ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০১ মে ২০২৫, ১৮ বৈশাখ ১৪৩২

মে দিবসের শ্লোগান হোক ইনসাফ প্রতিষ্ঠার আন্দোলন

এ্যাড. মো. সরোয়ার হোসেন

প্রকাশিত: ১৭:১১, ১ মে ২০২৫

মে দিবসের শ্লোগান হোক ইনসাফ প্রতিষ্ঠার আন্দোলন

ছবি: জনকণ্ঠ

মালিক শ্রমিক সমস্যা মানব সমাজের এক সুপ্রাচীন সমস্যা। আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস যা, যা মেচ দিবস হিসেবে অভিহিত। প্রতি বছর পহেলা "মে" তারিখে আমাদের দেশসহ বিশ্বব্যাপী পালিত হয় যে দিবস। এদিনটি সরকার ঘোষিত ছুটির দিন। যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের একজন শ্রমিক ১৮৮৪ সালে দৈনিক মুখটা কর্ম নির্ধারণের দাবিতে সংগ্রাম সূচনা করেন। তাদের সাবি পূরণের জন্য ১৮৮৬ সালের পহেলা "মেচ পর্যন্ত সময় নির্ধারণ করে আল্টিমেটাম প্রদান করেন। কিন্তু শিল্প-কারখানা ও মালিকগণ তাদের দাবি না মানায় যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরে "হেচ মার্কেট চত্বরে ৪ মে সমাবেশে মিলিত হন শ্রমিকরা। সমাবেশে আগস্ট স্পিজ নামে এক শ্রমিক নেতার বক্তব্য দানকালে ঘুরে দাঁড়ানো পুলিশ দলের কাছে বোমার বিস্ফোরণ ঘটে। এতে বোমার আঘাতে এক পুলিশ সদস্য নিহত হন। পুলিশ বাহিনী প্রতিশোধ পরায়ণ হয়ে শ্রমিকদের উপর হামলা শুরু করে যা রীতিনীতি যুদ্ধাবস্থা সৃষ্টি করে। এতে ১১ জন শ্রমিক নিহত হন।

পুলিশ হত্যায় অভিযোগে শ্রমিকনেতা আগস্ট স্পিজসহ আটজনকে অভিযুক্ত করা হয় বিচারের নামে প্রহসন করে আটজনের বিরুদ্ধে ফাঁসির রায় দেয়া হয়। ১৮৮৭ সালের ১১ ই নভেম্বর প্রকাশ্য জনসম্মুক্ষে ৬ জনের ফাঁসি কার্যকর করা হয়। ফাঁসি কার্যকরের আগের দিন কারাগারে একজন আত্মহত্যা করেন। অন্য একজনের ১৫ বছরের কারাদন্ড হয়। ফাঁসির মঞ্চে আরোহন এর আগে শ্রমিক নেতা আগস্ট প্লিজ বলেছিলেন আজ আমাদের এই নিঃশব্দতা তোমাদের আওয়াজ অপেক্ষা অধিক শক্তিশালী। ১৮৯৩ সালে ২৬ শে জুন ইলিনয়র গর্ভনর অভিযুক্ত অর্জনকেই নিরাপরাধ ঘোষণা করেন। হামলার আদেশদাতা পুলিশ কর্মকর্তাকে দুর্নীতির দায়ে দায়ী করা হয়। শ্রমজীবী মানুষের আন্দোলনের ফসল হিসেবে ৮ ঘন্টা কর্মদিবস অফিশিয়াল ভাবে স্বীকৃতি পায়। শ্রমিক মেহনতি মানুষের আন্দোলনের উক্ত গৌরবময় অধ্যায় কে স্মরণ করে ১৯৮০ সাল থেকে পহেলা মে পালন হয়ে আসছে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস।

১৮৯০ সালের ১৪ জুলাই ইন্টারন্যাশনাল সোশ্যালিস্ট কংগ্রেসে প্রথম পহেলা পহেলা মে শ্রমিক দিবস ঘোষণা করেন। রাশিয়া সহ বেশ কয়েকটি রাষ্ট্র বিপ্লব সংঘটিত হলে মে দিবসের তাৎপর্য বৃদ্ধি পায়। ১৯১৯ সালের এপ্রিল মাসে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৪৬সালে বিশ্ব সংস্থাজাতিসংঘ আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আই এল ও) কে স্বীকৃতি দিলে শ্রমিকদের অধিকার সমূহ বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতি পায়। (আই এল ও) তাদের সদস্য রাষ্ট্রগুলো কে শ্রমিকদের জন্য করা নীতিমালা মেনে চলার আহবান জানায়। বাংলাদেশ (আইএলও) কর্তৃক প্রণীত নীতিমালা স্বাক্ষরকারী দেশ। (আই এল ও) এর সসর দপ্তর জেনেভা শহরে অবস্থিত। এতে সভা-সমাবেশ সেমিনার ও রালি পাশাপাশি টিভিতে সুশীল সমাজের টকশো তার পরেও কি এই দিবসটি চেতনাকে আমরা কাজে লাগাতে পেরেছি। সমাজের হাজারো শ্রমজীবী মানুষকে এ দিবস সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তারা শুধু হা করে তাকিয়ে থাকে। তাদের কাছে দিবস এর দাম নেই। তারা তাদের পরিশ্রমের বিনিময়ে এক মুঠো খাবার পেলেই খুশি। তাহলে শ্রমিক দিবসের অন্তরালে কি শ্রমজীবী মানুষের হাসির লেস টুকু নেই। সমাজের কিছু লোক অসহায় শ্রমিকদের ঘাম রক্তের বিনিমন্ত্রে একদিকে কালো টাকার পাহাড় গড়ে তুলেছে। অপরদিকে কোটি মানুষ ক্ষুধার জ্বালায় রোগে-শোকে আহাজারি করে অর্ধাহারে-অনাহারে মানবেতর জীবনযাপন করছে। সাম্রাজ্যবাদী ধর্মনিরপেক্ষবাদীরা শ্রমিকরাজ কায়েমের নামে শ্রমিক মেহনতী মানুষকে গোলামীর জিঞ্জিরে বন্দি করে রেখেছে। মালিক ও শ্রমিক দুই বিপরীত পক্ষ বানিয়ে একে অপরের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তুলেছে। আদর্শহীন ধান্দাবাজ শ্রমিক নেতারা মালিক ও শ্রমিকদের মাঝে সংঘাত লাগিয়ে দিয়ে ফায়দা হাসিল করছে। এবং বিভিন্ন দল ও গোষ্ঠী শ্রমিকদের ক্ষমতায় যাওয়ার সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করছে। একদিকে শ্রমিকরা লাশ হচ্ছে, অন্যদিকে তথাকথিত শ্রমিকনেতারা সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছে। সমাজতন্ত্র ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের অনুসারীরা প্রচলিত ট্রেড ইউনিয়ন পদ্ধতিকে ক্ষমতায় যাওয়ার সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করায়। শ্রমিকরা বারবার প্রতারিত হয়েছে।

