ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০৩ মে ২০২৫, ২০ বৈশাখ ১৪৩২

বুলেটের নিচে বিকশিত হতে চাওয়া একটি বসন্তের নাম কাশ্মীর

মুহাম্মদ ওমর ফারুক

প্রকাশিত: ১৯:৩১, ২ মে ২০২৫

বুলেটের নিচে বিকশিত হতে চাওয়া একটি বসন্তের নাম কাশ্মীর

ছবি: সংগৃহীত

কাশ্মীর—পৃথিবীর বুকের এক অপার সৌন্দর্যের নাম। তুষারে ঢাকা পাহাড়, নদী আর ফুলে ফুলে ভরা উপত্যকা যেন প্রকৃতির নিখুঁত এক ক্যানভাস। কিন্তু এই রূপকথার ভূমি দীর্ঘদিন ধরে বাস্তবের নির্মমতার মুখোমুখি। গোলাগুলি, সেনা ছাউনির চাপ, রাজনৈতিক উত্তেজনা আর ভয়ের পরিবেশে এখানকার মানুষের জীবন হয়ে উঠেছে অবরুদ্ধ। বসন্ত এলেও সে আর উৎসব নয়, বরং নিঃশব্দ এক দীর্ঘশ্বাস।

১৯৪৭ সালে ভারত বিভাজনের পর থেকেই কাশ্মীর হয়ে উঠেছে একটি জটিল ভূ-রাজনৈতিক সমস্যার কেন্দ্রবিন্দু। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে অন্তহীন দাবিদাওয়ার লড়াইয়ে কাশ্মীর যেন এক দাবার বোর্ড—যেখানে সবচেয়ে বড় মূল্য দিতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। তিনটি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ, অগণিত সংঘর্ষ আর কূটনৈতিক টানাপড়েনের মাঝখানে এই ভূখণ্ড হারিয়েছে তার স্বাভাবিক গতি, স্বপ্ন ও স্বাধীনতা।

পেহেলগাম, পুলওয়ামা, অনন্তনাগ কিংবা শ্রীনগর—কাশ্মীরের প্রতিটি কোণার গল্পেই আছে বিস্ফোরণ, প্রাণহানি, নিরুদ্দেশ হওয়া, কিংবা রাতারাতি সেনা অভিযানের বেদনা। প্রতিদিনের জীবন চলে বুলেটপ্রুফ গাড়ি, সিকিউরিটি চেকপোস্ট আর কারফিউর মাঝে। রাতে শিশুরা ঘুমায় গুলির শব্দে; সকালে স্কুলে যায় সেনার চোখের সামনে দিয়ে।

‘বাহার’—কাশ্মীরি বসন্ত। মার্চ-এপ্রিলে যখন বরফ গলে মাঠে ঘাস গজায়, বাদাম গাছে ফুল ফুটে, তখন প্রকৃতি জানান দেয় জীবনের এক নতুন শুরু। কিন্তু এই বসন্তও আজ শান্তির প্রতীক নয়। বরং প্রতিটি সৌন্দর্যের পিছনে লুকিয়ে থাকে হঠাৎ বিস্ফোরণের সম্ভাবনা, পরিবার হারানোর শঙ্কা।

তবুও, জীবনের আশা থেমে থাকে না। ধ্বংসস্তূপের ভেতরেও শিশুরা হাসে, তরুণেরা কবিতা লেখে—তারা যেন প্রমাণ করে, বুলেটের নিচেও জীবন বিকশিত হতে চায়।

নতুন প্রজন্ম, যারা জন্ম থেকেই লড়াই আর অবরোধ দেখে এসেছে, তারা আজ প্রশ্ন তুলছে—আমরা কি শুধু রাজনৈতিক লাভ-ক্ষতির খেলার ঘুঁটি? কেন একজন কাশ্মীরি নিজের পরিচয়ে গর্ব করতে পারে না? কেন শান্তি এখানে শুধুই একটি অসমাপ্ত প্রতিশ্রুতি?

এই প্রজন্ম আর শুধু সহ্য করছে না; তারা জানতে চায়, বুঝতে চায়, আর একদিন বদল আনতে চায়। কাশ্মীর এখন এক দ্বৈত বাস্তবতার নাম। যেখানে ফুল ফোটে, কিন্তু সেই ফুলের নিচে থাকে রক্তের ছাপ। যেখানে পাহাড় আছে, কিন্তু শান্তি নেই। যেখানে নদী বয়ে যায়, কিন্তু তাতে ভেসে আসে কান্নার প্রতিধ্বনি।

এই ভূখণ্ড বয়ে বেড়ায় তার স্বর্গীয় সৌন্দর্য আর নরকীয় বাস্তবতার ভার। বসন্ত আসে, কিন্তু তার রং মুছে দেয় বন্দুকের ধোঁয়া। তবুও, কাশ্মীরের আকাশে এখনও জেগে থাকে আশার নক্ষত্র। সেখানকার মানুষ এখনও বিশ্বাস করে—একদিন আসবে এমন এক সকাল, যেদিন বসন্ত শুধু ফুলের নয়, হবে মুক্তিরও প্রতীক।

ফারুক

×

শীর্ষ সংবাদ:

যেই সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত হবে তারা জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে: আমীর খসরু
জামায়াত নেতারা রাজাকার হলে পাকিস্তানে গাড়ি বাড়ি থাকতো : শামীম সাঈদী
এনসিপির সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত সম্পৃক্ততা নেই- উমামা ফাতেমা
‘বাংলাদেশি’ সন্দেহে আটকদের অধিকাংশই ভারতীয় মুসলমান
ইয়েমেনে হামলা চালিয়েই সাগরে ডুবে গেল মার্কিন সর্বাধুনিক যুদ্ধবিমান
জামিন পেলেননা তারেক রহমানের খালাতো ভাই তুহিন
লন্ডনে আজ আর্সেনাল পিএসজি মহারণ
১৭ অভিনয়শিল্পীর নামে মামলা, তালিকায় আছেন নুসরাত ফারিয়া-অপু বিশ্বাস-ভাবনাসহ অনেকেই
১০০ টাকা মূল্যমানের প্রাইজবন্ডের ১১৯তম ড্র অনুষ্ঠিত হবে আগামীকাল
স্বর্ণের দাম, রেকর্ড উচ্চতা থেকে পতনের পথে
কুমিল্লায় পুলিশ-সেনাবাহিনীর চাকরির নামে প্রতারণা: দালালসহ ১৩ জন গ্রেফতার
১২ বছর বয়সী ছেলে শিক্ষার্থীকে বলাৎকারের অভিযোগে ৩ মাদ্রাসা শিক্ষক গ্রেফতার