভাবে তাদের আসমানি কিতাব বিকৃত করেছে, আর আজ তারা কীসের অনুসারী।
তাওরাত — আসমানি কিতাব
আমরা জানি, প্রধান চারটি আসমানি কিতাবের একটি হলো তাওরাত। এটি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা হযরত মূসা (আ.)-এর উপর অবতীর্ণ করেছিলেন বনী ইসরাঈলকে সঠিক পথে পরিচালনার জন্য।
সূরা আ’রাফ, আয়াত ১৪৫-এ বলা হয়েছে: “আর আমি তার (মূসার) জন্য ফলকসমূহে সব বিষয় লিখে দিয়েছি, উপদেশ ও ব্যাখ্যা স্বরূপ। অতএব তা দৃঢ়ভাবে ধরো…”
তাওরাতের মূল ভাষা ছিল হিব্রু, আর হিব্রুতে এটিকে বলে "তোরা"—যার অর্থ: দিকনির্দেশনা, আইন, বা পথনির্দেশ।
তাহলে এখনকার “তোরা” কি সেই তাওরাত?
ইহুদিরা বিশ্বাস করে, বর্তমান তোরা মানেই সেই আসমানি তাওরাত। কিন্তু গবেষণা বলছে, এখন যে পঞ্চপুস্তককে তারা তোরা বলে মানে, তা মূসা (আ.)-এর জীবদ্দশার বহু শতাব্দী পরে রচিত হয়েছে।
তাদের এই “তোরা” ৫টি গ্রন্থে বিভক্ত:
১. বেরেশীত (আদি পুস্তক) — সৃষ্টিতত্ত্ব ও পূর্ববর্তী নবীদের কাহিনী
২. সেমত (যাত্রা) — বনী ইসরাঈলের মুক্তি ও সিনাই পর্বতের ঘটনা
৩. ভাইকরা (লেবীয়ক) — ধর্মীয় বিধান
৪. বামিদবার (গণনা) — মরুভূমির যাত্রা
৫. দেভারিম (দ্বিতীয় বিবরণ) — মূসা (আ.)-এর বিদায়ী ভাষণ
কিন্তু ইতিহাস বলছে, এই পুস্তকগুলো মূসা (আ.)-এর মৃত্যুর প্রায় ১,১২৫ বছর পরে রচিত, ঈসা (আ.)-এর আগমনের প্রায় ৪৪৪ বছর আগে লিখিত।
কুরআনের আলোকে ইহুদিদের বিকৃতি
আল্লাহ বলেন: “তারা আল্লাহর বাণী শুনত, তারপর বুঝে শুনে তা বিকৃত করত।”
— (সূরা বাকারা: ৭৫)
আরেক স্থানে: “তারা তাওরাতের শব্দসমূহকে তাদের যথাস্থান থেকে পরিবর্তন করে দেয় এবং যা তাদেরকে উপদেশ দেওয়া হয়েছিল তার অনেকটাই ভুলে যায়।”
— (সূরা মায়িদা: ১৩)
সহীহ বুখারীর এক বিখ্যাত হাদীসে আছে, যখন এক ইহুদি দম্পতি ব্যভিচারে লিপ্ত হয়েছিল, তারা রাসূল (সা.)-এর কাছে এলে তিনি জিজ্ঞাসা করেন: "তোমাদের তাওরাতে কি শাস্তির কথা আছে?" তারা অস্বীকার করে। তখন আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম বলেন, “তোমরা মিথ্যা বলছো।” এক ইহুদি তখন তাওরাত খুলে রাজমের আয়াত আঙ্গুল দিয়ে ঢেকে রাখে। হাত উঠালে দেখা যায়—সেখানে রাজমের স্পষ্ট নির্দেশ আছে!
তাহলে তালমুদ কী?
তাওরাত ছাড়াও ইহুদিদের প্রধান গ্রন্থ "তালমুদ"—যা আসলে বিভিন্ন ইহুদি পণ্ডিতদের মতামত, ব্যাখ্যা ও সিদ্ধান্তের সংকলন। এটি দুই সংস্করণে পাওয়া যায়:
-
বাবলি তালমুদ (ব্যাবিলন)
-
ইরুশালমি তালমুদ (জেরুজালেম)
ইহুদিরা যদিও বলে তালমুদ হলো তোরা/তাওরাতের ব্যাখ্যা, কিন্তু বাস্তবে এটি বহু বিতর্কিত ও কল্পনাপ্রসূত গল্পে ভরপুর। যেমন: “হযরত ইয়াকুব (আ.) একবার আল্লাহর সঙ্গে মল্লযুদ্ধে অংশ নেন এবং তিনি জয়লাভ করেন!” — নাউযুবিল্লাহ।
ইহুদিরা মুখে বলে তারা মূসার অনুসারী, কিন্তু তারা মূসা (আ.)-এর শিক্ষা, আদর্শ ও নবী মুহাম্মদ (সা.)-কে অস্বীকার করে। তারা শুধু তাওরাতকেই বিকৃত করেনি, বরং তারা নিজেদের বানানো তালমুদকেও “পবিত্র কিতাব” বলে মানে, এবং তার ওপরই আজ তারা বেশি নির্ভরশীল।
তাদের স্বার্থপরতা, ধর্মের বিকৃতি আর মনগড়া বিশ্বাসই প্রমাণ করে—আসল তাওরাত আর তাদের মাঝে কোনো সম্পর্ক নেই। যাদের অন্তর আল্লাহর ভয়হীন, তারা কখনোই হেদায়াতের পথে ফিরে আসবে না—এটাই বাস্তবতা।
তাওরাত আজ আর নেই। সত্য কিতাব হলো আল-কুরআন, আর সত্য নবীর অনুসরণ শুধু নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর পথেই।
নুসরাত