
ছবি: সংগৃহীত
২০২৪ সালের ‘জুলাই বিপ্লব’ ছিল একটি অনন্য গণজাগরণ—যেখানে শ্রমজীবী মানুষ, তরুণ প্রজন্ম, মধ্যবিত্ত এবং সাধারণ জনগণ একত্রিত হয়েছিল দীর্ঘদিন ধরে চলা বৈষম্যের বিরুদ্ধে। এটি নিছক কোনো রাজনৈতিক দাবির আন্দোলন ছিল না; বরং তা ছিল সামাজিক ও অর্থনৈতিক বঞ্চনার বিরুদ্ধে একটি সামগ্রিক প্রতিবাদ। ২০২৫ সালের মে দিবসে দাঁড়িয়ে আমাদের এটাই ভাবতে হবে—সেই আন্দোলন বাস্তব পরিবর্তনের দিকে আমাদের কতটা এগিয়ে নিয়ে গেছে?
জুলাই বিপ্লব: একটি ঐতিহাসিক বাঁকবদল
‘জুলাই বিপ্লব’-এর পাঁচটি মূল দাবি ছিল:
-
ভোটাধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা
-
রাষ্ট্রীয় সম্পদের সুষম বণ্টন
-
শিক্ষায় সাম্য
-
বিচারব্যবস্থার স্বাধীনতা
-
দুর্নীতি ও দখলদার পুঁজিবাদের অবসান
এই দাবি গুলোর মাধ্যমে জাতি প্রত্যক্ষ করেছিল কীভাবে সমাজের বিভিন্ন স্তরে বৈষম্য গভীরভাবে প্রোথিত। সরকারি চাকরি থেকে শুরু করে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা—প্রতিটি খাতেই বৈষম্যের করাল ছায়া। এই আন্দোলন এক শক্তিশালী বার্তা দিয়েছিল: শুধু সরকার বদল নয়, প্রয়োজন রাষ্ট্র কাঠামোর আমূল সংস্কার।
মে দিবস ২০২৫: শুধুই স্মরণ, না কি প্রতিশ্রুতি রক্ষার দিন?
মে দিবস আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংহতির প্রতীক হলেও, বাংলাদেশে তা প্রায়ই শুধুমাত্র একটি ছুটির দিনে রূপ নেয়। কিন্তু বাস্তবতা হলো—এটি হওয়া উচিত শ্রমিকদের অধিকার ও মর্যাদার নিরীক্ষণের দিন।
কিছু মৌলিক প্রশ্ন আজও প্রাসঙ্গিক:
-
শ্রমিকরা কি ন্যায্য মজুরি পাচ্ছেন?
-
শ্রমজীবী মানুষের কণ্ঠ কি এখনো দমন করা হচ্ছে?
-
অনানুষ্ঠানিক খাতে নিযুক্ত কোটি মানুষ কি রাষ্ট্রীয় পরিকল্পনায় স্থান পাচ্ছেন?
-
পুরনো ক্ষমতা কাঠামো কি এখনও অটুট?
বিপ্লবের অর্জন ও সীমাবদ্ধতা
‘জুলাই বিপ্লব’ নিঃসন্দেহে জাতির রাজনৈতিক চেতনা ও নাগরিক অংশগ্রহণকে উজ্জীবিত করেছে। বিশেষ করে যুব সমাজের অংশগ্রহণ ও সামাজিক মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া এই আন্দোলনকে এক নতুন মাত্রা দেয়।
তবে—
-
রাজনৈতিক অঙ্গনে এখনো তার প্রতিফলন দুর্বল
-
ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠায় দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়নি
-
নেতৃত্বের ঘাটতি ও ঐক্যের অভাবে আন্দোলনের ধারাবাহিকতা ব্যাহত
আগামীর রূপরেখা: প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার ও সামাজিক চুক্তি
জুলাই বিপ্লব দেখিয়েছে—পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা আমাদের মধ্যে গভীরভাবে বিরাজমান। আর মে দিবস মনে করিয়ে দেয়—শ্রমজীবী জনগণই সেই পরিবর্তনের চালিকাশক্তি।
আমাদের পরবর্তী পদক্ষেপ হওয়া উচিত:
-
একটি অংশগ্রহণমূলক ও কার্যকর গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা
-
বিচারব্যবস্থার স্বাধীনতা নিশ্চিত করা
-
প্রশাসন থেকে দলীয়করণ ও বৈষম্য দূর করা
-
উৎপাদনে যুক্ত মানুষের সম্মান, নিরাপত্তা ও ন্যায্য অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করা
জুলাই বিপ্লব ছিল আমাদের অন্তর্জাত বোধের বিস্ফোরণ। মে দিবস সেই বোধের বাস্তব প্রয়োগের দিন। কেবল কথার মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে—ন্যায়, সাম্য ও মানবিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাই হোক আমাদের অঙ্গীকার। এখনো সময় আছে। আসুন, রাষ্ট্রকে জনগণের কাছে ফিরিয়ে আনতে আমরা একসঙ্গে এগিয়ে যাই।
লেখক : ইঞ্জিনিয়ার এ কে এম রেজাউল করিম
চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী গবেষণা কেন্দ্র
ফারুক