ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২১ জুন ২০২৫, ৭ আষাঢ় ১৪৩২

যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে যাওয়া শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ, যেভাবে প্রস্তুত হবেন আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা

প্রকাশিত: ১৩:২৭, ২১ জুন ২০২৫; আপডেট: ১৩:২৮, ২১ জুন ২০২৫

যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে যাওয়া শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ, যেভাবে প্রস্তুত হবেন আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা

ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনার জন্য আসা আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা এবার পড়েছেন বাড়তি অনিশ্চয়তার মুখে। কারণ, ট্রাম্প প্রশাসনের সাম্প্রতিক নির্দেশনায় ভিসা সাক্ষাৎকার স্থগিত হওয়ায় তাদের পড়াশোনার পরিকল্পনায় বড়সড় বিঘ্ন ঘটছে।

কঠোর হচ্ছে ভিসা প্রক্রিয়া

গত মাসের শেষ দিকে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর নতুন করে শিক্ষার্থী ভিসার সাক্ষাৎকার নির্ধারণ স্থগিত করে। একই সঙ্গে বিদেশি শিক্ষার্থীদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তৎপরতা ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণের ঘোষণাও আসে। এরই মধ্যে বহু শিক্ষার্থী তাদের শরৎ সেমিস্টারের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।

তবে এ সপ্তাহে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট জানায়, শিক্ষার্থী ভিসা প্রক্রিয়া আবার চালু হচ্ছে, তবে নতুন কিছু শর্তে। এখন থেকে আবেদনকারীদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অ্যাকাউন্টগুলো পাবলিক (সবার জন্য উন্মুক্ত) রাখতে হবে, যাতে মার্কিন কর্মকর্তারা পোস্টগুলো পর্যালোচনা করতে পারেন। যদি কোনো পোস্ট যুক্তরাষ্ট্রের সরকার, প্রতিষ্ঠান কিংবা প্রতিষ্ঠাকালীন আদর্শের বিরুদ্ধে প্রতিকূল মনোভাব প্রকাশ করে—তা হলে ভিসা প্রত্যাখ্যানের ঝুঁকি বাড়বে।

যেসব আবেদনকারী সামাজিক যোগাযোগ অ্যাকাউন্ট খোলার অনুমতি দেবে না, তাদের আবেদন ‘গোপনীয়তা বজায় রেখে সন্দেহজনক তথ্য লুকানোর চেষ্টা’ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।

কী করণীয় শিক্ষার্থীদের?

উইলিয়াম কুপার, মার্কেটিং ডিরেক্টর (উইলিয়াম রাসেল), জানিয়েছেন, এই মুহূর্তে ভিসা প্রক্রিয়া বেশ অস্থির। তিনি শিক্ষার্থীদের জন্য কিছু পরামর্শ দিয়েছেন:

  • নিয়মিত দূতাবাসের ওয়েবসাইট ও ঘোষণা মনোযোগ দিয়ে পর্যবেক্ষণ করুন
  • বিশ্ববিদ্যালয় ও আর্থিক সহযোগী প্রতিষ্ঠানকে যেকোনো দেরি সম্পর্কে অবহিত রাখুন
  • প্রয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘লেট অ্যারাইভাল লেটার’ সংগ্রহ করুন
  • সকল যোগাযোগের রেকর্ড সংরক্ষণ করুন (বিশ্ববিদ্যালয়, দূতাবাস ইত্যাদি)
  • সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সচেতন থাকুন, কোনো পোস্ট বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে পারে কিনা বুঝে নিন
  • শ্রীপাল জৈন, সহ-প্রতিষ্ঠাতা (সিমান্ধর এডুকেশন), পরামর্শ দেন, এখন শিক্ষার্থীদের আরও কৌশলী এবং আগাম প্রস্তুত হওয়া দরকার। তিনি বলেন:
  • আবেদন ও ভিসার প্রক্রিয়া যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শুরু করা
  • শুধু SEVP-সার্টিফায়েড বিশ্ববিদ্যালয় বেছে নেওয়া
  • সরকারি ঘোষণাগুলো নিয়মিত অনুসরণ করা
  • আর্থিকভাবে নমনীয়তা রাখার প্রস্তুতি নেওয়া
  • একাডেমিক লক্ষ্য ও মানিয়ে নেওয়ার দক্ষতা তুলে ধরে আবেদন তৈরি করা

মনিশা জাভেরি, জয়েন্ট ম্যানেজিং ডিরেক্টর (ক্যারিয়ার মোজাইক), ভিসা শর্ত মেনে চলার গুরুত্ব তুলে ধরেন। তিনি বলেন:

  • পূর্ণ সময়ে পড়াশোনা বজায় রাখা
  • অবৈধভাবে কাজ না করা
  • বিশ্ববিদ্যালয়ের পরামর্শদাতাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা
  • নীতিমালায় যেকোনো পরিবর্তনের ব্যাপারে আপডেট থাকা
  • আদালতের হস্তক্ষেপ ও ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তা

ট্রাম্প প্রশাসন ইতিপূর্বে অনেক শিক্ষার্থীর F-1 ভিসা বাতিল করেছিল, এমনকি SEVIS রেকর্ডও বাতিল করে। যদিও পরে আদালতের হস্তক্ষেপে সেসব সিদ্ধান্ত বাতিল হয়।

কিন্তু সম্প্রতি হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসা স্থগিত সংক্রান্ত এক ঘোষণা দিয়ে আবার উত্তেজনা ছড়ায়, যেটি দ্রুত আদালতে আটকে যায়। তবুও ইঙ্গিত মিলছে যে প্রশাসন অভিবাসন নীতিতে কড়াকড়ি বাড়াতে আগ্রহী।

৯ জুন থেকে ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা ও ১৯টি দেশের নাগরিকদের উপর ভিসা সীমাবদ্ধতা আরোপ করা হয়েছে। এর ফলে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের মধ্যে উদ্বেগ আরও বেড়েছে।

তবুও যুক্তরাষ্ট্র এখনও আকর্ষণীয়

২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে যুক্তরাষ্ট্রে ১.১ মিলিয়নেরও বেশি আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করেছেন, যা মোট শিক্ষার্থী সংখ্যার ৫.৯%—ইতিহাসে সর্বোচ্চ। এর মধ্যে ভারত ও চীনের শিক্ষার্থী মিলে ৫৪%, আর ভিয়েতনাম থেকে এসেছেন ২২,০৬৬ জন, যা ষষ্ঠ সর্বোচ্চ।

 

বর্তমান ভিসা পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনার পরিকল্পনা আরও পরিকল্পিত, সতর্ক ও তথ্যভিত্তিক হওয়া প্রয়োজন। যতটা সম্ভব আগাম প্রস্তুতি নেওয়া ও সরকারের নিয়ম মেনে চলাই হতে পারে ভবিষ্যতের চাবিকাঠি।

আঁখি

×