
নার্সিং একটি গুরুত্বপূর্ণ ও মানবসেবামূলক পেশা হলেও আমাদের দেশে এটি এখনো অবহেলিত। বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে নার্সিং পেশায় নিয়োজিত কর্মকর্তাদের জন্য নিদিষ্ট সময় পরপর পদোন্নতির বিধান থাকা সত্ত্বেও বাস্তবে অধিকাংশ নার্সিং কর্মকর্তা দীর্ঘ ৩০-৩২ বছর একই পদে (গ্রেড-১০) কর্মরত থেকে অবসর নিতে বাধ্য হচ্ছেন। এছাড়া অল্প কিছু সংখ্যক নার্সিং কর্মকর্তা কর্মজীবনের শেষ পর্যায়ে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে মাত্র একবার পদোন্নতি পেয়ে ১ম শ্রেণিতে (৯ম গ্রেডে) পৌঁছান এবং তার ১-৬ মাসের মধ্যে অবসর গ্রহণ করেন। এর ফলে পেশা জীবনের শেষ পর্যায়ে এসে তারা যথাযথ মর্যাদা ও সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন । এসকল বিষয়ের জন্য নার্সিং পেশার প্রতি অনাগ্রহ দেখা দিয়েছে। যা সেবার মান এবং স্বাস্থ্য খাতের সার্বিক উন্নয়নে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
বাংলাদেশের সকল পেশায় বিএসসি এবং ডিপ্লোমা কোর্সের জন্য সরকারি চাকরির নিয়োগবিধি আলাদা হয়ে থাকে। কিন্তু নার্সিং পেশায় বিএসসি ইন নার্সিং (৪ বছর মেয়াদি) এবং ডিপ্লোমা ইন নার্সিং (৩ বছর মেয়াদি) এর শিক্ষাগত যোগ্যতা আলাদা হওয়া সত্ত্বেও নার্সিংয়ের সরকারি নিয়োগে উভয় কোর্সের ক্ষেত্রেই একই এন্ট্রি পোস্ট (দশম গ্রেড) রাখা হয়েছে।যা নার্সিং পেশায় এক চরম বৈষম্যের জন্ম দিয়েছে।
বাংলাদেশে নার্সিং শিক্ষাকে আধুনিকীকরণ করার লক্ষ্যে ২০০৮ সালে নতুন কারিকুলাম অনুযায়ী চার বছর মেয়াদি বিএসসি ইন নার্সিং কোর্স চালু হলেও উক্ত কোর্সের জন্য যুগোপযোগী নিদিষ্ট কোনো নিয়োগবিধি চালু হয়নি। এর ফলে বিএসসি ইন নার্সিং কোর্সের শিক্ষার্থীদের মাঝে অসন্তোষ বিরাজ করছে এবং পড়াশোনায় আগ্রহ হারিয়ে ক্যারিয়ার নিয়ে হতাশায় ভুগছে।
২০১৬ সালে নার্সিং ও মিডওয়াইফারী অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠিত হলেও এর আওতাধীন সেবা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়োগবিধি ও অর্গানোগ্রাম এখনো পরিদপ্তরের পুরনো কাঠামোর আদলে রয়ে গেছে, যা বর্তমান সময়ের চাহিদার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। নার্সিং পেশায় শিক্ষা, সেবা এবং প্রশাসন শাখাগুলো লক্ষ্য করা গেলেও এসকল শাখার জন্য কোনো যুগোপযোগী অর্গানোগ্রাম ও নিয়োগবিধি এখনো তৈরি হয়নি।
অধিকাংশ ক্ষেত্রে পুরনো নিয়মেই নার্সিং কর্মকর্তাগণ দশম গ্রেডে স্থায়ী থেকেই নিজ বেতনে সংযুক্তিতে অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে এসকল শাখার কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে, যা নার্সিং পেশার উন্নয়নের অন্তরায়।
এমতাবস্থায় নার্সিং শিক্ষা, সেবা এবং প্রশাসন শাখাসমূহে যুগোপযোগী অর্গানোগ্রাম ও নিয়োগবিধি তৈরি করে প্রথম শ্রেণির পদসমূহে (৯ম গ্রেডে) যোগ্যতার ভিত্তিতে পদন্নোতি এবং সরাসরি প্রফেশনাল বিসিএস চালুর মাধ্যমে নিয়োগ কার্যক্রম শুরু করা এখন সময়ের যৌক্তিক দাবি।
মিজানুর রহমান বিদ্যুৎ
বিএসসি ইন নার্সিং (রামেবি),
রেজিস্টার্ড নার্স (বিএনএমসি)
প্যানেল