
নিষিদ্ধ জামায়াত
সরকারের নির্বাহী আদেশে আজ বুধবারের মধ্যেই নিষিদ্ধ ঘোষণা হবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবির। এর আগে পাকিস্তানে দুই দফা এবং বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর একবার জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা হয়। যদিও পরে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করে জামায়াত। ১৯৭১ সালের পর স্বাধীন বাংলাদেশে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ থাকায় জামায়াত এর আওতায় পড়ে।
বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নিহত হওয়ার পর রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বিএনপি জামায়াতকে রাজনীতিতে ফেরার সুযোগ করে দেয়। এবার আবার জামায়াতকে নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সোমবার গণভবনে ১৪ দলের নেতাদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈঠকে জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। মঙ্গলবার দুপুরে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেন, বুধবারের মধ্যে নির্বাহী আদেশে জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করা হবে। এ ঘটনায় সারাদেশে নিরাপত্তা বাবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
২০২৩ সালের ১৯ নভেম্বর রাজনৈতিক দল হিসেবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিল (লিভ টু আপিল) আবেদন খারিজ করে দেন আপিল বিভাগ। এর ফলে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিলে হাইকোর্টের রায় বহাল থেকে যায়। প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগে এই রায় দেন।
ওই দিন আপিল বিভাগের আদেশের পর রিটকারী পক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর বলেন, নিবন্ধন বাতিলের রায়ের বিরুদ্ধে জামায়াতের আপিল খারিজ হয়ে যাওয়ায় দলটির আর কোনো অস্তিত্ব থাকল না। তাই জামায়াত আজ থেকে কোনো ধরনের রাজনৈতিক কর্মকা- পরিচালনা করতে পারবে না। কোনো মিছিল-মিটিং করতে পারবে না। অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামীর আইনজীবী অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, নিবন্ধন বাতিলের বিরুদ্ধে জামায়াতের আপিল খারিজ হলেও সংবিধান অনুযায়ী দলটি স্বাভাবিক রাজনীতি করার সুযোগ পাবে। জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার কোনো সুযোগ নেই।
এদিকে কোন প্রক্রিয়ায় জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করা হবে, জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের মধ্যে এ প্রশ্নের জবাব রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন, ‘বুধবারের মধ্যে একটা ব্যবস্থা নেওয়ার। এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বসব। সেখানে আমরা সিদ্ধান্ত নেব কোন আইনি প্রক্রিয়ায় হবে। সেটা যখন আমরা সিদ্ধান্ত নেব, তখন বলব। এর মানে বুধবারের মধ্যেই কি এ সিদ্ধান্ত হবেÑ এ বিষয়ে তিনি বলেন, ইনশাআল্লাহ। কোনো দলকে যদি নিষিদ্ধ করা হয়, তখন সেটি নির্বাহী আদেশেই হয়। সেটি কোনো বিচার বিভাগীয় আদেশে হয় না।’
