
সংগৃহীত
ইসলামে দয়া, মমতা ও সহানুভূতির বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর উম্মতের হৃদয়কে কোমল করার জন্য বিভিন্ন উপায় বাতলে দিয়েছেন। যার মধ্যে অন্যতম হলো এতিমদের প্রতি দয়া প্রদর্শন এবং তাদের মাথায় স্নেহের হাত বুলানো। এটি শুধু একটি মানবিক কাজ নয়, বরং একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত ও মহৎ সওয়াবের কাজও বটে।
হাদিসে এতিমের মাথায় হাত বুলানোর ফজিলত
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:"এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে এসে বলল, ‘ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমার হৃদয় কঠোর হয়ে গেছে, আমি কী করবো?’রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘তুমি এতিমের মাথায় হাত বুলাও এবং মিসকিনদের খাবার দাও, তাহলে তোমার হৃদয় কোমল হবে।’"
(মুসনাদে আহমদ: ৭৫৪৪, বাইহাকী, শুআবুল ঈমান: ৭৫৩৮)
এই হাদিস থেকে বোঝা যায় যে, এতিমদের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ ও তাদের স্নেহ করা হৃদয়কে কোমল করার অন্যতম কার্যকর উপায়।
হৃদয় কঠোর হওয়ার কারণ ও প্রতিকার
১. হৃদয় কঠোর হওয়ার কারণ
কুরআন ও হাদিসে বিভিন্ন কারণে হৃদয় কঠোর হতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়েছে, যেমন:
গুনাহের আধিক্য – অহংকার, জুলুম ও অন্যায়ের কারণে হৃদয় পাথরের মতো কঠিন হয়ে যায়। (সূরা আল-বাকারাহ: ৭৪)
গরিব-দুঃখীদের প্রতি অবহেলা – দরিদ্র, এতিম ও অসহায়দের প্রতি সহানুভূতি না দেখালে হৃদয় শক্ত হয়ে যায়। (সূরা আল-মাউন: ২-৩)
দুনিয়ার প্রতি অত্যাধিক আসক্তি – কেবল ধন-সম্পদের চিন্তা হৃদয়ের কোমলতা নষ্ট করে। (সূরা আত-তাকাসুর: ১-২)
নামাজ-ইবাদত থেকে দূরে থাকা – আল্লাহর স্মরণ থেকে দূরে থাকলে অন্তর কঠিন হয়ে যায়। (সূরা আজ-জুমার: ২২)
২. হৃদয় কোমল করার উপায়
হাদিস ও ইসলামের শিক্ষা অনুযায়ী, কঠোর হৃদয়কে কোমল করার কিছু উপায় হলো:
তাওবা ও ইস্তিগফার করা – গুনাহ থেকে মুক্তি পেতে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত।
নামাজ ও কুরআন তিলাওয়াত করা – আল্লাহর কালাম হৃদয়ের কঠোরতা দূর করে। (সূরা আজ-জুমার: ২৩)
গরিব ও এতিমদের সাহায্য করা – এতিমদের প্রতি দয়া প্রদর্শন হৃদয়ের কঠোরতা কমায়।
জান্নাতের কথা চিন্তা করা – আল্লাহর রহমতের কথা স্মরণ রাখলে অন্তর নরম হয়।
ইসলামে এতিমদের প্রতি সদয় হওয়ার গুরুত্ব
ইসলাম এতিমদের যত্ন নেওয়াকে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হিসেবে গণ্য করেছে। আল্লাহ বলেন:"তারা তোমাকে জিজ্ঞেস করে, তারা কী ব্যয় করবে। বলো, তোমরা যা ব্যয় করবে, তা পিতামাতা, আত্মীয়-স্বজন, ইয়াতিম, মিসকিন ও মুসাফিরদের জন্য হবে।"
(সূরা আল-বাকারাহ: ২১৫)
এছাড়াও রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:"আমি এবং এতিমের অভিভাবক জান্নাতে এভাবে থাকবো।" – তিনি তর্জনী ও মধ্যমা আঙুল একসাথে রাখলেন। (বুখারী: ৬০০৫)
ইতিহাস থেকে দৃষ্টান্ত
(১) রাসূল (সা.) নিজেই ছিলেন এতিম।রাসূলুল্লাহ (সা.) ছোটবেলায় পিতৃহীন হন এবং পরে মাতৃহীনও হয়ে যান। তাই তিনি এতিমদের কষ্ট অনুভব করতেন ও সর্বদা তাদের পাশে থাকতেন।
(২) সাহাবিদের দয়া ও সহানুভূতি
সাহাবিরা রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর আদেশ অনুসরণ করে এতিমদের প্রতি সদয় ছিলেন। আবু হুরায়রা (রা.) একবার এক এতিম শিশুকে কোলে নিয়ে তার মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করতেন, যেন তিনি রাসূল (সা.)-এর সুন্নাত অনুসরণ করছেন।
আধুনিক সমাজে এতিমদের প্রতি দায়িত্ব
এতিমদের আশ্রয় দেওয়া ও শিক্ষা নিশ্চিত করা।
তাদের সাথে সম্মানজনক আচরণ করা।
তাদের সম্পদ সংরক্ষণ করা ও আত্মসাৎ না করা। (সূরা আন-নিসা: ১০)
তাদের পাশে দাঁড়ানো ও দুঃখ ভাগ করে নেওয়া।
হৃদয় নরম করার অন্যতম উপায় হলো এতিমদের প্রতি দয়া প্রদর্শন করা, তাদের স্নেহ করা ও সাহায্য করা। এটি শুধু দুনিয়াতে শান্তি ও মানসিক প্রশান্তি দেয় না, বরং আখিরাতে জান্নাতের সোপানও তৈরি করে।
তাই আসুন, আমরা এতিমদের প্রতি সদয় হই এবং রাসূল (সা.)-এর এই গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ অনুসরণ করি।
আফরোজা