১৯৭১ সালে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি অধিকারবঞ্চিতদের অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রত্যয়ে স্বাধীনতা লাভ করলেও অযোগ্য, আদর্শহীন নেতৃত্তের কারণে আমাদের স্বাধীন বাংলাদেশেও শ্রমিকদের পর্দা হারে অনাহারে জীবন যাপন করতে হচ্ছে। দেশ পরিবর্তন, দল পরিবর্তন এবং বারবার ক্ষমতার পরিবর্তন হলেও শ্রমিকদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের অনুচ্ছেদ নং ১৪ তে বলা হইয়াছে রাষ্ট্রের অন্যতম মৌলিক দায়িত্ব হইবে মেহনতী মানুষ কে কৃষক শ্রমিক কে এবং জনগণের অনগ্রসর অংশ সমূহকে সমূহকে সকল প্রকার শোষণ হইতে মুক্তি দান করা। আসলেই আমরা সংবিধানের আলোকে কতটুকু তার প্রতিফলন ঘটানো ও কৃষক শ্রমিক কে শোষণ হতে কতটুকু যুক্ত করতে পেরেছি তা আজ ভাববার বিষয়। তাই ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য শ্রমিক সমাজ কে ঘুরিয়ে দাঁড়াতে হবে এবং নতুনভাবে চিন্তা করতে হবে। ১৮ কোটি মানুষের বাংলাদেশের শ্রমিক, কৃষক ও মেহনতী মানুষের সংখ্যা ৭৫%। মেহনতী মানুষের সমস্যার সমাধানে সমাধান এবং সফল ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলন গড়ে তুলতে হলে প্রয়োজন সৎ নেতৃত্বের মাধ্যমে ইসলামী শ্রমনীতি প্রতিষ্ঠা। কমিউনিজম তথা সমাজতন্ত্রীরা যেহেতু ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনকে কমিউনিজম শিক্ষার স্কুল হিসেবে ব্যবহার করছে এবং দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ সমাজকে তাদের পাতাফাঁদে ফেলার জন্য কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী নেতৃত্ব কে বাছাই শ্রমিক আন্দোলন সংযুকতি দেওয়া আদর্শ বাদীদের কেউ এই বিশাল জনগোষ্ঠীর প্রতি নজর দেওয়া সময়ের দাবি। এই নিরীহ অসহায় খেটে খাওয়া মানুষগুলো যদি সৎ ও যোগ্য নেতৃত্ব পায় তাহলে তাদের অধিকার যেমন প্রতিষ্ঠিত হবে তেমনি এই জনগোষ্ঠীকে সততা ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে শরিক করতে পারলেই শ্রমিক-মালিক সকলকেই তাদের ন্যায্য অধিকার ফিরে পাবে। দেশ হবে সমৃদ্ধ সফল হবে মহান মে দিবস।

শিহাব

×

শীর্ষ সংবাদ:

যেই সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত হবে তারা জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে: আমীর খসরু
জামায়াত নেতারা রাজাকার হলে পাকিস্তানে গাড়ি বাড়ি থাকতো : শামীম সাঈদী
এনসিপির সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত সম্পৃক্ততা নেই- উমামা ফাতেমা
‘বাংলাদেশি’ সন্দেহে আটকদের অধিকাংশই ভারতীয় মুসলমান
ইয়েমেনে হামলা চালিয়েই সাগরে ডুবে গেল মার্কিন সর্বাধুনিক যুদ্ধবিমান
জামিন পেলেননা তারেক রহমানের খালাতো ভাই তুহিন
লন্ডনে আজ আর্সেনাল পিএসজি মহারণ
১৭ অভিনয়শিল্পীর নামে মামলা, তালিকায় আছেন নুসরাত ফারিয়া-অপু বিশ্বাস-ভাবনাসহ অনেকেই
১০০ টাকা মূল্যমানের প্রাইজবন্ডের ১১৯তম ড্র অনুষ্ঠিত হবে আগামীকাল
স্বর্ণের দাম, রেকর্ড উচ্চতা থেকে পতনের পথে
কুমিল্লায় পুলিশ-সেনাবাহিনীর চাকরির নামে প্রতারণা: দালালসহ ১৩ জন গ্রেফতার
১২ বছর বয়সী ছেলে শিক্ষার্থীকে বলাৎকারের অভিযোগে ৩ মাদ্রাসা শিক্ষক গ্রেফতার