
ছবি: অভিজিৎ রায়
রাজনীতি যদি হয় জনগণের ক্ষমতায়নের মাধ্যম, তবে নারীর অন্তর্ভুক্তি ব্যতীত সেই রাজনীতি অসম্পূর্ণ। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক যুগান্তকারী পরিবর্তন এনেছিলেন, তিনি রাজনীতিকে কেন্দ্র থেকে তৃণমূলে পৌঁছে দেন। তাঁর নেতৃত্বে যে ‘বটম-আপ’ পদ্ধতির সূচনা হয়, তা ছিল অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠনের প্রথম ধাপ। এ দর্শনের কেন্দ্রে ছিল আত্মনির্ভরশীলতা, দেশপ্রেম এবং সর্বজনীন অংশগ্রহণ।
নারীর ক্ষমতায়নের প্রশ্নে শহীদ জিয়া যুগের চেয়ে অনেক এগিয়ে ছিলেন। তাঁর নীতিতে নারীর ভোটাধিকার বাস্তবায়ন, সরকারি চাকরিতে অংশগ্রহণ এবং গ্রামীণ অর্থনীতিতে নারীর ভূমিকা স্বীকৃতি পায়। আমি মনে করি, এই দর্শনই আজ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নারী নেতৃত্ব বিস্তারে পথ দেখাচ্ছে।
পরিসংখ্যানে নারীর শক্তি, বাস্তবে সীমাবদ্ধতা, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (BBS) এর ২০২২ সালের জনশুমারি অনুযায়ী, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নারীর সংখ্যা প্রায় ৫৩%। কিন্তু একই জেলায় নারী জনপ্রতিনিধির সংখ্যা মাত্র ১১% (স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী)। এই বৈপরীত্য স্পষ্ট করে যে, সামাজিক ও রাজনৈতিক কাঠামো এখনো নারীর সমান অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে পারেনি।
জাতিসংঘের UN Women ও World Economic Forum এর Gender Gap Report (2023) অনুযায়ী, নারী নেতৃত্বে বাধার অন্যতম কারণ হচ্ছে—প্রাতিষ্ঠানিক অনীহা, অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নহীনতা এবং রাজনৈতিক প্রশিক্ষণের অভাব।
নারী নেতৃত্ব উন্নয়নের সহযাত্রী—ব্রাহ্মণবাড়িয়ার উদ্যোগ
আমি বিশ্বাস করি, নেতৃত্ব কেবল রাজনৈতিক পদে আসীন হওয়ার নাম নয়; নেতৃত্ব মানে সিদ্ধান্ত গ্রহণে সক্রিয় অংশগ্রহণ। সে লক্ষ্যেই আমি ও আমার প্রতিষ্ঠান "ভুঁইয়া ফাউন্ডেশন" ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নারী সমাজের জন্য তিনটি স্তরে কর্মসূচি চালু করেছি:
১. রাজনৈতিক প্রশিক্ষণ কর্মশালা—নারীদের রাজনৈতিক চেতনা, সংগঠন গঠন ও নেতৃত্ব দানে সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কোর্স চালু।
২. উদ্যোক্তা উন্নয়ন প্রকল্প—নারীদের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করতে ক্ষুদ্রঋণ, দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ এবং বাজার সংযোগের ব্যবস্থা।
৩. সচেতনতা ও অধিকার শিক্ষা—নারী নির্যাতন বিরোধী প্রচারণা, পারিবারিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে নারীর ভূমিকা নিয়ে সেমিনার ও জনসচেতনতা কার্যক্রম।
এই কর্মসূচিগুলো শহীদ জিয়ার সেই অমোঘ বক্তব্যকে বাস্তবায়ন করে: "নিজের ভাগ্য পরিবর্তন নিজের হাতে করতে হবে।"
আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে নারীর নেতৃত্ব: শিক্ষা ও অনুপ্রেরণা
বিশ্বের বহু দেশ নারীর নেতৃত্বে উন্নয়নের মডেল তৈরি করেছে। উদাহরণ স্বরূপ:
রুয়ান্ডা: সংসদের ৬১.৩% নারী সদস্য (IPU, 2023), যা বিশ্বের সর্বোচ্চ।
নিউজিল্যান্ড: প্রধানমন্ত্রী জাসিন্ডা আরডার্ন নারী নেতৃত্বের মানবিক মডেল স্থাপন করেন।
ফিনল্যান্ড: নারী নেতৃত্বে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক নিরাপত্তায় বৈপ্লবিক অগ্রগতি।
এই উদাহরণগুলো প্রমাণ করে—যেখানে নারীরা নেতৃত্বে, সেখানে শান্তি, অন্তর্ভুক্তি ও টেকসই উন্নয়ন সম্ভব।
বেগম খালেদা জিয়া ও বিএনপির ৩১ দফায় নারীর অবস্থান: ভবিষ্যতের ভিত্তিপ্রস্তর