আন্দোলন চলমান, এর মধ্যে জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ করে পরবর্তী সময় সরকার আবার ঝামেলায় পড়বে কি না, এ বিষয়ে আনিসুল হক বলেন, দেখেন এই যে নৃশংসতা, যেটি গত ১৬ জুলাই থেকে চালানো হয়েছে। কোটাবিরোধী আন্দোলনের নামে যে সহিংসতা চালানো হয়েছে, যারা কোটাবিরোধী আন্দোলন করছেন তারা জানিয়েছেন, এ সহিংসতার সঙ্গে তাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই...। সেক্ষেত্রে আমাদের কাছে তথ্য-উপাত্ত আছে, জামায়াত-বিএনপি ও ইসলামী ছাত্রশিবির, ছাত্রদলের যারা জঙ্গি তারাই এটা করেছে। আইনমন্ত্রী বলেন, এই দলটাকে যদি নিষিদ্ধ করা হয় তাহলে আইনশৃঙ্খলা এবং দেশের রাজনীতিরও অনেক উন্নতি হবে।
তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধের দায়ে বিচার করা এক কথা, আর জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা আরেক কথা। যুদ্ধাপরাধের দায়ে জামায়াত নিষিদ্ধে আইন (আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন) পরিবর্তন বা সংশোধনের যে কথা আমরা লিখেছি। সংশোধন হলেও সেটা হবে, সেটা হলে যেটা হবে, যুদ্ধাপরাধী হিসেবে জামায়াতের বিচার করা হবে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধনের বিষয়টি অনেক বছর ধরে ঝুলে আছে, এ বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, এটা আপনারা দেখবেন পরে।
২০০৮ সালের ৪ নভেম্বর জামায়াতকে সাময়িক নিবন্ধন দেওয়া হয়। পরের বছর বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের তৎকালীন সেক্রেটারি জেনারেল সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরী, জাকের পার্টির তৎকালীন মহাসচিব মুন্সি আবদুল লতিফ, সম্মিলিত ইসলামী জোটের প্রেসিডেন্ট মাওলানা জিয়াউল হাসানসহ ২৫ জন জামায়াতের নিবন্ধনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ রিট দায়ের করেন।
তারা জামায়াতের নিবন্ধন বাতিলের আরজি জানান। সেই রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক (পরে প্রধান বিচারপতি) ও বিচারপতি মো. আবদুল হাইয়ের হাইকোর্ট বেঞ্চ ২০০৯ সালের ২৭ জানুয়ারি রুল জারি করেন। ছয় সপ্তাহের মধ্যে বিবাদীদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়।
রুল জারির পর একই বছরের ডিসেম্বরে একবার, ২০১০ সালের জুলাই ও নভেম্বরে দু’বার এবং ২০১২ সালের অক্টোবর ও নভেম্বরে দুবার জামায়াত তাদের গঠনতন্ত্র সংশোধন করে নির্বাচন কমিশনে জমা দেয়। এসব সংশোধনীতে দলের নাম ‘জামায়াতে ইসলামী, বাংলাদেশ’ পরিবর্তন করে ‘বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী’ করা হয়।
পরে ২০১৩ সালের ১২ জুন ওই রুলের শুনানি শেষ হলে যে কোনো দিন মামলার রায় দেবেন বলে জানিয়ে অপেক্ষমাণ (সিএভি) রাখেন হাইকোর্টের বৃহত্তর (লার্জার) বেঞ্চ। পরে জামায়াতকে দেওয়া নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নিবন্ধন ২০১৩ সালের ১ আগস্ট সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে ‘অবৈধ’ বলে রায় দেন বিচারপতি এম মোয়াজ্জেম হোসেন, বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি কাজী রেজা-উল-হকের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের বৃহত্তর (লার্জার) বেঞ্চ। এ সময় সংক্ষিপ্ত রায়ে আদালত বলেন, এ নিবন্ধন দেওয়া আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত।
একই সঙ্গে আদালত জামায়াতকে আপিল করারও অনুমোদন দেন। তবে এ রায়ের স্থগিতাদেশ চেয়ে জামায়াতের করা আবেদন একই বছরের ৫ আগস্ট খারিজ করে দেন আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী। পরে একই বছরের ২ নভেম্বর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হলে জামায়াতে ইসলামী আপিল করে।
