
প্লাস্টিককে পরিবেশের বিষ হিসেবে আখ্যায়িত করে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস দূষণ রোধ ও পরিবেশ সুরক্ষায় প্লাস্টিক বর্জনের জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘প্লাস্টিক পরিবেশের বিষ। এটা কেবল মানুষ নয়, পৃথিবীর সব প্রাণীর জন্য ক্ষতিকর। পৃথিবীতে প্রতিদিন মানুষ বাড়ছে, বাংলাদেশেও বাড়ছে, এর সঙ্গে বাড়ছে জনপ্রতি প্লাস্টিকের ব্যবহার। আসুন আমরা এ বিষয়ে সচেতন হই এবং আজ থেকে মনে মনে ঠিক করি প্লাস্টিক বর্জন করব।’
বুধবার রাজধানীর বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে বিশ্ব পরিবেশ দিবস ও পরিবেশ মেলা ২০২৫-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধান উপদেষ্টা যথার্থই বলেন, ‘জীবন বাঁচাতে হলে পরিবেশ বাঁচাতে হবে। পরিবেশ ধ্বংস করা থেকে বিরত থাকতে হবে। পরিবেশ বিপর্যয় রোধ করতে পারলে আমরা সুন্দর পৃথিবী উপভোগ করতে পারব।’
আমাদের বাসভূমি পৃথিবীর প্রতিপক্ষ হিসেবে দেখা হচ্ছে মাইক্রোপ্লাস্টিককে। প্লাস্টিকের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কণাই হলো মাইক্রোপ্লাস্টিক, যা শুধু মানুষ নয়, সকল প্রাণের জন্যই ঝুঁকিপূর্ণ। পাঁচ মিলিমিটারের চেয়ে ছোট প্লাস্টিকের কণাকে মাইক্রোপ্লাস্টিক বলা হয়। গঙ্গা অববাহিকার মতো বড় একটি নদীব্যবস্থার পানি, পলি এবং বাতাসে মাইক্রোপ্লাস্টিকের কণার হিসাব করা হয়েছে। গবেষণায় দেখা যায়, পানি ও পলির সঙ্গে মিলে মাইক্রোপ্লাস্টিকের কণা মিশছে বঙ্গোপসাগরে। গবেষণায় ধারণা করা হয়েছে, বিপুল পরিমাণ মাইক্রোপ্লাস্টিক পলিতে জমে যাচ্ছে। দেখা গেছে, যেখানে জনঘনত্ব বেশি, সেখানে পানি ও বায়ুতে, বিশেষ করে মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি বেশি।
বিশ্ব পরিবেশ দিবস এলে প্লাস্টিক দূষণের কথা জোরেশোরে উচ্চারিত হয়। তারপর সব ভুলে যাওয়া। একবিন্দু পরিমাণ দূষণ কমে না। প্লাস্টিকের ব্যবহারে কোনো পরিবর্তন আসে না। পলিথিনের ব্যবহার নিষিদ্ধ করে আইন করা হলেও কার্যকর প্রয়োগের অভাবে প্লাস্টিক থেকে পরিবেশ দূষণ শুধু অব্যাহতই নয়, বরং উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। প্লাস্টিক বর্জ্যসহ ব্যাপকভাবে বর্জ্য ফেলার কারণে বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু, শীতলক্ষ্যা ও কর্ণফুলী নদী বাংলাদেশের অন্যতম দূষিত নদীতে পরিণত হয়েছে। প্লাস্টিক দূষণের কারণে আমাদের বাস্তুতন্ত্র ও ভূমির ব্যাপক দূষণ ঘটায় গাছপালা ও অন্যান্য প্রাণীর অস্তিত্ব আজ হুমকির সম্মুখীন। এছাড়া জৈব রাসায়নিক সারে প্রচুর পরিমাণে মাইক্রোপ্লাস্টিক থাকায় তা কৃষিকাজে ব্যবহারের ফলে স্থায়ীভাবে মাটি দূষিত হচ্ছে। নদীপাড়ের প্লাস্টিক মাইক্রোপ্লাস্টিকে রূপান্তরিত হয়ে নদীতে মিশতে পারে। তা হতে পারে মাছের খাদ্য। সেই মাছ মানুষ খেলে তাদের শরীরেও প্রবেশ করতে পারে প্লাস্টিক।
প্লাস্টিক দূষণ বাঁচাতে কেবল আমাদের সচেতন হলেই চলবে না, বৈশ্বিকভাবেই এই সচেতনতা গড়ে তোলা জরুরি। তা না হলে এই দূষণে মানবজাতিরই হবে অনিবার্য ক্ষতি।
প্যানেল