শহীদ জিয়াউর রহমান যে রাজনৈতিক উত্তরাধিকারের ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন, তার ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছেন বেগম খালেদা জিয়া। তিনিই বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম নির্বাচিত নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে প্রমাণ করেছেন, নারীর নেতৃত্ব কোনো সীমারেখা মানে না। তাঁর শাসনামলে নারী শিক্ষায় অগ্রাধিকার, উপবৃত্তি কর্মসূচির বিস্তার এবং মেয়েদের বিদ্যালয়ে প্রবেশে ইতিবাচক পরিবেশ তৈরি হয়। গ্রামীণ পর্যায়ে মহিলা মেয়র ও ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যদের মাধ্যমে নারীর রাজনৈতিক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করার চেষ্টা তাঁর অন্যতম বৈপ্লবিক পদক্ষেপ।
বিএনপি ঘোষিত ৩১ দফা রূপরেখাতেও নারীর ক্ষমতায়ন একটি কেন্দ্রীয় অঙ্গীকার। এ দফাসমূহে নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রয়োগ, কর্মক্ষেত্রে নারীর নিরাপত্তা, এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে নারীর সক্রিয় অংশগ্রহণকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। বিএনপির এই রূপরেখা প্রকৃত অর্থেই একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজের রূপরেখা, যেখানে নারীকে ‘সহায়ক শক্তি’ নয়, বরং ‘প্রধান শক্তি’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে।
তারেক রহমানের উদার দৃষ্টিভঙ্গি: তরুণ নেতৃত্বে নারীর মর্যাদা প্রতিষ্ঠা
তারেক রহমান একজন আধুনিক, প্রজ্ঞাবান ও তথ্যভিত্তিক রাজনীতির প্রতিনিধি। তিনি নারীর রাজনৈতিক জাগরণে প্রযুক্তি, শিক্ষা এবং নেতৃত্ব উন্নয়নে একধাপ এগিয়ে ভাবেন। তাঁর রাজনৈতিক বক্তৃতা ও সংগঠন কাঠামোয় নারীর সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার আহ্বান বারবার উঠে এসেছে। ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গঠনের লক্ষ্যে তরুণ ও শিক্ষিত নারীদের যুক্ত করা, রাজনৈতিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন, এবং ডিজিটাল সক্ষমতার উন্নয়ন, এগুলো তাঁর ভবিষ্যত পরিকল্পনার অংশ।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এই দৃষ্টিভঙ্গি অনুসরণ করে আমরা যদি নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করি, তবে আমাদের জেলা হতে পারে একটি উদাহরণ—যেখানে শহীদ জিয়ার মূলনীতি, বেগম খালেদার আদর্শ, এবং তারেক রহমানের উদ্ভাবনী দর্শন একত্রে একটি নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতি সৃষ্টি করে।
উত্তরাধিকারের আলোকছায়ায় একটি নতুন ভোর
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মাটিতে নারী নেতৃত্বের উত্থান কোনো বিচ্ছিন্ন প্রয়াস নয়—এটি শহীদ জিয়ার রোপণ করা বীজের ফল, বেগম খালেদার স্নেহে লালিত, আর আজ তা তারেক রহমানের প্রজ্ঞায় আলোকিত। আমি বিশ্বাস করি, এই পথচলা শুধু নারীর জন্য নয়, সমগ্র সমাজের জন্য একটি নবজাগরণের বার্তা।
আমরা চাই—নারীরা হোক দায়িত্বশীল, সম্মানিত ও সিদ্ধান্তগ্রহণে সক্ষম; আর ব্রাহ্মণবাড়িয়া হোক নারীনেতৃত্বে উজ্জ্বল এক নতুন দিগন্তের নাম।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া: নারী নেতৃত্বে একটি সম্ভাবনার মানচিত্র
আমার লক্ষ্য ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে বাংলাদেশের নারী নেতৃত্বে একটি রোল মডেল জেলায় রূপান্তর করা। শুধুমাত্র আর্থিক সহায়তা নয়, সিদ্ধান্ত গ্রহণে নারীর সম্মানজনক অবস্থান নিশ্চিত করাই এই উদ্যোগের মূল চেতনা। নারীরা শুধু অনুগামী নয়, তারা হবেন পরিবর্তনের রূপকার। নেতৃত্ব তাঁদের অধিকার—এমন মানসিক পরিবর্তন আনতে আমি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
শহীদ জিয়ার আদর্শ, নারীর হাতেই ভবিষ্যৎ
শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বলেছিলেন—“Let the people take charge of their own destiny”। আজ সময় এসেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নারীরা নিজের ভাগ্য নিজেই নির্মাণ করবেন। আমি বিশ্বাস করি, যুক্তি, দায়িত্ব ও নৈতিকতাকে পাথেয় করে নারীর নেতৃত্বেই গড়ে উঠবে আগামী দিনের ব্রাহ্মণবাড়িয়া—একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক, টেকসই ও মর্যাদাবান সমাজ। নারীর শক্তিই হবে আগামীর উন্নয়ন ও রাজনীতির পথপ্রদর্শক।
আঁখি