নির্মূল কমিটি অভিনন্দন ॥ জামাত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি। মঙ্গলবার একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংগঠনটির উপদেষ্টা পরিষদ ও কেন্দ্রীয় কমিটির এক যৌথ সভা অনুষ্ঠিত হয়। একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শিক্ষাবিদ শহীদজায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সভার শুরুতে সাম্প্রতিক কোটা আন্দোলনে নিহতদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
সভায় বিলম্বে হলেও যুদ্ধাপরাধী ও সন্ত্রাসী সংগঠন জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানানো হয়। প্রস্তাবে বলা হয়, কেবল দল বা সংগঠন হিসেবে নয়, তাদের আদর্শিক ভিত্তি, অর্থাৎ মওদুদীবাদী রাজনীতিকেও নিষিদ্ধ করতে হবে। এ ছাড়াও যুদ্ধাপরাধী সংগঠন হিসেবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারের দাবি জানানো হয় এ যৌথ সভায়।
সভায় গৃহীত প্রস্তাবে আরও বলা হয়, প্রতিষ্ঠার পর থেকে জামায়াতে ইসলামী ও তাদের সহযোগী সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো ধর্মের নামে যে হত্যা, নির্যাতন ও নৈরাজ্যের অপরাজনীতি চালিয়েছে, সে বিষয়ে তদন্তের জন্য সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতির সমন্বয়ে একটি কমিশন গঠন করতে হবে। এই কমিশনের মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধী ও সন্ত্রাসী জামায়াত-শিবিরের নিয়ন্ত্রণাধীন আর্থিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বিষয়ে তদন্ত করতে হবে। ধর্মকে ব্যবহার করে অপরাজনীতির পাশাপাশি মৌলবাদী অর্থনীতির যে বিশাল সাম্রাজ্য গড়ে উঠেছে, সে বিষয়েও তদন্ত করতে হবে কমিশনকে।
উদ্ভূত সংকটময় মুহূর্তে করণীয় নির্ধারণের জন্য সমমনা সংগঠনগুলোর সঙ্গে মতবিনিময় করে কর্মসূচি প্রণয়নের বিষয়েও প্রস্তাব গৃহীত হয় একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির এ যৌথ সভায়। স্বাক্ষরদাতারা হলেন শহীদজায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী, লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির, ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ, শহীদজায়া সালমা হক, অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, বীর মুক্তিযোদ্ধা সাংবাদিক শফিকুর রহমান এমপি, সমাজকর্মী আরমা দত্ত এমপি, বীর মুক্তিযোদ্ধা শিল্পী আবুল বারক আলভী, অধ্যাপিকা মাহফুজা খানম, শিক্ষাবিদ মমতাজ লতিফ, বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক ডা. আমজাদ হোসেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা ভূ-তত্ত্ববিদ মো. মকবুল-এ ইলাহী চৌধুরী, বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিকুর রহমান শহীদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা সুব্রত চক্রবর্ত্তী জুয়েল, যাত্রাশিল্পী মিলন কান্তি দে, বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রকৌশলী কাজী কামাল ইকরাম, বীর মুক্তিযোদ্ধা রোকেয়া কবীর, মানবাধিকার নেতা কাজল দেবনাথ, অ্যাডভোকেট মো. আজহার উল্লাহ ভূঁইয়া, সমাজকর্মী কামরুননেসা মান্নান, ড. কানিজ আকলিমা সুলতানা, নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আলী শিকদার (অব.), ডা. ইকবাল কবীর, অধ্যাপক মো. আলমগীর কবীর, সমাজকর্মী কাজী মুকুল, শহীদ সন্তান তানভীর হায়দার চৌধুরী শোভন, অধ্যাপক ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া, অধ্যাপক রতন সিদ্দিকী, অধ্যাপক চন্দ্রনাথ পোদ্দার, অ্যাডভোকেট এম সাঈদ আহমেদ রাজা, শহীদ সন্তান আসিফ মুনীর তন্ময়, শহীদ সন্তান নূজহাত চৌধুরী শম্পা, সাংবাদিক শওকত বাঙালি, অধ্যক্ষ কামরুজ্জামান, ব্যারিস্টার তাপস কান্তি বল, লেখক ব্লগার মারুফ রসূল, অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব, ডা. মফিজুল ইসলাম মান্টু, সাংবাদিক হারুন আর রশিদ, সংস্কৃতিকর্মী কাজল ঘোষ, সংস্কৃতিকর্মী শামসুল আলম সেলিম, সমাজকর্মী আবু সাদাত মো সায়েম, সংস্কৃতিকর্মী আব্দুল লতিফ চঞ্চল, চারু“শিল্পী ফুলেশ^রী প্রিয়নন্দিনী, চলচ্চিত্র নির্মাতা ইসমাত জাহান, ছাত্রনেতা পলাশ সরকার, সাংবাদিক মহেন্দ্রনাথ সেন, সংস্কৃতিকর্মী শাহীন উদ্দিন আহমেদ, সমাজকর্মী কেশব রঞ্জন সরকার, অ্যাডভোকেট দীপক ঘোষ, সমাজকর্মী এবিএম মাকসুদুল আনাম, অ্যাডভোকেট মালেক শেখ, সমাজকর্মী কামরুজ্জামান অপু, ছাত্রনেতা হারুণ অর রশিদ, ছাত্রনেতা অপূর্ব চক্রবর্তী, লেখক আলী আকবর টাবি, চলচ্চিত্র নির্মাতা লুবনা শারমিন, সহকারী অধ্যাপক শরীফ নূরজাহান, চারুশিল্পী শেখ শাহনেওয়াজ আলী পরাগ, সাংবাদিক আবু সালেহ রনি, চলচ্চিত্র নির্মাতা সাইফ উদ্দিন রুবেল, ব্যারিস্টার নাদিয়া চৌধুরী, ড. তপন পালিত, চলচ্চিত্র নির্মাতা পিন্টু সাহা, সমাজকর্মী হাসান আব্দুল্লাহ বিপ্লব, রতœদীপ দাস রাজু, সাংবাদিক সাইফ রায়হান, সমাজকর্মী শিমন বাস্কে, আবৃত্তিশিল্পী মো. শওকত আলী, শহীদ সন্তান সাংবাদিক জাহিদ রেজা নূর, অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান বাবু, সমাজকর্মী পূর্ণিমা রানী শীল, ড. তানজীর মান্নান রূপন, অনলাইন এক্টিভিস্ট এএসএম শরিফুল হাসান, চারুশিল্পী ইফতেখার খান বনি, সমাজকর্মী আলমগীর কবির, সমাজকর্মী মো. হেলালউদ্দিন, সমাজকর্মী সুমনা লতিফ, সংস্কৃতিকর্মী শামস রশীদ জয়, ডা. সাদমান সৌমিক সরকার, আবৃত্তিশিল্পী আরেফিন অমল, মানবাধিকারকর্মী ফয়সাল হাসান তানভীর, সমাজকর্মী প্রাণতোষ তালুকদার, সমাজকর্মী আবদুল হালিম বিপ্লব, সমাজকর্মী কাজী রেহান সোবহান, সমাজকর্মী মো. আবদুল্লাহ, অ্যাডভোকেট আবদুল মালেক, সাংবাদিক দীলিপ মজুমদার, সংস্কৃতিকর্মী রাশেদুল ইসলাম রাশেদ।
জাসদের অভিনন্দন ॥ ১৪ দলের সভায় চিহ্নিত সন্ত্রাসবাদী সংগঠন জামায়াত ও শিবিরকে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ)। মঙ্গলবার জাসদের কেন্দ্রীয় কার্যকরী কমিটি থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ কথা জানানো হয়। এতে বলা হয়, ২৯ জুলাই সন্ধ্যায় বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় কেন্দ্রীয় ১৪ দলের সভায় চিহ্নিত সন্ত্রাসবাদী সংগঠন জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে।
জাসদ কেন্দ্রীয় কমিটি বলেছে, চিহ্নিত সন্ত্রাসবাদী সংগঠন জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্র শিবিরকে নিষিদ্ধ করার দাবি যখন উঠেছিল তখনই নিষিদ্ধ করা হলে ২০১৩, ২০১৪, ২০১৫ এর সন্ত্রাসবাদী ধ্বংসাত্মক তা-ব দেখার পর ২০২৪ সালে জুলাই মাসে সরকারি চাকরিতে কোটা আন্দোলনের মুখোশে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবির এবং তাদের রাজনৈতিক পার্টনারদের সুপরিকল্পিত সহিংসতা, নাশকতা দেখতে হত না।
