
পৃথিবীর সকল অবকাঠামো ও প্রাযুক্তিক উন্নতি, অগ্রগতি এবং সমৃদ্ধির পেছনে রয়েছে মেধার অনবদ্য অবদান। মেধা প্রকৃতির অপার দান। কেবলমাত্র মেধাবীরাই পারে পৃথিবীর উন্নয়নের ধারা বদলে দিতে। তাবৎ দুনিয়ার যত অগ্রগতি ও সমৃদ্ধি হয়েছে তার পেছনে মেধাবীদের ঘাম মিশ্রিত সাধনা আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে। নিঃসন্দেহে মেধাবীরাই দুনিয়ার সেরা সম্পদ, উন্নয়নের প্রধান চালিকাশক্তি।
পৃথিবীর অতি উন্নত দেশগুলোতেও সবকিছু ত্রুটিমুক্ত নয়। এখানেও কিছু সমস্যা রয়েছে, কিন্তু আমাদের দেশ থেকে, সেটা ভিন্ন ধরনের। উন্নত দেশের কর্মপরিবেশ অন্তত কর্মবান্ধব, প্রতিকূল নয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সরকারি-বেসরকারি কর্মস্থলগুলোর কর্মপরিবেশ কর্মবান্ধব নয়। এমনকী করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোতেও মাঝে মাঝে ব্যত্যয় ঘটে। এমন বক্তব্য দেশ থেকে বিদেশে গমনকৃত প্রতিটি প্রবাসী জনশক্তির, ছাত্র কিংবা শ্রমিক সকলের। মানুষের কৃষ্টি-কালচার সংস্কৃতির পুরোটাই নির্ণীত হয় শিশু ও কৈশোরকালে তার পারিপার্শ্বিক পরিবেশ থেকে। পারিবারিক শিকড়কে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো আলোকিত করে।
সমকালীন বাংলাদেশ রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক কিংবা আর্থ-সামাজিক বাস্তবতার নিরিখে এক কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি। বৈশ্বিক বাস্তবতায় পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোতেও অস্থিরতা কম নয়। তবু তাদের কার্যক্ষেত্রগুলোতে রয়েছে কর্মবান্ধব পরিবেশ ও সামাজিক সুরক্ষা এবং যথাযথ মেধার মূল্যায়ন। মূলত এ সব কারণেই বাংলাদেশের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো থেকে মেধাবী তরুণরা বিদেশমুখী হচ্ছে প্রতিনিয়ত। দেশ হারাচ্ছে আপন গৃহে জন্ম নেওয়া প্রকৃতি প্রদত্ত মেধাবী সন্তানদের। সার্বিক উন্নয়ন অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির রথযাত্রায় প্রতিনিয়ত মেঘলা আকাশের সরব উপস্থিতি বিরাজমান। দেশপ্রেমিক চিন্তাশীল রাজনীতিবিদ, সমাজকর্মী, বুদ্ধিজীবী তথা নীতিনির্ধারকদের এগিয়ে আসতে হবে এক্ষেত্রে। মেধা পাচারের এই স্রোত বন্ধ করতে হবে দেশের স্বার্থে, আগামী প্রজন্মের সমৃদ্ধি কামনায়। উচ্চশিক্ষা ও কর্মক্ষেত্রে বিশেষায়িত দক্ষতা অর্জনের জন্য বিদেশগামিতা নিঃসন্দেহে ভালো দিক। কিন্তু বিদেশে গিয়ে স্বার্থবাদী চিন্তা করে দেশে না ফেরাটা নায্য নয়। দেশের সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমেই একটি জনপদ এগিয়ে যায়।
বাংলাদেশের মেধাবীরা ছড়িয়ে আছে দুনিয়াজুড়ে। প্রাচ্যের জাপান, চীন-হংকং, তাইওয়ান, কোরিয়া, দক্ষিণের অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, পুরো মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা ও পশ্চিমের ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্রসহ পৃথিবীর সর্বপ্রান্তে। হাজার হাজার মাইল দূরে বিদেশের মাটিতে কর্মনিষ্ঠ ও নিমগ্ন চিত্তে কাজ করছেন তাঁরা। কেউ কলকারখানা, করপোরেট অফিসে। কেউ শিক্ষকতা, গবেষণা, আইটি প্রযুক্তি, চিকিৎসা প্রকৌশল জগতে পদচারণা করছেন। যাদের প্রায় সবাই দেশের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে কলা, সামাজিক বিজ্ঞান, কৃষি, প্রকৌশল কিংবা চিকিৎসা বিজ্ঞানে পড়াশোনা করেছেন। দেশ ছেড়ে চলে যাওয়া এ সকল অদম্য মেধাবীর প্রকৃত সংখ্যা কত? তার পরিসংখ্যান কেবল সরকারই দিতে পারে। মেধাবীদের বিদেশে চলে যাওয়ার এই মিছিলে প্রথম সারিতে আছে বুয়েট, ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
