ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৩ জুন ২০২৫, ৯ আষাঢ় ১৪৩২

আসলেই কি ২৫ ডিসেম্বর যীশুর জন্মদিন?

রুমেল খান

প্রকাশিত: ২১:২৬, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪; আপডেট: ১৪:৩০, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪

আসলেই কি ২৫ ডিসেম্বর যীশুর জন্মদিন?

ছবি: সংগৃহীত


আজ ক্রিসমাস ডে বা বড় দিন। কিন্তু আসলেই কি তাই? বাইবেলের কোথাযও কিন্তু বলা হয়নি যীশুর জন্ম ২৫ ডিসেম্বর। তবে বাইবেলে যীশুর জন্ম মুহূর্ত কিছু ব্যাপার উল্লেখ আছে। তন্মধ্যে বাইবেলের লুক, অধ্যায়-২, অনুচ্ছেদ ৮-৯ হলো :


"বেথেলহেমের কাছে মাঠের মধ্যে রাতের বেলায় রাখালেরা তাদের ভেড়ার পাল পাহারা দিয়ে বিশ্রাম নিচ্ছিল। তখন তাদের সামনে এক দেবদূত এসে যীশুর জন্মের কথা বলল"।


এই ডিসেম্বর মাসের রাত। প্রচন্ড শীত। এত শীতের রাতে কিভাবে রাখলরা মাঠের মধ্যে পাহারা দিচ্ছিল? বরং গ্রীষ্মকালে যখন প্রচন্ড রোদ্রের তাবদাহে ক্লান্ত হয় তখনি রাখালরা বাইরে দিব্যি সময় পার করে। তাতে বোঝা যায়, যীশুর জন্ম শীতকালে নয় বরং গ্রীষ্মকালে হয়েছিল।


এমনকি কুরআনও যীশুর জন্মকালটি গ্রীষ্মের সাথে বর্ণনা করেছে, "অতঃপর সে (মরিয়ম) গর্ভে উহাকে (ঈসাকে) ধারণ করল; অতঃপর তা সহ দূরবর্তী স্থানে চলে গেল; প্রসব-বেদনা তাহাকে এক খেজুর গাছের তলে আশ্রয় নিতে বাধ্য করল। (জিব্রাইল বলল) তুমি (মরিয়ম) তোমার দিকে খেজুর গাছের কান্ডে নাড়া দাও, এটা তোমাকে পাকা ও তাজা খেজুর দান করিবে" [ সূরা মারিয়ামঃ ২২-২৫ ]


সূরা মারিয়াম এর স্পষ্ট আয়াত থেকে বোঝা যাচ্ছে, যীশুখ্রিষ্টের যখন জন্ম হয় তখন ছিল পাকা খেজুর ফলনের মাস। এখন প্রশ্ন পাকা খেজুর কী শীতে না গ্রীষ্মে ফলে? তাহলে কুরআন থেকেও প্রমাণ হয় যীশু ডিসেম্বরে জন্মাননি; বরং তিনি মে বা জুনে জন্মেছেন। যীশু শীতকালে জন্মাননি তিনি গ্রীষ্মকালে জন্মেছেন। অতএব, ২৫ ডিসেম্বর যীশুর জন্ম এটা সম্পূর্ণ কাল্পনিক কথা। যা যুক্তি বিরোধী।


ড্যান ব্রাউনের লেখা "দি ভিঞ্চি কোড" পড়লে আরো বিস্তারিত জানতে পারবেন কীভাবে ইউরোপীয় পৌত্তলিকদের বিভিন্ন পূজোৎসব ও রীতি নীতি খ্রিষ্টধর্মে প্রবেশ করেছে।


ইতিহাসের পাতা উলটালে দেখা যায় পনেরো শতকের শেষের দিকে ক্রিসমাস ট্রি ব্যবহার করা হয় প্রথমবারের মতো। তবে এটি আধুনিককালের হিসেব অনুযায়ী। এর আগে এই গাছটি কেমনভাবে ব্যবহৃত হতো তা নিয়ে নেই কোনো প্রমাণ। তবে যে ব্যবহৃত হতো এ নিয়ে বিশেষজ্ঞরা একরকম তাঁরা নিশ্চিত, কারও দ্বিমত নেই। এক অংশ মনে করে ১৪৪১ সালে এস্টোনিয়ার তাল্লিনে প্রথমবারের মতো জনসম্মুখে ক্রিসমাস ট্রি সাজিয়ে রাখা হয়েছিলো, আবার অন্য অংশ মনে করে ১৫১০ সালে লাটভিয়ার রিগায় প্রথমবারের মতো এই গাছটি সামনে আসে। প্রথম প্রমাণ্য এ নথি নিয়েও রয়েছে বিতর্ক। এখানে যে কোনটা সত্যি এ নিয়ে দণ্ড-বিতর্ক থাকলেও এখানেই যে ক্রিসমাস ট্রি বা বড়দিনের গাছের উৎপত্তি তা নিয়ে নেই কোনো বিতর্ক। এখান থেকেই মূলত ক্রিসমাস ট্রি'র জনপ্রিয়তার সূত্রপাত ঘটে, এটাই বিশ্বাস করা হয়। 


আজকে যেভাবে ক্রিসমাস যে পালন করা হয়, তা মূলত যুক্তরাষ্ট্রের কিছু ব্যবসায়ী মহলের উর্বর মস্তিকপ্রসূত! ১৮৩৫ সাল থেকে ক্রিসমাস ট্রি, সান্তা ক্লজ, উপহার সামগ্রী, বিভিন্ন চকোলেট জাতীয় মুখরোচক খাবার বিক্রি করাই ছিল তাদের মূল উদ্দেশ্য। এর সঙ্গে যীশুর জন্মদিন পালনের সঙ্গে কোন সম্পর্ক নেই।


১৯৮০-এর দশকে ঢাকার রমনা বটমূলে কিছু ব্যবসায়ী “ইলিশ-পান্তা” দিয়ে পহেলা বৈশাখ উৎসব উদযাপনের রীতি তৈরি করেছিল, আজ সেটা নিয়ম হয়ে গেছে। তেমনি আমেরিকানদের আবিস্কৃত ক্রিসমাস ডেও তাই। 


না বুঝে খ্রিস্টানদের অনেকেই ক্রিসমাস ডে পালন করে থাকেন। তেমনি না বুঝে অনেক মুসলিম “এপ্রিল ফুল ডে” পালন করে থাকেন। সবাইকে এসব নিয়ে ভাবতে হবে, সচেতন হতে হবে।
 

রুমেল খান/ শিহাব

×