
ছবি: সংগৃহীত
মানুষের ভালো-মন্দ যাচাই-বাছাইয়ের জন্য আল্লাহ তায়ালা পৃথিবীতে মানুষকে পাঠিয়েছেন। পৃথিবীর এই রঙ্গমঞ্চে মানুষকে তার ব্যক্তিগত ইচ্ছাধিকারের ওপর ছেড়ে দিয়েছেন, যা খুশি তাই করার অধিকার দিয়েছেন। কোনো কিছুতে বাধা নেই, যাচ্ছেতাই জীবনযাপনে রাশ টানার কেউ নেই। তবে এই সবের সমাপ্তি ঘটবে কিয়ামতের মাধ্যমে। কিয়ামতের মাধ্যমেই রঙরসে ভরা পৃথিবীর এই জীবনের সমাপ্তি ঘটবে।
কিয়ামতের সংবাদ সব যুগেই সব নবী দিয়ে গেছেন উম্মতকে। আমাদের প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও কিয়ামত সম্পর্কে সতর্ক করেছেন। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘কেয়ামত সন্নিকটে’। কোরআনে আরও বর্ণিত হয়েছে, তারা শুধু এই অপেক্ষাই করছে যে, কেয়ামত অকস্মাৎ তাদের কাছে এসে পড়ুক। বস্তুত কেয়ামতের লক্ষণসমূহ তো এসেই পড়েছে। সুতরাং কেয়ামত এসে পড়লে তারা উপদেশ গ্রহণ করবে কেমন করে?’ (সূরা মুহাম্মদ, আয়াত : ১৮)
নবীজি সা. কেয়ামত সংঘটিত হওয়ার আগ মুহুর্তের বেশ কিছু আলামতের কথা বলেছেন। এই আলামতগুলোর মধ্যে সর্বশেষ ও ভয়াবহ হলো দাজ্জালের আবির্ভাব ঘটা। দাজ্জাল কেয়ামতে ৪০ দিন আগে পৃথিবীতে আসবে এবং মানুষকে বিপথগামী করতে সবধরনের চেষ্টা চালাবে।
দাজ্জালের আবির্ভাবের বিষয়টি কোরআন-হাদিস সমর্থিত। সে মিথ্যা জান্নাত-জাহান্নামের চিত্র দেখিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করবে। হাদিসের বর্ণনামতে, ‘দ্রুতগামী বাতাস বৃষ্টিকে যেভাবে চালিয়ে নেয়, দাজ্জালের চলার গতিও সেরকম হবে।’(মুসলিম- কিতাবুল ফিতান)।
কেয়ামতের ১০ টি উল্লেখযোগ্য আলামত হলো-
দাজ্জালের আগমন
মানব জাতির জন্য দাজ্জালের চেয়ে অধিক বড় বিপদ আর নেই। বিশেষ করে সে সময় যেসব মুমিন জীবিত থাকবেন তাদের জন্য ইমান নিয়ে টিকে থাকা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়বে। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও দাজ্জালের ফেতনার ব্যাপারে সতর্ক করেছেন এবং তার অনিষ্ট থেকে বাঁচার উপায়ও বলে দিয়েছেন।
ঈসা ইবনে মারইয়াম (আ.)-এর আগমন
সুরা নিসায় আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ঈসা আলাইহিস সালামকে কেউ হত্যা করেনি বরং তাকে আল্লাহ তাআলা তার কাছে উঠিয়ে নিয়েছেন। কেয়ামতের আগে তাকে আবার পাঠানো হবে। তখন পৃথিবীর সব ধর্মের মানুষ তাকে মেনে নেবে।
দাব্বাতুল আরদ্
কেয়ামতের আগে দাব্বাতুল আরদ্ নামক এক অদ্ভুত জন্তু বের হবে। জন্তুটি মানুষের সাথে কথা বলবে। যা অন্যতম সর্বশেষ ভয়াবহ আলামত। পশ্চিম আকাশে সূর্য উদিত হওয়ার পর তওবার দরজা বন্ধ হয়ে গেলে এটি বের হবে।