জাসদ কেন্দ্রীয় কমিটি ১৪ দলের সিদ্ধান্তের আলোকে সন্ত্রাসবাদী সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ করে প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে অবিলম্বে প্রজ্ঞাপন জারি করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। জাসদ একইসঙ্গে সন্ত্রাসবাদী জামাতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্র শিবিরের বিভিন্ন পর্যায়ে যুক্ত ব্যক্তিদেরও সন্ত্রাসবাদী হিসেবে চিহ্নিত করে তাদের তালিকাও প্রকাশ করার দাবি জানিয়েছে।
গণজাগরণ মঞ্চের স্বাগত ॥ পৃথক এক বিবৃতিতে জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানায় গণজাগরণ মঞ্চ। মঞ্চের নেতা ডা. ইমরান এইচ সরকার মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে বলেন, গণমাধ্যমসূত্রে আমরা জেনেছি, সন্ত্রাস, নৈরাজ্য, হত্যাকা-ের মাধ্যমে দেশকে অকার্যকর করার ষড়যন্ত্রের প্রেক্ষিতে সরকার জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধের এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি ও জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিতে ২০১৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি শুরু হওয়া গণজাগরণ মঞ্চের ছয় দফা দাবির মধ্যে এটি ছিল অন্যতম। দীর্ঘ দশ বছরের অধিক সময় পর এই দাবি মেনে নিয়ে উদ্যোগকে স্বাগত জানায় গণজাগরণ মঞ্চ।
তিনি আরও বলেন, কিন্তু সরকারের এই দীর্ঘ কালক্ষেপণ দেশকে অরাজকতার যে প্রান্তে এনে দাঁড় করিয়েছে, তার ভুক্তভোগী হচ্ছেন জনগণ। এটা সত্যিই আশ্চর্যের যে, আদালতের রায়সহ গণজাগরণ মঞ্চের সপ্রমাণ দাবির পরও জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাস, নৈরাজ্য ও জঙ্গিবাদের বীভৎসতা বুঝতে সরকারের এত দীর্ঘ সময় লাগল। উচ্চ আদালতের রায়ের প্রেক্ষিতে ২০১৩ সালে যখন এই যুদ্ধাপরাধী সংগঠনটির নিবন্ধন বাতিল করেছিল নির্বাচন কমিশন, তখনই তাদের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হলে তা আরও কার্যকর হতো।
গণজাগরণ মঞ্চের দাবি উত্থাপনের দীর্ঘ ১০ বছর পর জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও, দেশের নানা স্তরে এমনকি খোদ সরকারি দলের মধ্যেও জামায়াত-শিবির ও তাদের জঙ্গিমনস্কতার ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। এই ভাইরাস দূরীকরণে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণেরও জোর দাবি জানায় গণজাগরণ মঞ্চ।
জামায়াতে ইসলামীর প্রতিবাদ ॥ জামায়াতে ইসলামী ও শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্তের আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ জানিয়েছে সংগঠনটি। মঙ্গলবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের সিদ্ধান্তের নিন্দা জানিয়ে দলটি বলেছে, জামায়াত নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত বেআইনি, এখতিয়ারবহির্ভূত ও সংবিধান পরিপন্থি।
বিবৃতিতে জামায়াতের আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেন, একটি রাজনৈতিক দল বা জোট অন্য একটি রাজনৈতিক দলের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। বাংলাদেশের আইন ও সংবিধান কাউকে এ এখতিয়ার দেয়নি। কোটা সংস্কার আন্দোলনে ছাত্রলীগ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালিয়েছে দাবি করে জামায়াতের আমির বলেন, নিজেদের অপকর্মের দায় এড়াতে সরকার শুরু থেকেই মিথ্যাচার করছে। রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে জামায়াত ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের ওপর দোষারোপ করে বক্তব্য দিচ্ছে সরকার।