দেশের প্রায় সকল প্রতিষ্ঠানেই মেধাবীদের পথচলা বিরাজমান। ব্রেন ড্রেন হলো মেধা পাচার কিংবা হারিয়ে যাওয়া অন্য দেশে। সাধারণত একটি অনুন্নত ঝুঁকিপূর্ণ দেশ থেকে শিক্ষা-সংস্কৃতি ও প্রযুক্তিতে উন্নত একটি দেশে কর্ম সক্ষম তরুণদের চলে যাওয়াকে বোঝায়। বাংলাদেশে প্রতিবছর হাজার হাজার ছেলেমেয়ে বিভিন্ন বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রি নিচ্ছে। তাদের মধ্যে যারা খুব বেশি মেধাবী তারা নিরাপদ জীবনের আশায় পরিবারের আগামীর কল্যাণের জন্য বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছেন স্থায়ীভাবে। উন্নত জীবনের সুযোগ-সুবিধা প্রাপ্তির ফলে তাদের সিংহভাগই আর দেশে ফিরছেন না।
উচ্চ শিক্ষিত, অতি যোগ্য ব্যক্তিদের এই বিদেশগামিতা নতুন কিছু নয়। বহুকাল থেকেই চলে আসছে এই সংস্কৃতি। গোটা পৃথিবীতেই হিউম্যান মাইগ্রেশন হয়। এটি সৃষ্টির আদিকাল থেকেই হয়ে আসছে। দু’ধরনের মাইগ্রেশন হয়। একটি ডমেস্টিক মাইগ্রেশন, অন্যটি ইন্টারন্যাশনাল মাইগ্রেশন। ডমেস্টিক মাইগ্রেশন হলো, কোনো দেশের ভেতরে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে শিক্ষা-গবেষণা, রুটি-রোজগার, উন্নত জীবন কিংবা নিরাপত্তাজনিত কারণে মানুষের স্থানান্তর। একই প্রয়োজনে প্রবাসে গেলে সেটি হয় ইন্টারন্যাশনাল মাইগ্রেশন।
সাধারণত বাংলাদেশী মেধাবীরা বিদেশে মাস্টার্স, পিএইচডি ও পোস্ট ডক্টোরাল প্রোগ্রামে যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে এগিয়ে আছেন বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ও মেডিকেল গ্র্যাজুয়েটগণ। আন্ডারগ্রাজুয়েটেও কিছু ধনাঢ্য পরিবারের সন্তান যাচ্ছেন। এ সকল মেধাবী বিদেশে যাচ্ছেন, থিতু হচ্ছেন এবং সেখানেই বড় হচ্ছে পরবর্তী প্রজন্ম।
স্বাধীনতার আগে-পরে অদ্যাবধি যত সিভিল সার্ভিস পরীক্ষা হয়েছে, প্রায় প্রতিটি থেকেই পর্যায়ক্রমে কর্মকর্তাদের উচ্চতর বিভাগীয় প্রশিক্ষণ কিংবা পিএইচডি করতে পাঠিয়েছে সরকার, দেশের কল্যাণের জন্য। যাদের একটি বড় অংশই আর দেশে ফিরে আসেননি। দেশে না ফেরা সংস্কৃতির প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে নেই বুদ্ধিজীবী খ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্মানিত শিক্ষকগণও। প্রায়ই সংবাদপত্রে প্রকাশ পায় উচ্চশিক্ষা শেষে দেশে ফিরে বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ না দেওয়ার কারণে চাকরিচ্যুতির সংবাদ, যা আমাদের বেদনাহত করে। দেশে না ফেরার সংস্কৃতিতে কেউ কারও চেয়ে কম নয় মেধাবীগণ। ফলে ক্ষতি হচ্ছে রাষ্ট্রীয় কোষাগারের। এভাবে যদি মেধা পাচার হয়, তবে আমরা দক্ষ শ্রমশক্তি ও মননশীল ব্যক্তিদের হারাব প্রতিনিয়ত। দেশের অর্থনীতি আজ দ্রুত বর্ধনশীল। এমন সময় দেশের জন্য অনেক বেশি দক্ষ ও মেধাবী শ্রমশক্তি প্রয়োজন। বাংলাদেশের লাখো মেধাবী তরুণের প্রায় অভিন্ন চিন্তা। তারা দেশের জন্য কাজ করতে চায়, দেশকে কিছু দিতে চায়। জাপান প্রবাসী নূর মোহাম্মাদ ঢাকায় একটি অনলাইন পত্রিকা ও একটি স্যাটেলাইট চ্যানেলে সাংবাদিকতা