ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৫ জুন ২০২৫, ১১ আষাঢ় ১৪৩২

আঞ্জুমান মফিদুল ইসলাম

প্রকাশিত: ১৯:৫৩, ৫ মার্চ ২০২৫

আঞ্জুমান মফিদুল ইসলাম

ইতিহাস অনুসন্ধানে জানা যায়, ভারতবর্ষে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠায় মুসলিমরা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা হারানোর ফলে ইংরেজদের ঘৃণা ও বৈরী আচরণে মুসলিম সমাজ দিনে দিনে সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও শিক্ষা-দীক্ষায় ব্যাপক পিছিয়ে পড়ে এবং পরিণত হয় সমাজের প্রান্তিক শ্রেণিতে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে এ অঞ্চলের গরিব, দুস্থ ও অসহায় মুসলমানদের সার্বিক উন্নয়নে ভারতের সুরাটের সমাজকর্মী ইব্রাহিম মোহাম্মদ ডুপ্লের নেতৃত্বে ১৯০৫ সালে তৎকালীন মুসলিম নেতৃস্থানীয় দানবীরদের প্রত্যক্ষ সাহায্যে কলকাতায় প্রতিষ্ঠিত হয় আঞ্জুমান মফিদুল ইসলাম। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে পূর্ব পাকিস্তানের রাজধানী ঢাকায় আঞ্জুমান মফিদুল ইসলামের কার্যক্রম শুরু হয় আঞ্জুমানের প্রধান কর্মকর্তা এস এম সালাহউদ্দিনের নেতৃত্বে। সেই থেকে ৭৮ বছর ধরে বাংলাদেশ ভূখণ্ডে চলছে আঞ্জুমানের মানব সেবা। যুগ যুগ ধরে সমাজের দুস্থ, অসহায় ও দরিদ্র মানুষের পাশে নিয়োজিত তাদের এ মানবিক কার্যক্রমে রাজধানীবাসীর জন্য রয়েছে ফ্রি অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস এবং বেওয়ারিশ লাশ দাফন কার্যক্রম।
এ ছাড়াও ঢাকা মহানগরী, নারায়ণগঞ্জ ও সাভারের ৯টি এতিমখানায় চার শতাধিক এতিম শিশুর প্রতিপালন চলমান, চারটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ১৭০০ গরিব ছাত্রছাত্রীর অবৈতনিক শিক্ষার সুযোগ, একটি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট পরিচালনা, দুস্থ ও বয়স্ক পুরুষ-মহিলাদের নিয়মিত ভাতা প্রদান, দুঃস্থ মুসলিমদের মাঝে ঈদসামগ্রী বিতরণ, বিভিন্ন দুর্যোগে দুর্গত এলাকায় ত্রাণকার্য পরিচালনা, বিশ্ব ইজতেমায় ফ্রি মেডিক্যাল সার্ভিস প্রদান ইত্যাদি পরিচালনা। এছাড়া দেশের ৩২টির বেশি জেলায় আঞ্চলিক অফিসের মাধ্যমে সেবা কার্যক্রম পরিচালনা করছে আঞ্জুমান।
সম্প্রতি রাজধানীর কাকরাইলে আঞ্জুমান মফিদুল ইসলামের নতুন ভবন আঞ্জুমান জে আর টাওয়ার  উদ্বোধনোত্তর দোয়া ও ইফতার মাহফিলে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘বাংলাদেশে বহু প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তবে আঞ্জুমান মফিদুল ইসলাম কেবল প্রতিষ্ঠান হিসেবে এত দীর্ঘমেয়াদে টিকে আছে তা নয়, তারা বেওয়ারিশ লাশ দাফনের পাশাপাশি এতিম শিশুদের লালন-পালন করার মধ্য দিয়ে শক্তভাবে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এমন প্রতিষ্ঠান উপমহাদেশে আর খুঁজে পাওয়া যাবে কি-না আমার জানা নেই।’ তিনি এও বলেন, বাংলাদেশে আমরা আর কোনো বেওয়ারিশ লাশ দেখতে চাই না। এ কথার সঙ্গে প্রতিটি বাংলাদেশী একমত।
৯০ কোটি টাকা ব্যয়ে আঞ্জুমান মফিদুল ইসলামের নতুন ভবন ‘আঞ্জুমান জে আর টাওয়ার’ নির্মাণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ভ্যাট মওকুফসহ সরকারি অনুদান ২৬ কোটি টাকা। বাকি ৬৪ কোটি ব্যক্তি পর্যায়ের অনুদান। যত প্রতিকূল ও কঠিন পরিস্থিতি হোক না কেন, আঞ্জুমান মফিদুল ইসলাম বেওয়ারিশ লাশ দাফন এবং দেশজুড়ে মানবসেবার কাজটি করে যাচ্ছে নিঃস্বার্থভাবে। বিশেষ করে মহামারি করোনার সময় এ প্রতিষ্ঠানের নাম বারবার এসেছে গণমাধ্যমে। বাংলাদেশের ইতিহাস ও মুসলিম সমাজের সঙ্গে মিশে আছে আঞ্জুমান মফিদুল ইসলাম। এটি আমাদের সমাজের একটি ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান। দেশে বহু ধর্মের বিশ্বাসী মানুষের সম্প্রীতিপূর্ণ বসবাস। সকল অসহায় মানুষ, সে যে ধর্মেরই হোক না কেন, সবার জন্য এগিয়ে আসতে হবে আঞ্জুমানকে। অন্য ধর্মের বেওয়ারিশ লাশ সৎকারে বিশেষ ব্যবস্থা রাখা যেতে পারে তাদের ধর্মীয় রীতি অনুসারে। জাতি ধর্ম-বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষে সকল মানুষের কল্যাণের জন্য আঞ্জুমান হবে আশা ও ভরসার প্রধান আশ্রয়স্থল।

×