
ছবি: সংগৃহীত
এক সময় ‘বাবা দিবস’ ছিল শুধুই বিদেশি সংস্কৃতির অংশ—পশ্চিমা সমাজে পালিত এক আবেগঘন পারিবারিক উপলক্ষ্য। কিন্তু সময়ের ধারায় বদলেছে চিত্র। বাংলাদেশেও এ দিনটি এখন ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ছে শহরাঞ্চলের আবেগময় সমাজজীবনে। যদিও জাতীয়ভাবে এখনো এটি সরকারি ক্যালেন্ডারে জায়গা পায়নি, তবে অনেক পরিবারে এই দিনটি হয়ে উঠছে শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও আত্মিক বন্ধনের এক নীরব বহিঃপ্রকাশ।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ১৯৯০-এর দশকের শেষভাগ থেকে আন্তর্জাতিক দিবসগুলোর প্রতি বাংলাদেশের আগ্রহ বাড়তে শুরু করে। ‘মা দিবস’ যেখানে অনেক আগেই জনপ্রিয়তা পেয়েছে, ‘বাবা দিবস’ তার পথচলা শুরু করে মূলত ২০০৫ সালের পর থেকে।
প্রথমদিকে এটি সীমাবদ্ধ ছিল শহরের ইংরেজি মাধ্যম স্কুল, কর্পোরেট পরিবার কিংবা বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে কর্মরতদের মধ্যে। এক কর্পোরেট কর্মকর্তা স্মরণ করেন, “২০০৮ সালে আমার ছেলে স্কুল থেকে ফিরে এসে বলেছিল, ‘Happy Father’s Day’। ওর মুখেই প্রথম শুনি এমন কোনো দিনও আছে। সেদিনই অনুভব করেছিলাম—বাবারাও একটা বিশেষ দিনের যোগ্য।”
২০১০ সালের পর থেকে দেশের প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় 'বাবা দিবসকে' কেন্দ্র করে ফিচার, নাটক ও উপসম্পাদকীয় প্রকাশ পেতে শুরু করে। ২০১৫ সালের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বিস্তারের কারণে এই দিবসটি তরুণদের মধ্যে নতুন মাত্রা পায়—ছবি শেয়ার, আবেগঘন ক্যাপশন, ভিডিও বার্তা ও বাবাকে নিয়ে লেখা কবিতা যেন হয়ে ওঠে একটি ট্রেন্ড।
বর্তমানে কিছু ইংরেজি মাধ্যম ও প্রাইভেট স্কুলে ‘বাবা দিবস’ উপলক্ষ্যে ছোট ছোট অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বাবা-সন্তানের বন্ধনকে গুরুত্ব দিয়ে তারা চিঠি লেখা, কবিতা আবৃত্তি কিংবা কার্ড তৈরির মতো কার্যক্রমের আয়োজন করে। এমনকি কিছু বিশ্ববিদ্যালয়েও দেখা যায় Father’s Day-themed ক্যাম্পেইন।
তবে গ্রামবাংলার বাস্তবতায় এখনো এই দিনটি অতটা পরিচিত নয়। অনেক জায়গাতেই বাবা দিবস সম্পর্কে জানেই না অনেকে। একজন কৃষক বলেন, “মা দিবস শুনেছি, কিন্তু বাবা দিবস আবার কবে হলো?”
বিশ্লেষকরা বলছেন, বাবা দিবস আসলে এক আত্মপ্রকাশ—সেই পুরুষটির জন্য, যিনি পরিবারকে আগলে রেখেছেন নীরবে, নিঃশব্দে, চুপচাপ। এক তরুণী ফেসবুকে লিখেছেন, “বাবা হচ্ছেন সেই ব্যক্তি, যাঁর সবচেয়ে বড় দুঃখ হলো—সন্তান যেন কখনো দুঃখ না পায়।”
যদিও এখনো রাষ্ট্রীয়ভাবে দিবসটির কোনো স্বীকৃতি নেই, তবু শহুরে মধ্যবিত্ত সমাজে ‘বাবা দিবস’ হয়ে উঠছে এক আবেগঘন উপলক্ষ্য—যেখানে শ্রদ্ধা মিশে যায় নীরব ভালোবাসায়।
সময়ের সাথে সাথে হয়তো এই নিঃশব্দ দিবসটিও একদিন বাংলাদেশের প্রতিটি ঘরে শব্দ তুলবে ভালোবাসার, শ্রদ্ধার, কৃতজ্ঞতার।
Mily