ইরানের শর্ত ইসরায়েলি হামলা বন্ধ হলেই কেবল আলোচনা সম্ভব

জেনেভা থেকে ফিরে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, যতদিন না ইসরায়েলি হামলা বন্ধ হচ্ছে, ততদিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে পারমাণবিক আলোচনায় বসবে না তেহরান। শুক্রবার সুইজারল্যান্ডে ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সাথে বৈঠক শেষে তিনি এই ঘোষণা দেন। এর মধ্যেই ইসরায়েলি সামরিক প্রধান জেনারেল এয়াল জামির সতর্ক করেছেন, "এই যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হতে যাচ্ছে।"

ইউরোপীয় নেতারা সংঘাত নিয়ন্ত্রণের জন্য জরুরি আলোচনা চালালেও ইসরায়েলি পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিডিওন সা'র জার্মানির বিল্ড পত্রিকাকে বলেছেন, "ইরানের সাথে কূটনীতিতে বিশেষভাবে বিশ্বাসী নই। এ পর্যন্ত সব কূটনৈতিক প্রচেষ্টাই ব্যর্থ হয়েছে।" অন্যদিকে ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জিন-নোয়েল ব্যারো সতর্ক করেছেন, "ইরানে জোরপূর্বক শাসন পরিবর্তনের চেষ্টা বিপজ্জনক।"

যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা নিয়ে অনিশ্চয়তা বাড়িয়েছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক বক্তব্য। তিনি জানিয়েছেন, "আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে" যুদ্ধে হস্তক্ষেপের সিদ্ধান্ত নেবেন। ইতিমধ্যে তৃতীয় একটি মার্কিন বিমানবাহী রণতরী মধ্যপ্রাচ্যের দিকে যাচ্ছে বলে নৌবাহিনীর এক কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন। বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন, ফোর্ডোর ভূগর্ভস্থ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্রে বাঙ্কার-বাস্টিং বোমা হামলা মার্কিন হস্তক্ষেপের প্রথম লক্ষ্য হতে পারে।

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান এই সংঘাতকে "নো রিটার্ন পয়েন্ট"-এর কাছাকাছি বলে উল্লেখ করে বলেন, "এই পাগলামি যত দ্রুত সম্ভব থামাতে হবে।" জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস সকল পক্ষকে "শান্তির সুযোগ দিতে" অনুরোধ করেছেন।

তেহরানের রাস্তায় এখন ভিন্ন চিত্র। এএফপি সংবাদদাতা জানান, সাধারণত কর্মব্যস্ত বাজারগুলো এখন ফাঁকা, অনেক দোকান বন্ধ। তাজরিশ বাজারের এক বিক্রেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, "আমি যুদ্ধকে ভয় পাই না, দোকান খোলা রেখেছি। কিন্তু ব্যবসা একদমই ভালো যাচ্ছে না।" পাশেই পুলিশ চেকপোস্ট বসিয়েছে, শ্রমিকরা ইসরায়েলি হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা মেরামত করছেন।

আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার প্রধান রাফায়েল গ্রোসি সিএনএনকে বলেছেন, ইরান ৬০% পর্যন্ত ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করলেও পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির প্রমাণ তারা পাননি। তবে ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের দাবি, তাদের হামলা ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে বছরের জন্য পিছিয়ে দিয়েছে।

এই উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে সুইজারল্যান্ড তার তেহরান দূতাবাস সাময়িক বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে, যদিও তারা ইরানে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ রক্ষার দায়িত্ব পালন অব্যাহত রাখবে। বিশ্বজুড়ে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, এই সংঘাত যদি আরও দীর্ঘ হয়, তাহলে পুরো মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিতিশীলতা ছড়িয়ে পড়তে পারে।

তথ্যসূত্র: https://www.newindianexpress.com/world/2025/Jun/20/iran-rules-out-nuclear-talks-with-us-until-israeli-strikes-stop-as-israel-warns-of-prolonged-war