করেছেন দীর্ঘ সময়। উন্নত জীবনের আশায়, রুটি-রোজগারের ভরসায় চলে গেছেন বিদেশে। তার মতে, দেশে ৫০ হাজার টাকা বেতন পেলেও থেকে যেতাম। এমন অনুভূতি লাখো তরুণের। সাধারণত অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলো থেকে স্বাপ্নিক মানুষ আরও দক্ষ হতে, গুণগত শিক্ষা নিতে, সামাজিক ও অর্থনৈতিক জীবনে অধিক সুযোগ-সুবিধা ও জীবনের নিরাপত্তা পেতে এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতায় পূর্ণ উন্নত জীবনমানের জন্য সমৃদ্ধ দেশগুলোতে যেতে চান। সে অবস্থায় ডিগ্রি শেষে মেধাবীদের দেশে ফেরৎ আনতে রাষ্ট্রের যথাযথ কৌশল প্রণয়ন ও প্রয়োগ করতে হবে। ওপেন ডোরস ডেটা-এর সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ২০২৩ সালে সর্বোচ্চ সংখ্যক শিক্ষার্থী গেছেন, যা সংখ্যায় ১৩ হাজারের বেশি। আগের বছরের তুলনায় বেড়েছে ২৮ শতাংশ।
বিশ্বব্যাংকের ভাষ্যে, বাংলাদেশ মেধা পাচারপ্রবণ শীর্ষ ২০ শতাংশ দেশের একটি। এ দেশের ১৫ থেকে ২৯ বছর বয়সী তরুণ-যুবকদের প্রায় ৮২ শতাংশ সুন্দর ভবিষ্যতের আশায় দেশত্যাগ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। প্রবাসী বাংলাদেশীরা প্রতিবছর কয়েক বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স পাঠায়। যার সিংহভাগই আসে স্বল্প শিক্ষিত শ্রমজীবীদের কাছ থেকে। কিন্তু মেধাবী ও দক্ষ জনবলের ক্ষেত্রে সমীকরণটির ভিন্ন রূপ রয়েছে। উচ্চ শিক্ষিত দক্ষ শ্রমশক্তি একটি নির্দিষ্ট সময় পর দেশের রেমিটেন্স প্রবাহে খুব একটা ভূমিকা রাখতে পারেন না। গবেষণায় দেখা যায়, তারা তাদের পরিবারের পরবর্তী প্রজন্মের অভিবাসনে সাহায্য করেন।
মেধা পাচার রোধ ও ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবিলায় অতীতে কিছু দেশ তাদের প্রবাসী নাগরিকদের ওপর বাধ্যতামূলক রেমিটেন্স পাঠানোর শর্ত আরোপ করে। ফিলিপিন্সের নাগরিকদের বিদেশে কাজ করতে হলে আইন অনুযায়ী তাদের আয়ের ৫০ থেকে ৮০ শতাংশ দেশে পাঠাতে হয়। দেশে এ ধরনের নীতি বাস্তবিক কারণেই প্রয়োগ করা অনেক কঠিন। এ আইন প্রয়োগ করে সফল হওয়া একমাত্র দেশ দক্ষিণ কোরিয়া। তাদের সফলতার একমাত্র কারণ ছিল, শ্রমিকরা কোরিয়ান মালিকানাধীন কোম্পানিতে কাজ করেন।
মানুষ তার বর্তমান অবস্থান থেকে একটু উন্নত অবস্থানে যেতে চাইবে, এটাই তার স্বভাব ধর্ম। কেন বাংলাদেশীরা এতো অভিবাসন প্রিয়? এই প্রবণতার পরিবর্তন ঘটাতে কী কী ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে তার অনুসন্ধান ও উচ্চতর একাডেমিক গবেষণা প্রয়োজন। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর পিস অ্যান্ড জাস্টিস (সিপিজে) ও বাংলাদেশ ইয়ুথ লিডারশিপ সেন্টার (বিওয়াইএলসি)-এর যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত ‘ইয়ুথ ম্যাটার্স সার্ভে-২০২৩’-এ ফেসবুকের মাধ্যমে ১৬ থেকে ৩৫ বছর বয়সী ৫ হাজার ৬০৯ জন অংশগ্রহণকারীর ওপর একটি জরিপ চালান হয়। সেখানে দেখা যায়, নানাবিধ সমস্যার কারণে যুবসমাজের ৪২ দশমিক ৪ শতাংশ বিদেশে চলে যেতে চান। গবেষণায় কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়, দুর্নীতি, বেকারত্ব, অর্থনৈতিক সংকট, মুদ্রাস্ফীতি, জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব ইত্যাদি। এসব সমস্যা সমাধান করা গেলে ৮৫.৫ শতাংশ দেশে ফিরে আসার ইচ্ছা ব্যক্ত করেন।
