ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৫ জুন ২০২৫, ১১ আষাঢ় ১৪৩২

ঝুঁকিতে শ্রমবাজার

প্রকাশিত: ১৮:১১, ২৫ জুন ২০২৫

ঝুঁকিতে শ্রমবাজার

বাংলাদেশের অর্থনীতি তথা প্রবাসী আয়ের অন্যতম উৎস বিদেশে কর্মসংস্থান। রপ্তানি আয়ের অন্যতম উৎসও বটে। দেশের বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভের এটি প্রধান অবলম্বন। তৈরি পোশাক খাতের পরই এর অবস্থান। বিদেশে শ্রমবাজার ও কর্মসংস্থানের প্রধান উৎস মধ্যপ্রাচ্য। তবে ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক একযোগে ইরানে পারমাণবিক স্থাপনাসহ ভয়াবহ হামলা ও যুদ্ধের প্রভাব অচিরেই পড়তে যাচ্ছে বাংলাদেশের শ্রমবাজারে। বিদেশে বাংলাদেশিদের কর্মসংস্থান শুরু থেকেই শীর্ষে রয়েছে সৌদি আরব। এখন পর্যন্ত বিদেশে যাওয়া কর্মীদের ৩৪ শতাংশের কর্মসংস্থান হয়েছে দেশটিতে। চলতি বছরের মে পর্যন্ত ৫ মাসে দেশ ছেড়ে যাওয়া ৭৬ শতাংশই গেছেন সৌদি আরবে। তবে এ শ্রমবাজার সংকুচিত হয়ে আসছে দ্রুত। এখন সে দেশে বাংলাদেশি নারী কর্মীর সংখ্যাও কমছে। চলতি জুন থেকে ভিসা বন্ধ রেখেছে সৌদি আরব। জুলাইয়ে আসতে পারে নতুন ঘোষণা। 
অন্যদিকে বাংলাদেশিদের জন্য দ্বিতীয় বৃহত্তম শ্রমবাজার সংযুক্ত আরব আমিরাত, তৃতীয় স্থানে রয়েছে ওমান, যেটি বন্ধ রয়েছে গত বছর থেকে। অবশ্য এটি চালু করতে আলাপ-আলোচনা চলছে। গত বছরের জুন থেকে বন্ধ রয়েছে অত্যন্ত সম্ভাবনাপূর্ণ মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার, এটিও দ্রুত চালু করার জন্য উদ্যোগ চলমান। সম্ভাবনাময় শ্রমবাজার জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ায় শ্রমজীবী পাঠানো যাচ্ছে না ভাষা সমস্যাসহ দক্ষ শ্রমিকের অভাবে। এর মধ্যে দীর্ঘদিন থেকে চলমান মধ্যপ্রাচ্য সংকট এবং সর্বশেষ ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় আরও ঝুঁকিতে পড়েছে মধ্যপ্রাচ্যের শ্রমবাজার। ফলে বিশ্ববাজারে তেলের দাম বাড়ছে। তৈরি পোশাক রপ্তানি রয়েছে হুমকিতে। তদুপরি সংকুচিত হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের শ্রমবাজার। 
রেমিটেন্স প্রবাহ বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকারের নানা পদক্ষেপের মধ্যে বৈধভাবে ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিটেন্স পাঠাতে কর্মীদের উৎসাহিত করা; অধিক কর্মী পাঠানো উল্লেখযোগ্য। অধিক রেমিটেন্স পাঠাতে উৎসাহিত করার জন্য প্রবাসী ওয়েজ আর্নারদের জন্য সরকার কর্তৃক বাণিজ্যিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি এবং বিশেষ নাগরিক সুবিধা প্রদানের ব্যবস্থা করেছে। ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করতে রেমিটেন্সের কোনো বিকল্প নেই এবং তা আনতে হবে বৈধ পথে।  
বর্তমানে ১৬৮টি দেশে শ্রমশক্তি রপ্তানি করা হচ্ছে। সরকার মধ্যপ্রাচ্যকেন্দ্রিক শ্রমবাজার নির্ভরতা কমাতে চায়। সেজন্য পূর্ব ইউরোপ ও পূর্ব এশিয়ার নতুন কিছু দেশে শ্রমিক রপ্তানির চেষ্টা চলছে। বাংলাদেশ একটি উচ্চ রেমিটেন্সপ্রাপ্ত দেশ। তবে বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যে চরম অস্থিরতা বিরাজ করায় এটি রয়েছে সমূহ-ঝুঁকিতে। প্রবাসী শ্রমিকদের পাঠানো অর্থে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি যেমন ঘটেছে, তেমনি বেঁচে আছে তাদের ওপর নির্ভরশীল লাখ লাখ পরিবার। পরিতাপের বিষয়, এই শ্রমিকদের অভিবাসন প্রক্রিয়াকে এখনো পুরোপুরি নিরাপদ করা যায়নি। অবসান হয়নি তাদের দুর্ভোগ ও বঞ্চনার। এক্ষেত্রে মূল সমস্যা হচ্ছে অশিক্ষা ও অদক্ষতা। একজন অভিবাসী এখনো তার ন্যায্য প্রাপ্য ও অধিকার সম্পর্কে জানেন না। দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির অন্যতম প্রধান খাত প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স। প্রবাসীদের টাকায় লেগে আছে তাদের শ্রম-ঘাম, অশ্রু ও দীর্ঘশ্বাস। এই শ্রমিকদের জীবন নিরাপদ ও স্বস্তিকর হোক- এটাই প্রত্যাশা।

প্যানেল

×