বিশাল একটি ধোঁয়ার আগমন
কেয়ামতের নিকটবর্তী সময়ে বিশাল আকারের একটি ধোঁয়া বের হয়ে আকাশ এবং জমিনের মধ্যবর্তী খালি জায়গা পূর্ণ করে ফেলবে। এই ধোঁয়া মুমিন ব্যক্তিদেরকে সামান্য একটু সর্দি-কাশি ও জ্বরে আক্রান্ত করে দেবে। কাফেরদের শরীরের ভেতরে প্রচণ্ডভাবে প্রবেশ করবে। ফলে তাদের শরীর ফুলে যাবে এবং শরীরের প্রতিটি ছিদ্র দিয়ে ধোঁয়া বের হবে। এটি তাদের জন্য একটি যন্ত্রণাদায়ক আজাবে পরিণত হবে।
ইয়াজুয-মাজুযের আগমন
ইয়াজুয-মাজুযের দল বের হওয়া কেয়ামতের একটি অন্যতম বড় আলামত। এরা বের হয়ে পৃথিবীতে বিপর্যয় ও মহা ফিতনার সৃষ্টি করবে। দলে দলে মানব সমাজে চলে এসে ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ চালাবে। তাদের মোকাবিলা করার মতো তখন কারো কোনো শক্তি থাকবে না।
তিনটি বড় ধরনের ভূমিধস
উম্মে সালামা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, আমি চলে যাওয়ার পর অচিরেই তিনটি স্থানে ভূমিধস হবে। একটি হবে পূর্বাঞ্চলে, একটি হবে পশ্চিমাঞ্চলে এবং আরেকটি হবে আরব উপদ্বীপে। আমি বললাম, হে আল্লাহর রসুল, সৎ লোক বর্তমান থাকতেই কি তাতে ভূমিধস হবে? রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, হ্যাঁ, যখন পাপকাজ বেশি হবে। (মুসলিম ২৯০১)
ইয়েমেন থেকে আগুন
কেয়ামতের পূর্বে ইয়েমেনের আদন নামক স্থানের গর্ত থেকে একটি ভয়াবহ আকারের আগুন বের হয়ে মানুষকে হাশরের দিকে একত্রিত করবে। (আবু দাউদ ৪৩১১)
পশ্চিম আকাশে সূর্যোদয় হবে
বর্তমানে প্রতিদিন পূর্ব দিক থেকে সূর্য উদিত হচ্ছে। কেয়ামতের আগে এ অবস্থার পরিবর্তন হয়ে পশ্চিমাকাশে সূর্যোদয় ঘটবে। এটি হবে কেয়ামতের অত্যন্ত নিকটবর্তী সময়ে। পশ্চিমাকাশে সূর্য উঠার পর তওবার দরজা বন্ধ হয়ে যাবে। (বুখারি ৬৫০৬)
ইমাম মাহদীর আগমন
দুনিয়ায় জুলুম নির্যাতন থেকে মানুষকে উদ্ধার করার জন্য একজন পথ প্রদর্শক নেতা আসবেন। যাকে আরবিতে বলা হয় ইমাম মাহদী। এ ব্যাপারে রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
মাহদী আসবেন আমার বংশধর হতে। তার কপাল হবে উজ্জ্বল এবং নাক হবে উঁচু। পৃথিবী থেকে জুলুম-নির্যাতন দূর করে দিয়ে ন্যায়-ইনসাফ দ্বারা তা ভরে দেবেন। সাত বছর পর্যন্ত তিনি রাজত্ব করবেন। (আবু দাউদ ৬৬১২)
কোমল ও ঠান্ডা বাতাসের মাধ্যমে মুমিনদের রুহ কবজ
কেয়ামতের আগে একটি বাতাস এসে মুমিনদের জান কবজ করে নেবে। তারপর পৃথিবীতে আল্লাহ তাআলার নাম উচ্চারণ করার মতো কোনো লোক থাকবে না। নিকৃষ্ট লোকেরাই বেঁচে থাকবে। তাদের ওপরেই কেয়ামত প্রতিষ্ঠিত হবে। (মুসলিম ১১৭)
ইসরাত