বর্তমান সময়ের তরুণরা সাধারণত তথ্যপ্রযুক্তি খাতে চাকরি করতে বেশি আগ্রহী। তারা করপোরেট অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সরকারি অনুদান নিয়ে কাজ করতে চায়। যা ব্যবসার বিস্তারে প্রণোদনা হিসেবে ভূমিকা রাখে। জন অভিবাসন বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশের জটিল আমলাতান্ত্রিক অব্যবস্থাপনা মেধাবীদের সৃজনশীল কাজে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে, নিরুৎসাহিত করে। দেশে থাকতে তাদের স্বপ্নগুলো ভেঙে দেয়। স্টেম সেল, বিজ্ঞান-প্রযুক্তি, কৃষি প্রকৌশল ও গণিতে স্নাতক করাদের ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে কাজ করার ব্যাপক সুযোগ ও অন্যান্য সুবিধা রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে এসব সুবিধা পাওয়ার চিন্তাও করা যায় না। মেধাবীরা জ্ঞান হওয়ার পর থেকে আজন্ম স্বপ্ন দেখেন, শিক্ষা ও গবেষণায় আন্তর্জাতিকমানের অভিজ্ঞতা অর্জনের। কিন্তু রাষ্ট্রীয় আনুকূল্য ও পারিপার্শ্বিক সহযোগিতার অভাবে তারা মুষড়ে পড়ে না।
যুক্তরাষ্ট্রসহ উন্নত বিশ্বে গবেষণার মূল্য অনেক। কারও পিএইচডি করা থাকলে শিক্ষা ও শিল্পক্ষেত্রে নানাবিধ সুযোগ-সুবিধার দ্বার উন্মোচন হয়। অন্যদিকে, বাংলাদেশে শিক্ষা ও সরকারি কর্মক্ষেত্রে স্বজনপ্রীতি এবং পেশাগত দক্ষতা বাস্তব জীবনে প্রয়োগের ক্ষেত্রেও সীমাবদ্ধতা রয়েছে। পাশাপাশি কর্মক্ষেত্রে নারীর নিরাপত্তা, রাস্তায় বের হওয়ার সক্ষমতা, নিজের মতো চাকরি করে বাঁচা এসব বিষয়ের সহজলভ্যতা মেধাবী তরুণীদের খুব বেশি আকর্ষণ করে বিদেশে যেতে। গোটা মার্কিন মুলুকে বিশ্বখ্যাত করপোরেট হাউসগুলোর প্রধান নির্বাহীদের একটি বড় অংশই ভারতীয়। ভারতীয় ও চায়নাদের অগ্রযাত্রা চোখে পড়ার মতো। শিক্ষা, গবেষণা, চিকিৎসা, প্রকৌশল, আইটি কোথায় নেই তারা? সর্বত্রই তাদের কর্মযাত্রা, সরব বিরাজমান।
ভারতীয় ও চীনারা তাদের স্বজাতীর উন্নয়নের জন্য অগ্রণী ভূমিকা রাখে। চীন ও ভারতের মতো বাংলাদেশীরা এগোতে না পারলেও তারা নিজেদের অবস্থান জানান দিচ্ছে বৈশ্বিক মেধার বাজারে। জন্মভূমির জন্য কাজ করতেও উদগ্রীব। বুয়েট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালসহ দেশের প্রথম সারির বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল তুখোড় মেধাবী, যারা এক সময়ে দেশের বিশ্ববিদ্যালয় এ শিক্ষকতা ও গবেষণা করেছেন। তাঁদের গবেষণা শুধু ইউরোপ, আমেরিকা নয়, পৃথিবীর আন্তর্জাতিক শীর্ষ জার্নালগুলোতেও প্রকাশ পাচ্ছে। প্রবাসে থিতু হয়ে যাওয়া মেধাবীরা দেশকে নিয়ে ভাবেন, কেউ দেশের জন্য অনেক ভালো কাজ করেন এবং তাদের অনিন্দ্য সুন্দর পরিকল্পনাও রয়েছে। দিনরাত তারা কাজ করেন আবিষ্কারের নেশায়। তাদের গবেষণায় অর্জিত ফসল ছড়িয়ে পড়ছে বিশ্ব মানবতার শাশ্বত কল্যাণে। স্বাস্থ্য-চিকিৎসা, কৃষি ও শিল্প, কল-কারখানা সসর্বত্র। দেশের অযুত সম্ভাবনাময় অদম্য মেধাবী প্রজন্ম যদি প্রত্যেকেই নিজ জায়গায় স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও দায়িত্ববোধের জায়গা থেকে ইস্পাত কঠিন পণ করেন, তবে দেশের উন্নয়নে পৃথিবীর কোনো শক্তি তাদের দাবিয়ে রাখতে পারবে না। সে ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকদের এগিয়ে আসতে হবে মেধাবীদের সম্ভাবনাকে আগামীর সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণে।
লেখক : সাংবাদিক